করোনাই পুষ্টি যুক্ত আমিষ খাবারের বিকল্প নেই

মানুষ কীভাবে সুস্থ থাকতে পারে এবং কোন উপায়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে, সেটি নিয়ে নানামুখী গবেষণা হয়েছে বিশ্বজুড়ে। চিকিৎসক এবং পুষ্টিবিজ্ঞানীরা বলছেন, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী না হলে অল্প অসুস্থতাতেও মানুষ খুব সহজে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং রোগের আক্রমণও জোরালো হয়। এক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাস এবং জীবন-যাপনের পদ্ধতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করছেন চিকিৎসকরা। আমাদের শরীরের গঠন ও পুষ্টি সাধনের জন্য প্রোটিন তথা আমিষের প্রয়োজন সবথেকে বেশি ।

এই আমিষ দু’ধরণের হতে পারে-

১। উদ্ভিজ্জ আমিষ

২। প্রাণীজ আমিষ

মসুর ডালে উদ্ভিজ্জ আমিষ বেশি পরিমানে থাকে । তাই একে গরিবের মাংস বলা হয়ে থাকে । কিন্তু শরীর গঠনের কাজে উদ্ভিজ্জ আমিষ এর ভূমিকা গৌণ!

অন্য দিকে প্রাণীজ আমিষের প্রধান উৎস হলো মাছ, মাংস ও ডিম্ । শরীর এর গঠন ও পুষ্টির জন্য এবং দেহের ক্ষয় পূরণের জন্য আমিষের প্রয়োজন। তাই প্রত্যহ আমাদের আমিষ গ্রহণ করতে হয়।

এবার আসি প্রতিদিন মাছ, মাংস, ডিম খাওয়ার বিষয়ে!

মাছ

মাছে-ভাতে যে আমরা বাঙালি, তা ভুলে গেলে চলবে? মাছে রয়েছে প্রোটিন আর সেই সাথে ক্যান্সার সোহো বহু রোগ প্রতিরোধী ওমেগা-৩ নামক উপাদান।

মাংস

একে প্রথম শ্রেনের আমিষ বলে । আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ তয়রিতে এবং মেধা বিকাশে এর ভুমিকা বলে শেষ কারা যাবে না। মুরগির মাংস বিশেষ করে ব্রয়লেরের মাংস, সলপ মুল্যে আর কোন আমিষ পাওয়া সম্ভব না।

ডিম

ডিম ও দুধের আসলে কোনো বিকল্প নাই! দুধ প্রত্যহ খাওয়া ভালো। আর ডিম্ ও ! ডিম, বিশেষত ডিমের কুসুমে প্রচুর পরিমাণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এমন পরিপোষক উপাদান রয়েছে। এছাড়াও ডিমে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ডি রয়েছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার

দুগ্ধজাত খাবারগুলো বিজ্ঞানের ভাষায় প্রোবায়েটিকস হিসেবে পরিচিত। যেমন- দই, ঘোল, ছানা ইত্যাদি। মানুষের পাকস্থলিতে যে আবরণ আছে, সেটার ভেতরে বেশ কিছু উপকারী জীবাণু কার্যকরী হয়। বাংলাদেশের একজন চিকিৎসক হাসান শাহরিয়ার কল্লোল বলেন, পাকস্থলীতে যদি উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা কমে যায় তখন সেখানে ক্যান্সার বাসা বাঁধতে পারে।

দুগ্ধজাত খাবারগুলোর পাকস্থলীতে উপকারী জীবাণুকে বাঁচিয়ে রাখে। ভিটামিন ডি এর জন্য দিনের কিছুটা সময় শরীরে রোদ লাগাতে হবে। এটা খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনাচরণের সাথে সম্পৃক্ত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক নাজমা শাহীন বলেন, যার শরীরের গঠন ভালো এবং সেখানে কোন ঘাটতি থাকবে না, তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হবে।

তিনি বলেন, যেমন শিশু জন্মের পর থেকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ালে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
এবার আসি করোনার কথায় ।

জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি থেকে করোনা ভাইরাস সম্পর্কিত একটা পোস্টের বাংলা অনুবাদ উপস্থাপন করলাম। এটা থেকে করোনার বৈশিষ্ট্য, গতি-প্রকৃতি ও প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারনা পাওয়া যায়।

