নেতাদের পদত্যাগ নিয়ে বিএনপি চিন্তায়

দেশে বিএনপির সিনিয়র দু’জন নেতার পদত্যাগের ঘটনার পর সতর্ক অবস্থান নিয়েছে দলটির নেতৃত্ব।

বিএনপি নেতাদের অনেকেই বলছেন, তারা চেষ্টা করছেন যেন দলের আর কেউ যেনো পদত্যাগ না করেন।

সম্প্রতি ‘দলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে’ পদত্যাগ করেন সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী মোরশেদ খান এবং অবসরপ্রাপ্ত লে: জেনারেল মাহবুবুর রহমান। সিলেটের মেয়র আরিফুল হকসহ সেখানকার কয়েকজন নেতাও পদত্যাগের হুমকি দিয়েছেন।

এসব পদত্যাগের কারণ কি হতে পারে – এ নিয়ে বিএনপিতে এখন নানা আলোচনা চলছে।

তবে দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বলছেন, বিভিন্ন কারণের মধ্যে একটা বড় কারণ হিসেবে তারা দেখছেন ‘সরকারের চাপ’কে।

মোরশেদ খান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান পদে থাকলেও তিনি রাজনীতিতেই নিষ্ক্রিয় ছিলেন দীর্ঘদিন ধরে।

সর্বশেষ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৮ আসন থেকে মনোনয়ন না পাওয়ায় দলের নেতৃত্বের প্রতি তার ক্ষোভও ছিল। এসব বিভিন্ন বিষয় এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের আলোচনায় আসছে।

দলটির নেতাদের অনেকে মনে করছেন, আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকার এক দশকেরও বেশি সময়ে খান তার ব্যবসা নিয়ে সমস্যায় রয়েছেন এবং এটিই তার বিএনপি থেকে সরে দাঁড়ানোর অন্যতম কারণ হতে পারে।

তবে মোর্শেদ খান তার বিএনপি ছাড়ার ক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে দলটির নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

তিনি বলছিলেন, “আমি দেখছি, বিএনপির এখানকার রাজনীতিতে আমার করণীয় কিছু নেই। কার কি করণীয় সেটাও জানি না। একটা সাসপেন্স এর ওপরে তো বাংলাদেশে ১৬ কোটি মানুষকে ঝুলিয়ে রাখা যায়না। খালেদা জিয়াবিহীন বিএনপির কি আছে আর না আছে, সেটা আমার বলার অপেক্ষা রাখে না। সেজন্য আমি এই দলের অংশ থাকতে পারি না।”

বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত লে: জেনারেল মাহবুবুর রহমানও দীর্ঘ সময় ধরে রাজনীতিতে সেভাবে সক্রিয় ছিলেন না।

বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে তার দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। এ বিষয়টি একটি কারণ হতে পারে বলে বিএনপি নেতাদের অনেকে মনে করেন। তবে জেনারেল রহমান তার পদত্যাগের ক্ষেত্রে তারেক রহমানের চিন্তাভাবনা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন।

এছাড়া সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এবং বিএনপি নেতা আরিফুল হকসহ সেখানকার কয়েকজন নেতা দলের পদ থেকে পদত্যাগের হুমকি দিয়েছেন। আরিফুল হকও প্রশ্ন তুলেছেন সাংগঠনিক বিভিন্ন বিষয়ে।

“বিএনপির সব সংগঠনের সিলেটের সব কমিটি করা হচ্ছে ব্যক্তি বিশেষের পছন্দে । আমরা এনিয়েই আপত্তি তুলেছি।”

যদিও সিনিয়র দু’জন নেতার পদত্যাগ এবং কয়েকজনের পদত্যাগের হুমকি বিএনপিতে কোন প্রভাব ফেলেনি বলে দলটির নেতাদের অনেকে বলছেন।

কিন্তু পদত্যাগকারী এবং পদত্যাগের হুমকি দেয়া নেতাদের ঠেকানোর জন্য তাদের সাথে বিএনপির নেতৃত্ব আলোচনা চালাচ্ছেন।

আর কেউ যাতে এমন অবস্থান না নেয় – সে ব্যাপারেও দলটির নেতৃত্ব সতর্ক হয়েছে বলে জানা গেছে।

দলটির নেতারা মনে করেন, তাদের দলের জন্য সময় এখন কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে। ফলে এমুহুর্তে কারও পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হচ্ছে না এবং তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কোন ব্যবস্থাও নেয়া হবে না।

অন্যদিকে বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে কারও পদত্যাগের বিষয়টিই স্বীকার করছে না।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তিনি কারও পদত্যাগপত্র পাননি। একইসাথে তিনি একটা পরিস্থিতি তৈরির জন্য সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন।

তিনি বলছিলেন, “সরকারতো প্রথম থেকেই বিএনপিকে নির্মূল করার জন্য চেষ্টা করছে।সেজন্য তারা বহু মামলা মোকদ্দমা দিয়েছে। ভয়ঙ্কর একটা নির্বাচন করার পরও যখন দেখছে যে, বিএনপিকে কিছু করা যাচ্ছে না। তখন তারা এবং তাদের এজেন্সিগুলো বিভিন্ন প্রচার চালাচ্ছে।আমি মনে করি, এটা তার একটা অংশ হতে পারে।”

আলমগীর আরও বলেছেন, “আমাদের চেয়ারপার্সন কারাগারে যাওয়ার পর থেকে আমাদের পার্টি শক্তভাবে ঐক্যবদ্ধ আছে।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলছিলেন, একদিকে দলে হতাশা এবং অন্যদিকে সরকারের চাপের কারণেই বিএনপিতে পদত্যাগের একটা বিষয় এসেছে বলে তিনি মনে করেন।

“বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে যেখানে লেনদেনের ভিত্তিতে রাজনীতি হয়। সেখানে একটা দল দীর্ঘ সময় ক্ষমতার বাইরে থাকলে সে দলটাকে ধরে রাখা খুব কঠিন। আর দ্বিতীয়ত অবশ্য সরকারের চাপ আছে।”

তবে আওয়ামী লীগের একাধিক সিনিয়র নেতা বিএনপি নেতাদের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, বিএনপির অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে দলটির অনেকে পদত্যাগ করছেন।

এসএইচ-০৪/১৩/১৯ (কাদির কল্লোল, বিবিসি)