ই-পাসপোর্ট পেতে দীর্ঘ অপেক্ষা

ঢাকার আগারগাঁও আঞ্চলিক অফিসে ই-পাসপোর্ট পেতে গ্রাহককে দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হচ্ছে। নতুন পাসপোর্ট পেতে ফরম পূরণ করার পর আবেদন জমা দিতেই তিন থেকে চার মাস সময় লাগছে। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সেবাপ্রার্থীরা। বিশেষ করে ভিসার মেয়াদ শেষের দিকে হওয়ায় জরুরি ভিত্তিতে যেসব প্রবাসীর পাসপোর্ট প্রয়োজন তারা ভোগান্তিতে পড়ছেন বেশি। এ ছাড়া বিদেশে চিকিৎসা নিতে চাওয়া রোগী এবং শিক্ষার্থীরাও সময়মতো পাসপোর্ট পাচ্ছেন না। আর দালালদের দৌরাত্ম্যে আছেই। পাসপোর্ট পেতে বিলম্বের কারণ হিসেবে জনবল সংকট ও সক্ষমতার থেকে বেশি আবেদন পড়ার কথা বলছেন পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

সম্প্রতি পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সার্ভারেও ত্রুটি দেখা দিয়েছে। কেউ বলছেন, সার্ভার ডাউন থাকায় সঠিক সময়ে সেবা মিলছে না। বৃহস্পতিবারও সার্ভার ডাউন থাকায় পাসপোর্ট ডেলিভারি সেবা বন্ধ ছিল। অতিরিক্ত টাকা দিয়ে সুপার এক্সপ্রেস সার্ভিস নিয়েও সঠিক সময়ে ই-পাসপোর্ট মিলছে না।

উল্লেখ্য, দেশে-বিদেশে মিশনগুলোসহ মোট ১৫০টি কেন্দ্র থেকে এমআর (মেশিন রিডেবল) পাসপোর্ট ও ই-পাসপোর্ট প্রদান করা হয়।

ডিআইপি সূত্র জানায়, চলতি মাসের ১ থেকে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক লাখ ৫৮ হাজার ৮৪৩টি ই-পাসপোর্ট ও এক লাখ ৪১ হাজার ৮৮৯টি এমআর পাসপোর্ট দেওয়া হয়েছে। মাসে অন্তত ৫ লাখ পাসপোর্ট মানুষের হাতে তুলে দেওয়ার লক্ষ্যে ডিআইপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেবা ও সুরক্ষা বিভাগে ৯০০ জনবল চেয়ে আবেদন করেছে। এই জনবল নিয়োগ হলে ই-পাসপোর্টের কার্যক্রম স্বাভাবিক গতিতে চলবে বলে মনে করছেন ডিআইপির শীর্ষ কর্মকর্তারা।

এ ছাড়া জন্মনিবন্ধন সনদের সার্ভারের সঙ্গে দীর্ঘদিন পাসপোর্ট অফিসের সার্ভার সংযোগ না থাকায় বন্ধ রয়েছে জন্মনিবন্ধনধারীদের পাসপোর্ট প্রদান। গ্রহণ করা হচ্ছে না জন্মনিবন্ধনধারীদের পাসপোর্টের আবেদন। গতকাল পর্যন্ত জন্মনিবন্ধন সার্ভারের সঙ্গে পাসপোর্ট অফিসের সার্ভারে সংযোগ স্থাপন হয়নি। ১৮ বছর বয়সের নিচে শিশু ও কিশোরদের জাতীয় পরিচয়পত্র গ্রহণের সুযোগ নেই। এ বয়সীদের আবেদন করতে হয় জন্মনিবন্ধন সনদ দিয়ে।

