হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ অজর্ন ‘বিজয় দিবস’

বাঙালির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ অজর্ন ‘বিজয় দিবস’ আজ। দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধ শেষে, ১৯৭১ সালের এই দিনে ঢাকার রেসকোসর্ ময়দানে (বতর্মান সোহরাওয়াদীর্ উদ্যান) পাক হানাদার বাহিনীর আত্মসমপের্ণর মধ্যে দিয়ে চুড়ান্ত বিজয়ের মাধ্যমে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের। বিজয়ের অনুভ‚তি সবসময়ই আনন্দের। তবে একই সঙ্গে দিনটি বেদনারও। স্বাধীন বাঙালি জাতি আজ মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ৪৮তম বাষির্কীতে উপনীত। এই দিনে আমাদের শপথ নিতে হবে শহীদদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের। কোন স্বপ্ন ও চেতনা ধারণ করে গোটা দেশের আপামর জনগণ জেগে উঠেছিল, পাকিস্তানি বাহিনীর শুরু করা গণহত্যা রুখে দাঁড়িয়ে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল, লাখো মানুষ নিঃশেষে জীবনদান করেছিল। সেই চেতনাকে উপলব্ধি করতে হবে, লালন করতে হবে এবং পরবতীর্ প্রজন্মে সঞ্চারিত করতে হবে। আনুষ্ঠানিকতার ঊর্ধ্বে বিজয় দিবস পালনের সাথর্কতাই এখানে। আজ এই ঐতিহাসিক মুহুর্তে আমরা পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পবিত্র স্মৃতি। স্মরণ করি বীরাঙ্গনাদের, যারা চরম মূল্য দিতে বাধ্য হয়েছেন। আমরা স্মরণ করি স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। স্মরণ করি শহীদ চার জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, মনসুর আলী, কামারুজ্জামানসহ মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী প্রবাসী সরকারের নেতাদের।

যে হিংস্রতা ও ববর্রতার সঙ্গে দখলদার বাহিনী ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পযর্ন্ত অল্প সময়ে ব্যাপক গণহত্যা, নারী ধষর্ণ, অগ্নিসংযোগ, ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে এবং যে সাহস ও বীরত্বের সঙ্গে দেশের আপামর মানুষ প্রতিরোধ ও লড়াই গড়ে তুলেছে, তার সমকক্ষ নজির ইতিহাসে বিরল। দেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হলেও আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির জটিল আবতের্ পড়ে পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা সম্ভব হয়নি। এটা আমাদের একটি মমের্বদনা। ইতিহাসের এই দায় পরিশোধে ভবিষ্যতে হয়তো উদ্যোগ গৃহীত হবে। পাকিস্তান সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে চুক্তিতে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েও সে দায় এড়িয়ে চলছে। আবার দেশবিরোধী নানা অপশক্তির কারণে এখনো নানাভাবে রক্তাক্ত হচ্ছে বাংলার জনপদ। একটি স্বাধীন দেশ এ অবস্থায় চলতে পারে না বিধায় সব ধরনের অপশক্তির মূলোৎপাটনে সরকারকেই ব্যবস্থা নিতে হবে।

ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছিল। মানুষের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের শপথও ছিল তার মধ্যে। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা এসব ক্ষেত্রে বলতে গেলে এখনো বেশ পিছিয়ে রয়েছি। আবার একথাও ঠিক যে, বাংলাদেশ অনেক পথ পাড়ি দিয়ে উন্নয়নের মহাসড়কে হাঁটছে। মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত হওয়ার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশ এতদিন যে অমিত সম্ভাবনা, আশা ও স্বপ্ন লালন করেছে, বতর্মান সরকারের হাত ধরে দেশটির অগ্রগতি ও উত্তরণ সত্যিই বিস্ময়কর। তবে এখনো আমাদের পুরোপুরি অথৈর্নতিক মুক্তি আসেনি। এখন অথৈর্নতিক মুক্তির লক্ষ্যেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, স্বাধীনতা আমাদের অনেক কিছু দিয়েছে। স্বাধীনভাবে বিকাশের সুযোগ পাওয়ার জন্যই আজ অথৈর্নতিক উন্নয়নের চেষ্টা, পোশাকশিল্প বা ক্রিকেট খেলা বা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কাযর্ক্রম বা অভিবাসী কমর্শক্তি ইত্যাদি একাধিক ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশ একটি নাম। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূণর্তা, শিশুমৃত্যু কমানো ও শিশুশিক্ষা বাড়ানো, প্রতিকুল অবস্থায়ও অথৈর্নতিক প্রবৃদ্ধি এবং নিম্ন থেকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ হওয়া গৌরবের বিষয়। পদ্মা সেতু, কণর্ফুলী টানেল, গভীর সমুদ্রবন্দর, নগরে মেট্রো রেল ও পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ অনেক বড় প্রকল্প চলমান। বলা যায়, দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তা অব্যাহত রাখতে হবে।

মহানবিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

এসএইচ-০১/১৬/১৯ (অনলাইন ডেস্ক)