* ভাইরাস জীবন্ত প্রাণী নয়। এটি প্রোটিনের অণু (ডিএনএ) যা লিপিডের (চর্বি) মোড়কে মোড়ানো।এটা আমাদের নাক-চোখ-মুখের মাধ্যমে শরীরে ঢুকে গেলে নিজের জেনেটিক কোড বদলে ফেলে শক্তিশালী ও আত্রমণাত্মক হয়ে ওঠে।

* ভাইরাস যেহেতু কেবলই একটি প্রোটিন অণু এবং জীবন্ত নয় তাই এটাকে মেরেও ফেলা যায় না। তবে সে নিজে থেকে ধ্বংস হতে পারে। এটা কতক্ষণে ধ্বংস বা ক্ষয় হবে তা নির্ভর করে এর থাকার স্থানটির তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ও স্থানটি কী উপাদানে তৈরি, তার উপরে।

* করোনা ভাইরাস ভঙ্গুর কারণ সুরক্ষার জন্য তা কেবল একটি চর্বির স্তর দিয়ে মোড়ানো। এ কারণেই সাবান ও ডিটারজেন্ট ভাইরাসটি থেকে মুক্ত হবার সহজ উপায়। সাবান ও ডিটারজেন্ট মূলত যে কোনো স্থানের তেল বা চর্বি সরাতে পারে। তেল বা চর্বি সরানোর উদ্দেশ্যে আমাদের অন্তত টানা ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার করতে হয় যাতে করে প্রচুর ফেনা তৈরি হতে পারে। এর ফলে ভাইরাসের উপরের চর্বির স্তর ভেঙে গিয়ে পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে যায়।

* গরম তাপমাত্রা চর্বি গলাতে কার্যকর। এজন্যে হাত বা কাপড় ধোয়ার ক্ষেত্রে অন্তত ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার পানি ব্যবহার করা উচিত। এ ছাড়া, সাবান ব্যবহারের ক্ষেত্রে গরম পানি ঠান্ডা পানির চেয়ে বেশি ফেনা তৈরি করতে পারে বলে ভাইরাসটিকে আরো দ্রুত অকার্যকর করতে পারে।

* অ্যালকোহল কিংবা অন্তত ৬৫% অ্যালকোহলের মিশ্রণ যে কোনো ধরনের তেল অথবা চর্বি ভাঙার জন্য উপযুক্ত। ভাইরাসের শরীরের বাইরের চর্বির স্তর ভাঙতে অ্যালকোহলের মিশ্রণ অত্যন্ত কার্যকর একটি উপায়।

* এক ভাগ ব্লিচ ও পাঁচ ভাগ পানির মিশ্রণ সরাসরি প্রয়োগে প্রোটিন ভেঙে যায়। তাই এই মিশ্রণ ভাইরাসটিকে ভিতর পর্যন্ত গলিয়ে ধ্বংস করতে পারে।

* সাবান, অ্যালকোহল এবং ক্লোরিন যদি অক্সিজেন চালনা করা পানির (অক্সিজেনেটেড ওয়াটার) সঙ্গে ব্যবহার করা হয় তবে তা অপেক্ষকৃত দীর্ঘ সময় ধরে ভাইরাসের কার্যক্ষমতা ঠেকাতে সাহায্য করে। এর কারণ অক্সিজেন চালনা করা পানিতে থাকা পারঅক্সাইড ভাইরাসের প্রোটিনকে গলিয়ে ফেলতে পারে। এটি বিশুদ্ধ হলে ব্যবহার করা যেতে পারে তবে ত্বকের জন্য সুবিধাজনক নয়।

* ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসে যা ব্যবহার করা হয় তা দিয়ে ভাইরাস থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব না। ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার মতো জীবন্ত প্রাণী নয়। যা জীবন্ত নয় তাকে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করে হত্যা করার প্রশ্ন নেই। তবে আগে যা যা উপায় বলা হলো সেসব অনুসরণ করে ভাইরাসকে ভেঙে ধ্বংস করা সম্ভব।

