অর্থপাচার বন্ধে কঠোর হচ্ছে সরকার

বিদেশে অর্থপাচার বন্ধে কঠোর হচ্ছে সরকার। এ জন্য একটি ‘ডিজিটাল ডেটাবেজ’ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে সময়ক্ষেপণ হবে না। এর মাধ্যমে মামলাগুলোর সর্বশেষ অবস্থা দ্রুত সময়ে জানা সম্ভব হবে। পাশাপাশি মুদ্রাপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদারে মামলা পরিচালনায় পৃথক ‘অ্যাটর্নি সার্ভিস’ কিংবা ‘ইনডিপেন্ডেন্ট প্রসিকিউশন সার্ভিস’ চালুুরও সুপারিশ করা হয়েছে।

সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে অনুষ্ঠিত ‘মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা এবং নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে গঠিত ওয়ার্কিং কমিটি’র এক সভায় এ সুপারিশ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে’র (বিএফআইইউ) পক্ষ থেকে ‘লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগে’র এসব সুপারিশের বিষয়ে সভাকে অবহিত করা হয়। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

সূত্র জানায়, আগে বৈদেশিক লেনদেন হতো ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে। এখন ডিজিটালে হচ্ছে। এসব বিষয় বিবেচনা করেই ডিজিটাল ডেটাবেস তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ‘লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ’ মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ এবং এ সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তিতে পাঁচ দফা সুপারিশ করেছে। দেশ থেকে প্রতিবছর কী পরিমাণ টাকা বের হয়ে যাচ্ছে তার কোনো গবেষণালব্ধ তথ্য নেই। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির (জিএফআই) সবশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে বছরে ৫৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এ পাচারের ৮০ শতাংশই গেছে বাণিজ্যের মাধ্যমে, অর্থাৎ আমদানি-রপ্তানির আড়ালে আন্ডার এবং ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ অনেক দেশ অর্থপাচার রোধে আইন কঠোর করলেও বাংলাদেশে প্রচলিত আইন খুবই দুর্বল। যে কারণে পাচারকারীদের সহজে ধরা যায় না।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মুনসুর বলেন, সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে মুদ্রাপাচার হয়। এ ছাড়া নিরাপত্তাহীনতা, বিনিয়োগ ঝুঁকির কারণেও অর্থ পাচার হয়। উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত রাষ্ট্রে টাকা পাচার হয়ে থাকে। এগুলো সমাধান করলে টাকা পাচার বন্ধ হবে।

মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ এবং এ সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে সুপারিশের মধ্যে রয়েছে- মানিলন্ডারিং সংশ্লিষ্ট মামলায় নিম্ন আদালত থেকে যেসব আসামি জামিন বা খালাস পায়, সেসব মামলার আপিলের বিষয়ে দ্রুত অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসকে অবহিত ও এসব মামলার নথি চলাচল ডিজিটাইজড করা।

অবরুদ্ধ ও বাজেয়াপ্ত সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ/ব্যবস্থাপনার বিদ্যমান পদ্ধতি পর্যালোচনা করে আধুনিকায়ন করা। মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের বিধান অনুযায়ী বর্ণিত অপরাধের বিচারে বিশেষ জজ নিয়োগ এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯-এর বিধান অনুযায়ী ওই আইনে বর্ণিত অপরাধের বিচারের জন্য প্রয়োজনীয় এলাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যক বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা।

এ সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, সভায় ‘লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগে’র পক্ষ থেকে জানানো হয়, অপরাধ সম্পর্কিত পারস্পরিক সহায়তা আইনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ হিসেবে এর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্ধারণ করা হয়েছিল। পরে এ কাজে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসকেও সংযুক্ত করা হয়েছে।

জানা গেছে, এপিজির বিভিন্ন সুপারিশের মধ্যে ‘রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট অন লিগ্যাল পারসন অ্যান্ড লিগ্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ কার্যক্রম অন্যতম। এ বিষয়ে সভায় বলা হয়, ওয়ার্কিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কর্তৃক প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এ সংক্রান্ত একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে কমিটির দুটি সভায় ঝুঁকি নিরূপণ কার্যক্রমের রোডম্যাপ অনুযায়ী একটি খসড়া প্রণয়ন করা হয় এবং সদস্যদের মতামত নিয়ে শিগগিরই এটি চূড়ান্ত করা হবে।

সভায় বিএফআইইউ জানায়, সন্ত্রাসে অর্থায়ন ঝুঁঁকি নিরূপণ, সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসে আন্তর্জাতিক যোগসূত্র উদ্ঘাটনের লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে (রাজনৈতিক) ফোকাল পয়েন্ট করে ৮ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এসএইচ-০৪/১৩/২১ (অনলাইন ডেস্ক)