করোনাভাইরাসে পোশাক খাত নড়বড়ে অবস্থা

করোনাভাইরাসের কারণে দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। চীনের পর ইউরোপ-আমেরিকাতেও করোনাভাইরাস ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ায় বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্য হুমকির মুখে পড়েছে। আর রফতানি বাণিজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে তৈরি পোশাক খাত। এরই মধ্যে বিদেশি ক্রেতারা পোশাক কারখানার ১০ কোটি মার্কিন ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল কিংবা স্থগিত করেছে। দেশীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৮৫০ কোটি টাকা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, তৈরি পোশাক খাতের বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপ ও আমেরিকা। সেখানে করোনাভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় সেখানকার ক্রেতারা ক্রয়াদেশ বাতিল কিংবা স্থগিত করতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় ইউরোপ-আমেরিকায় করোনাভাইরাসের প্রকোপ দ্রুত সময়ের মধ্যে নিয়ন্ত্রণে না এলে ক্রয়াদেশ বাতিলের পরিমাণ বাড়বে।

তারা বলছেন, একদিকে ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হচ্ছে, অন্যদিকে নতুন করে ক্রয়াদেশও আসছে না। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে রফতানি বাণিজ্যের অন্যতম এই খাতটি। এই অবস্থা আরও কিছুদিন চলতে থাকলে অনেক কারখানা বন্ধ করে দিতে হবে। পাশাপাশি শ্রমিকদের বেতন দেয়াও সম্ভব হবে না। তা হলে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।

এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি ও বিজিএমইএ‘র সাবেক সভাপতি  সিদ্দিকুর রহমান বলেন, করোনাভাইরাস বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ভাইরাসের কারণে রফতানি খাত সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে পড়েছে। আর রফতানি খাতের মধ্যেও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে তৈরি পোশাক খাত।

তিনি বলেন, আমাদের তৈরি পোশাক খাতের সবচেয়ে বড় বাজার হলো ইউরোপ ও আমেরিকা। সেখানকার দেশগুলোই ক্রয়াদেশ বাতিল করছে, স্থগিত করছে। কাপড় যে অবস্থায় আছে, ক্রেতারা সেই অবস্থাতেই রাখতে বলছে।

সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ইউরোপ-আমেরিকার বায়াররাই বা কী করবে, তারা তো দোকানপাটও খুলছে না। করোনাভাইরাস যেভাবে ছড়াচ্ছে, আমরা আতঙ্কিত। এরকম পরিস্থিতিতে পড়ব, কল্পনাও করিনি। এ অবস্থায় আমাদের কী করা উচিত, সেটিও বুঝতে পারছি না। হয়তো আরও সপ্তাহখানেক গেলে পরিস্থিতি বোঝা যাবে।

বিজিএমইএ’র সাবেক এই সভাপতি বলেন, আমরা এ কারণে আতঙ্কিত যে বাংলাদেশের লাখ লাখ শ্রমিক ভাইদের কী হবে। কারখানার উৎপাদন না থাকলে শ্রমিকদের তো আর বসিয়ে বসিয়ে বেতন দেওয়া সম্ভব হবে না। সেই সক্ষমতাও আমাদের নেই। এই ক্ষেত্রে তৈরি পোশাক খাতের সামনে ভীষণ চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান ও ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আসিফ ইব্রাহিমও বলছেন, অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত সব খাতই করোনাভাইরাসের কারণে টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে দেশের শিল্প-বাণিজ্য, আমদানি-রফতানি, শেয়ারবাজার— সবই বিপর্যয়ের সম্মুখিন। প্রতিদিনই ব্যবসা-বাণিজ্যে ধ্বস নামছে। কাঁচামালের অভাবে কোনো কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে, কোনো কারখানায় উৎপাদন কমে যাচ্ছে। আবার কোনো কারখানা উৎপাদিত পণ্যর ক্রয়াদেশ বিদেশি ক্রেতা বাতিল বা স্থগিত করায় তারা নতুন করে উৎপাদনেও যেতে পারছে না। সব মিলিয়ে আমরা আতঙ্কিত।

বিজিএমই‘র সিনিয়র সহসভাপতি ফয়সাল মাহমুদও জানান আতঙ্কের কথা। তিনি বলেন, আমরা অত্যন্ত খারাপ অবস্থার মধ্যে রয়েছি। আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি, এরই মধ্যে ১০ কোটি মার্কিন ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল বা স্থগিত হয়েছে। তবে সব তথ্য এখনো আমাদের কাছে নেই। আমরা বিভিন্ন কারখানার কাছে তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছি। সব তথ্য পেলে আমরা বলতে পারব প্রকৃতপক্ষে কী পরিমাণ অর্ডার বাতিল কিংবা স্থগিত হয়েছে।

বিজিএমইএ গত ১৮ মার্চ পর্যন্ত অনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে, করোনা পরিস্থিতির কারণে ২০টি কারখানার দুই কোটি ৭২ লাখ ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হয়েছে। বুধবার তা আরও বেড়ে যায়। ওই দিন শেষে ৬৯টি কারখানার ৯ কোটি ৩০ লাখ ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল অথবা স্থগিতের তথ্য জানিয়েছে বিজিএমইএ।

এছাড়া নিটওয়্যার কোম্পানিগুলোর মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ সূত্রে জানা গেছে, বুধবার পর্যন্ত তাদের ১৫ কারখানার ৭৩ লাখ ৮৭ হাজার ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে। এই সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে বলেও জানিয়েছে বিকেএমইএ।

এসএইচ-০৪/২০/২০ (অনলাইন ডেস্ক, তথ্য সূত্র : সারাবাংলা)