* ব্যবহৃত বা অব্যবহৃত পোশাক, কাপড় বা চাদর ঝাড়া দেয়া যাবে না। কাপড় ঝাড়লে তা থেকে নিসৃত ভাইরাস কোথাও পড়লে সেখানেই আটকে থাকে। কাপড় বা সমধর্মী জিনিসে ৩ ঘণ্টা, তামা বা কাঠে ৪ ঘণ্টা (যেহেতু তামা নিজেই জীবাণু ধ্বংস করতে পারে এবং কাঠ ক্রমাগত আর্দ্রতা হারাতে থাকে), হার্ডবোর্ডের উপরে ২৪ ঘণ্টা, ধাতব জিনিসে ৪২ ঘণ্টা এবং প্লাস্টিকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত ভাইরাসটি টিকে থাকতে পারে। ভাইরাস আছে এমন কিছুকে ঝাড়া দিলে বা তার উপরে পালকের ডাস্টার ব্যবহার করলে ভাইরাসের অণুগুলো বাতাসে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত ভাসতে পারে এবং মানুষের নাকে ঢুকে যেতে পারে।

* ভাইরাস অণুগুলো ঠান্ডা আবহাওয়ায়, এমনকি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাড়ি বা গাড়িতে অত্যন্ত ভালোভাবে টিকে থাকতে পারে। বেশি কার্যকর থাকার জন্য ভাইরাসটির আর্দ্রতা এবং অন্ধকারের উপস্থিতির প্রয়োজন পড়ে। এ কারণে একদিকে শুকনো বা কম আর্দ্রতাবিশিষ্ট আবহাওয়া, অন্যদিকে, গরম এবং উজ্জ্বল পরিবেশে ভাইরাসটি দ্রুত ধ্বংস হয়।

* ইউভি লাইট(অতি বেগুনী রশ্মি) ভাইরাসটিকে তার প্রোটিন ভেঙে যে কোনো কিছুর উপর থেকে ধ্বংস করতে পারে। এভাবে একটি মাস্ককে ব্যবহারের পর ভাইরাসমুক্ত করে আবারো ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু ইউভি লাইট যেহেতু ত্বকের কোলাজেন ভেঙে দেয় তাই মুখে বলিরেখা থেকে শুরু করে ত্বকের ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে।

* ভাইরাসটি সুস্থ এবং স্বাভাবিক ত্বকের ভিতরে সরাসরি প্রবেশ করতে পারে না।

* করোনা ভাইরাস থেকে মুক্ত হতে ভিনেগার কার্যকর নয় কারণ ভিনেগার প্রোটিন ধ্বংস করতে পারে না।

* স্প্রিট বা ভদকা ভাইরাসটি ধ্বংস করতে করতে কার্যকর নয়। ভদকায় অ্যালকোহলের সর্বোচ্চ মাত্রা হতে পারে ৪০% কিন্তু ভাইরাসটি ধ্বংস হতে কমপক্ষে ৬৫% অ্যালকোহল দরকার।

* করোনা ভাইরাসকে ধ্বংস করে, অ্যালকোহলসমৃদ্ধ এমন কিছুর কথা ভাবলে একমাত্র বলা যেতে পারে কোনো কোনো লিসটারিনের (মাউথ ওয়াশ) কথা যাতে ৬৫% অ্যালকোহল থাকে। তবে বেশিরভাগ লিসটারিনে থাকে ২০% থেকে ৩০% অ্যালকোহল যা ভাইরাসটি ধ্বংসে কার্যকর নয়।

* বদ্ধ স্থানে ভাইরাসটির প্রকোপ বেশি হবে। উলটোদিকে উন্মুক্ত এবং বাতাস চলাচল করে এমন স্থানে ভাইরাসের উপস্থিতি কম হবে।

* এটা অবশ্য অনেকবার বলা হয়েছে, তবু আরেকবার বললে ক্ষতি নেই যে, নাক, খাবার, দরজার লক, যে কোনো সুইচ, রিমোট কন্ট্রোলার, সেল ফোন, ঘড়ি, কম্পিউটার, টেবিল ও টেলিভিশন জাতীয় জিনিস ধরার আগে ও পরে হাত ধোয়া জরুরি। ওয়াশরুম ব্যবহার করলে হাত তো ধুতে হবেই।

* বারে বারে ধোয়া হাত ভালোমতো শুকাতেও হবে। কারণ ত্বকের যে কোনো ফাটলে ভাইরাস লুকিয়ে থাকতে পারে। ত্বক আর্দ্রতাকারী লোশন বা ক্রিম যত ভারি ও তৈলাক্ত হয় তত ভালো।

