করোনায় মাথাপিছু ঋণের বোঝা বাড়িয়েছেই

করোনা মহামারি মাথাপিছু ঋণের বোঝা তো বাড়িয়েছেই, সঙ্গে প্রত্যেক দেশের সরকার ঝুঁকেছে ঋণের দিকে। করোনার কারণে এখন সারাবিশ্বের মোট ঋণ ৩০০ ট্রিলিয়ন ডলার হওয়ার পথে।

সংখ্যাটি এ যাবৎকালে ঋণের সবচেয়ে বড় রেকর্ড। আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স প্রকাশ করেছে এ তথ্য। মহামারিতে বিশ্ব অর্থনীতির ওপর দিয়ে সুনামি বয়ে গেছে।

অর্থনীতির লাগাম টানতে বিপুল পরিমাণ প্রণোদনা দিয়েছে বিভিন্ন দেশের সরকার। লাগামহীন ঋণের দিকে ঝুঁকেছে সরকারগুলো। দেনার পরিমাণ বেড়েছে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) সব মিলিয়ে এ ঋণগ্রহণের পরিমাণ ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি ডলার।

এর মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক ঋণের পরিমাণ ২৯৬ লাখ কোটি ডলারের রেকর্ড স্পর্শ করেছে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) সামগ্রিকভাবে ঋণের পরিমাণ কিছুটা কমেছিল। তবে জুনের পর ঋণ করোনা পূর্ববর্তী সময়ের চেয়ে ৩৬ লাখ কোটি ডলার বেড়েছে।

২০২১ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় বৈশ্বিক ঋণের অনুপাত ৩৫২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এ হার চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে সর্বকালের সর্বোচ্চ ৩৬২ শতাংশ থেকে মাত্র ৯ পয়েন্ট কম। সামগ্রিকভাবে আইআইএফের পর্যবেক্ষণ করা ৬১টি দেশের মধ্যে ৫১টি দেশে দ্বিতীয় প্রান্তিকে জিডিপির তুলনায় বৈশ্বিক ঋণের অনুপাত কমে গিয়েছিল।

আইআইএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহামারি শুরুর পর অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশের সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ২৫ লাখ কোটি ডলারের মুদ্রানীতি ও প্রণোদনা সহায়তা দিয়েছে। গত বছর করোনার কারণে বিশ্ব অর্থনীতি ১৯৩০-এর দশকের মহামন্দার পর সবচেয়ে গভীর মন্দায় পড়েছিল।

যদিও চলতি বছর অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। ২০২১ সালে ৬ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। তবে করোনার টিকাদান কার্যক্রমে অসমতা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতিকে ব্যাহত করছে।

বিশ্বজুড়ে উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলোতে ঋণের পরিমাণ সবচেয়ে দ্রুত বেড়েছে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে দেশগুলোর মোট ঋণ ৯২ লাখ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। এ ঋণের পরিমাণ ২০২০ সালের একই সময়ে ৮৭ লাখ কোটি ডলারের চেয়ে ৫ লাখ কোটি ডলার বেশি। দ্বিতীয় প্রান্তিকে চীনের ঋণের পাহাড়ে যুক্ত হয়েছে প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলার। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটিতে ঋণের পরিমাণ সর্বকালের সর্বোচ্চ ৫৫ লাখ কোটি ডলারে পৌঁছেছে।

আইআইএফ বলেছে, অন্যান্য দেশের তুলনায় চীনের ঋণ বাড়ার গতি অনেক বেশি ছিল।

চীন ছাড়াও উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলো মহামারি শুরুর পর নতুন করে ৩৬ লাখ কোটি ডলারের ঋণের পাহাড় গড়েছে। এক্ষেত্রে ঋণগ্রহণে শীর্ষে আছে ব্রাজিল, দক্ষিণ কোরিয়া ও রাশিয়া। উদীয়মান অর্থনীতির পাশাপাশি উন্নত অর্থনীতিতেও ঋণের পরিমাণ বেড়েছে।

এ দেশগুলোর ঋণের পরিমাণ এক লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলার বেড়ে ২০৫ লাখ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। এ ঋণের পরিমাণ দেশগুলোর সম্মিলিত জিডিপির প্রায় ৪১৮ শতাংশ। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রে ঋণের পরিমাণ প্রায় ৪৯ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছেছে। চলতি বছরের প্রথমার্ধে বিশ্বজুড়ে পারিবারিক ঋণ এক লাখ ৫০ হাজার কোটি ডলার বেড়ে ৫৫ লাখ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। একই সময়ে সরকারি ও করপোরেট ঋণের পরিমাণ কিছুটা ধীরগতিতে বেড়ে এক লাখ ৩০ হাজার কোটি ও এক লাখ ২০ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছেছে।

এসএইচ-০৩/১৮/২১ (অনলাইন ডেস্ক)