ঐক্যফ্রন্টে ভাংনের সুর

ঘরে-বাইরে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন৷ তাঁর নিজের দল গণফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টুসহ কয়েকজন দল ছেড়ে গেছেন৷

বিএনপি নেতাদের অনেকেও তাঁকে আর মানতে চাইছেন না৷ এই পরিস্থিতিতে দারুণ বেকায়দায় পড়েছেন ড. কামাল হোসেন৷ ভাঙা-গড়ার চাপে আছে বিএনপিসহ শরিক দলগুলোও৷ সব মিলিয়ে ঐক্যফ্রন্টেও বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি হয়েছে৷

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘যাঁর সাথে আমার আদর্শিক বিপরীত, যিনি বেগম খালেদা জিয়াকে ওন করেন না, যিনি বিএনপির রাজনীতি ওন করেন না, যিনি জিয়াউর রহমানকে ওন করেন না৷ তাঁকে সামনে রেখে পথ চললে সেই পথ অতিক্রম করা সম্ভব? এটা আমি মনে করি না৷’’

পরে সঙ্গে আলাপকালে এই নেতা বলেন, ‘‘উনাকে বিএনপি করতে হবে তা নয়৷ কিন্তু উনি কোথাও বক্তব্য দিলে খালেদা জিয়ার মুক্তির কথা মনে করিয়ে দিতে হয়৷ তারপরও কখনও বলেন, কখনও বলেন না৷ আসলে উনি তো খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য ফ্রন্ট করেননি, উনি এজেন্ডা নিয়ে এসেছিলেন বিএনপিকে নির্বাচনে নিতে৷ সেটাতে উনি সফল হয়েছেন৷ ফলে এখন বিএনপির অধিকাংশ নেতা-কর্মী তাঁর সঙ্গে একসাথে পথ চলতে চান না৷’’

অবশ্য ঐক্যফ্রন্টের আরেক শীর্ষ নেতা নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ‘‘জোটে কখনও এমন পরিস্থিতি হয়৷ তার অর্থ এই নয় যে, জোট ভেঙে গেছে৷ আসলে ড. কামাল হোসেন, আ স ম রব নিজেদের দল নিয়েই সংকটে পড়েছেন৷ এখন যদি বিএনপি নেতারা এসব কথা বলেন, তাহলে তো মুশকিল৷

আসলে ফ্রন্টকে ঐক্যবদ্ধ করতে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি৷ সফল যে হয়েছি, তা বলব না, তবে চেষ্টা চলছে৷ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোতে ভাঙাগড়া হয় সরকারের চাপে বা লোভে পড়ে৷ আবার শীর্ষ নেতাদের পক্ষ থেকে অবমূল্যায়নসহ নানা কারণেও দলগুলো ভাঙে৷ ঐক্যফ্রন্টের যেসব দল ভাঙছে সেগুলো এসব কারণে হতে পারে বলে আমার মনে হয়৷’’

ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলগুলোতে হঠাৎ করেই যেন ভাঙন শুরু হয়েছে৷ সম্প্রতি সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোরশেদ খান আর লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে রাজনীতি থেকে অবসর নেন৷ প্রবীণ দুই নেতার পদত্যাগে বেশ খানিকটা বেকায়দায় পড়েছে বিএনপি৷

অন্যদিকে ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক আ স ম রবের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন দল থেকে বেরিয়ে পৃথক কনভেনশন ডেকেছেন ১১ জানুয়ারি৷ তিনি সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধ, প্রগতিশীলতা ও জাতীয় স্বার্থের পক্ষে তাদের অবস্থান থাকবে৷

সম্প্রতি ২০ দল ছেড়ে গেছে আন্দালিব রহমান পার্থের দল বিজেপি৷

অন্যদিকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক এলডিপি থেকে বেরিয়ে চার নেতা যোগ দিয়েছেন বিএনপিতে৷ জাতীয় মুক্তিমঞ্চ ইস্যুতে মতবিরোধকে কেন্দ্র করে তাঁরা এলডিপি ছাড়েন৷ তাঁরা হলেন, জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ ও সাবেক এমপি আবদুল করিম আব্বাসী, সাবেক এমপি আবদুল্লাহ, আরেক সাবেক এমপি আবদুল গণি ও দলটির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম৷ খুব সহসাই তাঁরা বিএনপিতে যোগ দিচ্ছেন৷ অবশ্য তাঁরা একসময় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেই ছিলেন৷

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘‘রাজনীতি করতে গেলে এই ধরনের সংকটে পড়তে হবে- সেটাই স্বাভাবিক৷ কিন্তু দেখেন গণতন্ত্রের ইস্যুতে, বাকস্বাধীনতার ইস্যুতে সবাই কিন্তু এক পথেই হাঁটছে৷ আমাদের সঙ্গে জোটে নেই বাম দলগুলো৷ কিন্তু তারাও তো আন্দোলন করছে৷ ইস্যু কিন্তু এক৷ ফলে এসব সংকটের মধ্য দিয়েই এক সময় আসল পথ বেরিয়ে আসছে৷ তখন কি কেউ ভেবেছিলেন এরশাদ পদত্যাগ করতে বাধ্য হবেন? কিন্তু তাঁকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল৷ ফলে কাকে কখন সরে যেতে হবে কেউ বলতে পারে না৷ জনগণের বিজয় একদিন হবেই৷’’

এসএইচ-০৫/১৬/১৯ (সমীর কুমার দে, ডয়চে ভেলে)