* হাতের নখ ছোটো করে কেটে রাখা উচিত যেন তাতে ভাইরাস ঢুকে থাকতে না পারে।

দেশে প্রথমবারের মতো করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। করোনা ভাইরাস বিস্তার রোধ এবং এতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমাতে বিশ্ববাসীকে বেশ কিছু সাধারণ অথচ কার্যকর সতর্কতা অনুসরণের আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

ভাইরাস আক্রান্ত দেশে ভ্রমণ করা যাবে না

করোনা যেভাবে ছড়ায় 

বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী করোনার যে ভাইরাসটি বিস্তার লাভ করেছে তার নাম কোভিড-১৯। এই
ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে সুস্থ ব্যক্তির দেহে হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে ছড়াতে পারে।

কোনো সুস্থ ব্যক্তি যখন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির দেওয়া হাঁচি বা কাশির সুক্ষ্মকণা শ্বাসপ্রশ্বাস বা
হাতের স্পর্শের মাধ্যমে মুখে নেন, তখন তার দেহেও করোনা সংক্রমণ ছড়াতে পারে।

ভাইরাসটির উৎসস্থল চীনের বেশ কিছু হাসপাতাল কোনো ব্যক্তির মাঝে দশ মিনিটের বেশি সময় ধরে হাঁচি দেওয়া বা কাশি দেওয়ার লক্ষ্মণ দেখা দিলে তাকে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি বলে চিহ্নিত করে। এছাড়াও, কোনো ব্যক্তি ইতোমধ্যেই আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির ছয় ফুটের মধ্যে থাকলে তাকেও উচ্চ সংক্রমণ ঝুঁকির কাতারে ফেলা হয়।

পূর্বলক্ষ্মণ দেখা না দেওয়া ব্যক্তিদের থেকেও ছড়াতে পারে

করোনায় আক্রান্ত অনেকের মাঝে রোগের উপসর্গ নাও দেখা যেতে পারে। এসব রোগীর মাধ্যমেও ভাইরাসটি বিস্তার লাভ করতে পারে। কোভিড-১৯ ভাইরাস সম্পর্কে এখনো অনেক কিছুই অজানা থাকায় এই রোগীদের থেকে ভাইরাসটি সংক্রমণের ঝুঁকি ঠিক কতটা বেশি তা জানা যায়নি।

সামাজিক বিস্তার

এছাড়াও আক্রান্ত রোগীর লালা, থুথু বা সর্দির ফোটা থেকে কোনো বিদ্যালয়ের বেঞ্চ বা বাসের সিট সংক্রমিত হতে পারে। সেখান থেকে সহজেই তা অন্যদের দেহে ছড়াতে পারে।

সুরক্ষার উপায়

নিয়মিত হাত ধোয়া

নিজের দুই হাত মাঝে মধ্যেই পরিষ্কার, স্বচ্ছ পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এরপর হাতে সাবান লাগিয়ে হাতের তালু এবং পৃষ্ঠতল ঘষে ফেনা তুলুন। আঙ্গুলগুলোর মাঝেও একইভাবে পরিষ্কার করুন। এরপর আবারও পানি দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন।

হাঁচি বা কাশি দেওয়ার সময় টিস্যু দিয়ে মুখ ঢাকতে হবে

রপর সেই টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলে আবারও নিজের হাত পরিষ্কার করুন। হাঁচি বা কাশি আটকাতে কখনোই নিজের হাত বা কনুই ব্যবহার করবেন না।

মুখে মাস্ক পড়ে সামান্য সুরক্ষা পাওয়া যেতে পারে

করোনা ভাইরাসের তরল উৎস হাঁচি-কাশির ফোটা থেকে ফেস মাস্ক কিছুটা সুরক্ষা দিতে পারে। তবে এর মাধ্যমে ভাইরাসের অতি সূক্ষ্মকণা আটকানো সম্ভব নয়। এছাড়া, মাস্ক পড়লেও চোখ খোলাই থাকে। ইতোমধ্যেই বেশ কিছু ব্যক্তির দেহে চোখের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে।

