হিন্দুদের ওপর হামলার বিচারে সাক্ষী সুরক্ষা আইন করবে সরকার

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, খুব দ্রুত একটি নতুন আইন করতে যাচ্ছে সরকার, যাতে কোন মামলায় সাক্ষ্য দেয়ার জন্য সাক্ষীর সুরক্ষা এবং তার গোপনীয়তা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা থাকবে।

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনার বিচারের জন্য সরকার এই আইনগত উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে বলে বলেছেন আইনমন্ত্রী।

আইনজীবী ও অধিকারকর্মীরা বলছেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনাগুলোর বিচার প্রক্রিয়া অনেক ক্ষেত্রে শেষই করা যায় না সাক্ষীর অভাবে।

সে কারণে তারা দীর্ঘদিন ধরে একটি সাক্ষী সুরক্ষা আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়ে আসছিলেন।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হওয়া হামলার ঘটনার বিচার প্রক্রিয়া অনেক সময় দীর্ঘায়িত হয়, কখনো কখনো বিচার নিশ্চিত করা যায় না, এর বড় কারণ সাক্ষীর অভাব।

সে কারণেই সরকার সাক্ষীদের নিরাপত্তা যেন থাকে এমন ব্যবস্থা রেখে একটি নতুন আইন করতে যাচ্ছে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলছেন, এই আইনটি করার জন্য পদক্ষেপ আগেই নেয়া হয়েছিল।

কিন্তু ১৩ই অক্টোবর কুমিল্লার পূজামণ্ডপে কোরআন পাওয়ার ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও হামলার প্রেক্ষাপটে সাম্প্রদায়িক হামলার বিচারের বিষয়টি আবার আলোচনায় উঠে এসেছে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলছেন, “এই রকম হামলা যখন হয়, তখন যেটা হয় যে সাক্ষীরা নির্ভয়ে সাক্ষ্য দিতে আসতে দ্বিধাবোধ করে। সে কারণে আমরা একটা সাক্ষী সুরক্ষা আইন করার পদক্ষেপ আগেই নিয়েছিলাম। এখন সেটাকে খুব তাড়াতাড়ি আমরা বাস্তবায়ন করবো এই আইনটা করে।”

“তাতে সাক্ষীদের প্রটেকশন (সুরক্ষা) দেয়ার জন্য আইনে ব্যবস্থা থাকবে। এবং সাক্ষীদের প্রতি যদি কেউ বিরূপ আচরণ করে, তাহলে সেটাও একটা অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়ে তাদের শাস্তির বিধান থাকবে।

“আরেকটি বিষয়- সাক্ষীদের গোপনীয়তা রক্ষার ব্যবস্থা থাকবে আইনে,”—বলেন আইনমন্ত্রী।

দেশে ২০১৫ সালে হাইকোর্ট, স্বরাষ্ট্র এবং আইন মন্ত্রণালয়কে সাক্ষী সুরক্ষা আইন করার উদ্যোগ নেয়ার জন্য একটি নির্দেশ দিয়েছিল।

সেসময় মূলত ফৌজদারি মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি এবং নির্ধারিত তারিখে সাক্ষীর উপস্থিতি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ওই আইন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।

এরপর সরকার সে বিষয়ে কাজ শুরু করে।

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে বলছে, ২০১৩ সাল থেকে গত নয় বছরে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর সাড়ে তিন হাজারের বেশি হামলার ঘটনা ঘটেছে।

এসব হামলার মধ্যে হিন্দুদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং পূজামণ্ডপ, মন্দিরে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ অন্যতম।

সংগঠনটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত রিপোর্টের ভিত্তিতে এ রিপোর্ট তৈরি করেছে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ উপ-পরিচালক নীনা গোস্বামী বলেছেন, এসব ঘটনায় এখনো পর্যন্ত ”বিচারকার্য শেষ” এমন উদাহরণ নেই বললেই চলে, এর প্রধান কারণ বেশিরভাগ মামলায় সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিতে আসেন না।

তিনি বলেছেন, “সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় অধিকাংশ সময় সাক্ষী হন ওই পরিবারের প্রতিবেশী হয়ত আরেকটি সংখ্যালঘু পরিবারের মানুষ। কিন্তু মামলার বিচার প্রক্রিয়ার সময় সাক্ষী দিতে যাওয়াটা তাদের জন্য ভয়ের, এজন্য তারা সাক্ষ্য দিতে আসেন না।”

তিনি ব্যাখ্যা করছিলেন, “কারণ তাদের ওখানেই বসবাস করতে হবে, ওখানেই ফিরে যেতে হবে, ওখানে থাকতে হবে। যাদের বিরুদ্ধে কথা বলবে তারা হয়ত তাদের প্রতিবেশী, হয়ত তারা প্রভাবশালী। এজন্য ভয়ে সাক্ষী দিতে যায় না মানুষ।”

এমন অবস্থায় সরকারের একটি নতুন আইন করার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন মানবাধিকার কর্মীরা।

মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল মনে করেন, এক্ষেত্রে সরকারকে কেবল আইন করলেই হবে না, আইনের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

সেই সাথে আইন বাস্তবায়নকারীদের মানসিকতা পরিবর্তনও একইভাবে জরুরি বলে তিনি মনে করছেন।

এদিকে, আইনমন্ত্রী বলেছেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনার বিচারের জন্য ইতিমধ্যে সরকার সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইনের একটি খসড়া করেছে।

সেই খসড়া পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টিও সরকারের বিবেচনায় রয়েছে।

এসএইচ-০১/২৫/২১ (অনলাইন ডেস্ক, তথ্যসূত্র : বিবিসি)