সার্ভার সমস্যার দ্রুত সমাধান চেয়ে গত ১৯ সেপ্টেম্বর আগারগাঁওয়ে বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের (ডিআইপি) মহাপরিচালক ও প্রকল্প পরিচালকের কাছে চিঠি দিয়েছেন। এ ব্যাপারে ডিআইপির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ুব চৌধুরী আামদের সময়কে বলেন, সার্ভার সমস্যার সমাধান হয়নি। নির্দেশ দিয়েছি সার্ভার সংযোগের দরকার নেই। পূর্বের মতো কম্পিউটারে জন্মনিবন্ধন সনদ পরীক্ষা করে পাসপোর্টের আবেদন গ্রহণ করা হবে।

পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হওয়ায় নবায়নের (রিনিউ) জন্য অনলাইনে আবেদন করেছেন সৌদি আরব প্রবাসী মো. ফজলে বারী। এদিকে নভেম্বর মাসেই তার ভিসার মেয়াদ শেষ হবে। এই সময়ের মধ্যে তাকে পাসপোর্ট নবায়ন করে ফিরে যেতে হবে সৌদি আরব। কিন্তু অনলাইনে ফরম পূরণ করার পর আবেদন জমাদানের জন্য ১১ নভেম্বর তারিখ পেয়েছেন। ফলে এক প্রকার দিশাহারা তিনি। এর মধ্যে তিনি পাসপোর্ট পাবেন কীভাবে আর সৌদি ফিরে যাবেন কবে তা নিয়ে আছেন শঙ্কায়।

শিউলি নামের একজনের সঙ্গে কথা হয় আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের সামনে। ভোটার আইডি কার্ডের সঙ্গে তার নামের সামান্য গরমিল থাকায় পাসপোর্ট পাচ্ছেন না। আবেদন করার আট মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো তিনি ঘুরছেন। বারবার এলেও স্পষ্ট করে কেউ বলছেন না- কবে নাগাদ তিনি পাসপোর্ট হাতে পাবেন।

ঢাকার আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের সামনে সেবাগ্রহীতাদের এমন দুর্ভোগের চিত্র এখন নিয়মিত। সাধারণ ই-পাসপোর্ট নতুন বা নবায়ন যেটিই করা হোক সময় লাগার কথা ২১ দিন। কিন্তু কারও কারও সেটি লেগে যাচ্ছে তিন থেকে চার মাস। এই দীর্ঘসূত্রতা মূলত শুরু হয়েছে করোনার কারণে। দালালের দৌরাত্ম্যও বেড়েছে। বিশেষ করে যাদের জরুরিভিত্তিতে পাসপোর্ট দরকার, তারা রয়েছেন চরম ভোগান্তি আর অনিশ্চয়তায়।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ুব চৌধুরী বলেন, এই সমস্যাটা আমাদের আগে ছিল না। করোনাপরবর্তী সময়ে এ সমস্যা দেখা দিয়েছে। আমাদের যে লোকবল রয়েছে, তাতে একদিনে সর্বোচ্চ ৯০০ আবেদন গ্রহণ করতে পারি। কিন্তু করোনায় বন্ধ থাকার কারণে খুলে দেওয়ার পর ই-পাসপোর্টে হাজার হাজার আবেদন পড়ছে। আমাদের সক্ষমতার অতিরিক্ত আবেদন পড়ায় ২১ দিনের পাসপোর্ট ডেলিভারি দিতে সময় লেগে যাচ্ছে দুই থেকে তিনগুণ। যার কারণে ফরম পূরণ করার পরও আবেদন জমা দেওয়ার তারিখ পেতেও দেরি হচ্ছে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের পরিচালক মোহাম্মদ তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, মূলত জনবল সংকটের কারণে সেবাগ্রহীতাদের পাসপোর্ট পেতে দেরি হচ্ছে। আমরা স্বল্প জনবল দিয়ে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। জনবল না বাড়ালে এই সংকটের সমাধান হবে না। প্রাথমিকভাবে জরুরি ভিত্তিতে আগারগাঁওয়ে চার কর্মকর্তা ও ২৫ কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হলে ওই অফিসের চলমান সমস্যা অনেকটা দূর হবে।

এসএইচ-০৬/২৪/২১ (অনলাইন ডেস্ক)