লক্ষ্মণ দেখা মাত্রই চিকিৎসা সেবা নিন

আপনার যদি জ্বর, কাশি এবং শ্বাস প্রশ্বাসে কষ্ট হয়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই নিকটস্থ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আপনি সম্প্রতি কোথায় ভ্রমণ করেছেন, সেসব কথা তাকে খুলে বলুন।

করোনা নিয়ে বিভ্রান্তি বা অপ-প্রচার

ছবির ফুটফুটে একদিন বয়সী এই মুরগীর বাচ্চাটা দেখে আপনার কি ভয় লাগছে? সম্ভবত না। এটাই বড় হয়ে আপনার/আমার প্রোটিনের চাহিদা মেটায়। মানুষের বেঁচে থাকার সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপাদানের অন্যতম এই প্রোটিনের সবচেয়ে বড় জোগানদাতা হচ্ছে ব্রয়লার মিট।

এবার দ্বিতীয় ছবিটা দেখুন। এটা দেখে ভয় পাচ্ছেন? কিছুটা পেতেও পারেন, কেননা এই প্রাণিটি সচরাচর আমরা দেখতে পাই না। একটি বিলুপ্তপ্রায় প্রাণি এটি। বাংলায় এটাকে বনরুই নামে ডাকা হয়। প্রানিটি নিরীহ। বর্তমানে যে করোনা ভাইরাসের কারনে সারা দুনিয়া লকডাউন হয়ে আছে, সেই করোনা ভাইরাসের রিজার্ভার এই প্রাণিটি। প্রায় ৭০% বনরুইয়ে এই করোনা ভাইরাসটি পাওয়া গিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে চায়নার উহানের বন্যপ্রানী মার্কেটের এই বনরুই থেকেই করোনা ভাইরাস ছড়িয়েছে।

আমাদের দেশে অনেক ব্যাক্তি না জেনে বুঝে কথা বলেন। তারা যে জিনিস জানেন না, বুঝেন না, সেটা নিয়েও বক্তৃতা,বিবৃতি দিতে পিছ পা হন না। সেই তথাকথিত বিশেষজ্ঞরা কিভাবে যেনো আমাদের দেশে বিরল প্রায় সেই বনরুইকে ব্র‍য়লার মুরগী বানিয়ে ফেলেছেন। বিভিন্ন মিডিয়াতে হাসঁ,মুরগী,বিভিন্ন পোষা প্রাণি থেকে করোনা ছড়াতে পারে বলে প্রচার চালিয়ে দিলেন। অথচ সারা দুনিয়ায় কোথাও হাঁস,মুরগী বা অন্য কোন পোষা প্রানি থেকে করোনা ছড়িয়েছে এমন কোন রেকর্ড নেই। ফলাফল? ব্রয়লার মুরগী কেনা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে মানুষ। ডিম, দুধ,খাওয়াও কমিয়ে দিয়েছে। অথচ এই সময়ে আমাদের সকলের সবচেয়ে বেশী দরকার ছিলো নিয়মিত মুরগীর মাংস, ডিম ও দুধ খাওয়া। করোনার কোন নির্দিষ্ট মেডিসিন নেই। তাই শরীরের ইম্যুনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়নো ছাড়া আপনার/আমার আসলে বিশেষ কিছু করার নেই। মাংস,ডিম,দুধ আমাদের শরীরের প্রোটিনের চাহিদা মেটায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, বুদ্ধির বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে, ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

গত ২৫ শে মার্চ বুধবার দুপুর ১২ টায় এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দরা মোহাম্মদপুরস্থ কেন্দ্রীয় অফিসে দেশের দুগ্ধ খামার শিল্পকে রক্ষার্থে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন বর্তমান পরিস্থিতিতে সমগ্র দেশে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১২০ থেকে ১৫০ লাখ লিটার দুধ অবিক্রিত থেকে যাচ্ছে যার অর্থনৈতিক বাজার মূল্য প্রায় ৫৭ কোটি টাকা এবং মাসিক হিসাবে প্রায় ১৭১০ কোটি টাকা। বর্তমানে দেশে বার্ষিক প্রায় ৯৯ লক্ষ মেট্রিক টন দুধ উৎপাদন করা হয় যা মোট চাহিদার প্রায় ৭০%। সম্মেলনে জানানো হয় গ্রামের একজন কৃষক গরুর দুধ বিক্রি করে প্রতিদিনকার নিজের আহার এবং তার পোষা প্রানিটির জন্য খাবার কিনে আনে। গত ৭ দিন যাবত প্রান্তিক পর্যায়ের একজন খামারি দুধ বিক্রি করতে চরম অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে। খামারিদের কোথাও দুধ বিক্রি করতে হচ্ছে ১০ থেকে ১২ টাকা কেজিতে আবার কোথাও অনেকে বিক্রি করতে পারছেনা।

