ভয়ংকর হয়ে উঠছে কিশোরদের ‘গ্যাং কালচার’

ঢাকাসহ সারা দেশে দিন দিন ভয়ংকর হয়ে উঠছে কিশোরদের ‘গ্যাং কালচার’। স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরোনোর আগেই কিশোরদের একটা অংশের বেপরোয়া আচরণ এখন পাড়া-মহল্লায় আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরে আদনান কবির হত্যার পর ‘গ্যাং কালচারের’ বিষয়টি সামনে আসে।

‘নাইন স্টার’ ও ‘ডিসকো বয়েজ’ নামে সক্রিয় এসব কিশোর শুরুতে ‘পার্টি’ করা, হর্ন বাজিয়ে প্রচণ্ড গতিতে মোটরসাইকেল চালানো ও রাস্তায় মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার কাজে যুক্ত ছিল। এরপর এসব গ্রুপের ব্যাপ্তি বেড়েছে। জানা গেছে, গ্যাং কালচারে সম্পৃক্ত কিশোরদের প্রতিটি গ্রুপে ১০ থেকে ২০ জন করে সদস্য থাকে।

গত দু’বছরে ঢাকা ও চট্টগ্রামে বারবার নানা ঘটনার জন্ম দিয়েছে বেশ কয়েকটি কিশোর গ্যাং। এ বছর বরগুনায় রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের পর আলোচনায় এসেছে বন্ড-০০৭ নামের একটি গ্যাং। সম্প্রতি মোহাম্মদপুরে খুন হওয়া কিশোরটি একটি গ্যাংয়ের সদস্য ছিল, যাকে অন্য একটি গ্যাংয়ের সদস্যরা হত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সম্প্রতি বখাটে বা গ্যাং কালচার মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে দিনভর বখাটেরা আড্ডায় মেতে ওঠে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও ইদানীং বিভিন্ন সড়কের অলিগলিতে বখাটে ও কিশোর গ্যাংস্টারের উপদ্রব বেড়েছে। এ কারণে প্রতিনিয়ত যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন ছাত্রীরা।

যৌন হয়রানির মুখে অনেক ছাত্রী পড়াশোনা ছাড়তেও বাধ্য হচ্ছেন। শুধু যৌন হয়রানি নয়, কিশোর গ্যাংস্টাররা অপরাধ কর্মকাণ্ডে বেপরোয়া হয়ে উঠায় অনিরাপদ হয়ে উঠেছে জনজীবন।

কৌতূহল থেকে এ পথে পা বাড়ানো শুরু; এরপর হিরোইজমের নামে হাতে চাপাতি, রামদা, এমন কী আগ্নেয়াস্ত্রও তুলে নেয় কিশোররা। জোট বেঁধে হামলা চালায় প্রতিপক্ষের ওপর। পাড়া-মহল্লায় বখাটে তকমাও জুটে যায়। দ্রুতই তাদের ধরাশায়ী করে মাদকের বিষাক্ত ছোবল। অবার কখনও রাজনীতির ঘুঁটি খেলার শিকার হয়ে যায় কৈশোরের অপার সম্ভাবনা।

কিশোর গ্যাং কালচারের প্রসারে দেশি-বিদেশি সিনেমার প্রভাবও আছে। সম্প্রতি বেশকিছু হত্যাকাণ্ড গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠে আসার পর কিশোর গ্যাং নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

পুলিশের ক্রাইম এনালাইসিস বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকাতেই গত কয়েক বছরে কিশোর গ্যাং গ্রুপের সন্ধান মিলেছে অন্তত ৫০টি। এখন নতুন করে বিভিন্ন জেলা শহরের কিশোররাও জড়িয়ে পড়ছে এলাকাভিত্তিক নানারকম অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে।

শহরের অলিগলিতে চায়ের দোকান বা বিশেষ কিছু স্থানে অবস্থান নেয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। তাদের দ্বারা প্রতিনিয়ত সংঘটিত হচ্ছে নানা অপরাধ। বিশেষ করে মোটরসাইকেল চুরি, ইয়াবা সেবন, ছিনতাই, মদ বিক্রি ও সেবন, মানুষকে জিম্মি রেখে মুক্তিপণ আদায়সহ ভয়ংকর সব অপরাধ করে বেড়াচ্ছে কিশোর গ্যাং বা সন্ত্রাসী গ্রুপ।

অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, গ্যাং কালচারে অভ্যস্ত হয়ে ওঠা কিশোররা সমাজের কারও না কারও মদদপুষ্ট। তাদের আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি পুনর্বাসনেও জোর দিচ্ছেন তারা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতে, সামাজিক সচেতনতা ও প্রতিরোধের পাশাপাশি কিশোরদের নিয়ন্ত্রণ বা সংশোধনের জন্য পরিবারের অভিভাবকদের সচেতন ও সক্রিয় হওয়া জরুরি।

এসএইচ-০৬/৩০/১৯ (অনলাইন ডেস্ক, তথ্য সূত্র : আমাদের সময়)