নেতৃবৃন্দ জানান, বাংলাদেশে দুগ্ধ প্রসেসর কোম্পানীগুলো দেশের মোট উতপাদনের মাত্র ৫% দুধ প্রতিদিন সংগ্রহ করে থাকে যার পরিমান মাত্র ১৩ লক্ষ ৫৯ হাজার লিটার; বাকী ২ কোটি ২৮ লক্ষ ৩৬ হাজার লিটার যা মোট উতপাদনের প্রায় ৮৪% দুধ খামারিরা বিক্রি করে বিভিন্ন মিষ্টি দোকানে ও বাসা বাড়িতে। বর্তমানে মিষ্টির দোকান সবই বন্ধ হয়ে যাবার কারনে এবং জনজীবনে নানা অস্থিরতার কারনে দুধ বিক্রি নিয়ে খামারিরা মারাত্বক ক্ষতির সম্মুখীন।

বিশ্বব্যাপী মহামারি আকার ধারণ করেছে করোনা ভাইরাস। ফলে করোনার চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা দুরূহ। বিশেষ করে আমাদের মতো জনবহুল ও অপ্রতুল চিকিৎসাব্যবস্থায় করোনার সংক্রমণ মোকাবিলা করা খুবই কঠিন কাজ। তবে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে- যাদের শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি তারা করোনায় আক্রান্ত হলেও ভাইরাসটি প্রতিরোধ সক্ষম।

বর্তমান পরিশ্তিতিতে সরকার দেশবাপ্যি সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে, যার মাধ্যমে হয়ত ক্মুনিটি ট্রান্সফের বন্ধ সাময়িক বন্ধ হবে। কিন্তু আমাদের মত গরীব দেশে খেটে খাওয়া মানুষকে কত সময় আটকেয়ে রাখা যাবে। কাজেই আমাদের আবশ্যয় ব্যাক্তিগত রোগ প্রতিরোধ তৈরিতে মনযোগ দিতে হবে।

সরকারের ও সামাজিক সংগঠনের বা ব্যাক্তিগত উদ্যোগে আমরা দিনমজুর/ রাস্থার মানুষের কাছে চাল, ডালসহ নিত্তপ্রয়জনিয় কিছু দ্রাব্য বিতরণ করছি। আমার প্রশ্ন হছে কেন আমারা চালের সাথে বরতমানে স্বল্প মুল্লের মাংস, ডিম অথবা দুধ প্রদান করছিনা।

এতে তিনটি লাভ হবে- প্রথমতঃ করোনা থেকে বাচতে ব্যাক্তিগত রোগ প্রতিরোধ তৈরি হবে, দ্বিতীয়তঃ আমার কৃষক যে রোঁদ/ ঝড় উপেক্ষা করে আমাদের জন্য আমিষ তয়রিতে সারা বছর কাজ করছে সে এই আপদ কালীন সময় কিছুটা হলেও উপকৃত হবে, তৃতীয়তঃ আমারা না বুঝে পোল্ট্রি/ ডিম/ দুধ নিয়ে যে অপপ্রচার চালাচ্ছি – এর ফলে জনসাধারণ আস্থা পাবে।

তথ্য সংগ্রহ:

১। কৃষি তথ্য সার্ভিস।

২। উইকপিডিয়া

৩। ডঃ আহমেদ মাসিহা জামিল আরুপ, সহকারী আধ্যপক, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ। টাইমলাইন

৪। ডঃ সাইফুল বাসার টাইমলাইন।

৫। এগ্রিলাইফ নিউজ

ড. মোঃ হেমায়েতুল ইসলাম আরিফ, ডেপুটি চীফ ভেটেরিনারিয়ান, ভেটেরিনারি এন্ড আনিম্যাল সায়েন্সেস বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ লাইভস্টক সোসাইটি।