ওমিক্রন সংক্রমিত দেশের জন্য বাংলাদেশের দরোজা বন্ধের পরামর্শ

দেশে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের প্রবেশ ঠেকাতে, যে দেশগুলোতে এটির সংক্রমণ হয়েছে, সেদেশগুলো থেকে বাংলাদেশে যাত্রী প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরামর্শ দিয়েছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত সরকারের কারিগরি কমিটি।

রোববার এক সভা শেষে সরকারকে মোট চারটি পরামর্শের কথা জানানো হয়েছে।

কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, দক্ষিণ আফ্রিকা সহ আশপাশের দেশ জিম্বাবুয়ে, নামিবিয়া, বোতসোয়ানা, সোয়াজিল্যান্ডে থেকে যাত্রী প্রবেশের উপর এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার অনেক দেশ নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশেও এই কয়টি দেশ এবং যে দেশগুলোতে ওমিক্রনের সংক্রমণ পাওয়া গেছে সেসব দেশ থেকে যাত্রী আগমন বন্ধের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

এই কমিটির একজন সদস্য ভাইরোলজিষ্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, কোন ব্যক্তির এসব দেশে গত ১৪ দিনের মধ্যে ভ্রমণের ইতিহাস থাকলে তাদের সরাসরি বিমানবন্দরেই আলাদা করে পরবর্তী ১৪ দিন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখার পরামর্শ দিয়েছে কারিগরি কমিটি।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের যেসব বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট অবতরণ করে সেখানেই পরীক্ষার কার্যকর ব্যবস্থা রাখা দরকার। আর যেহেতু প্রায়শই দেখা যায় অনেককিছু ঠিক মতো কাজ করে না, সে কারণে কারো শরীরে নতুন ভ্যারিয়েন্টটির উপস্থিতি পাওয়া গেলে, যেদেশ থেকেই আসুক, তাদেরও কোয়ারেন্টিনে রাখার কথা বলেছি আমরা।”

এছাড়া হাসপাতালগুলোর প্রস্তুতি নিয়েও সেখানে কথাবার্তা হয়েছে।

ওমিক্রনের কথা মাথায় রেখে চিকিৎসা ব্যবস্থা শক্তিশালী করার সুপারিশ করা হয়েছে।

রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানসহ যেসব আয়োজনে জনসমাগম হয় সেগুলো সীমিত করার কথাও সুপারিশে বলা হয়েছে।

তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং অফিস স্বাস্থ্যবিধি মেনে যেভাবে চলছে সেভাবে খোলা রাখার কথা বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক নজরুল ইসলাম।

ওমিক্রনের প্রবেশ ঠেকাতে দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করা হচ্ছে, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এরকম বক্তব্যের একদিন পরে কারিগরি কমিটি এমন সুপারিশ দিল।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি সম্মেলনে যোগ দিতে গতকাল সুইজারল্যান্ডের উদ্দেশ্যে রওনা দেবার আগে তিনি সাংবাদিকদের একথা বলেন।

তবে তিনি এমন বক্তব্য দিলেও এই নতুন ধরনটি সম্পর্কে কার্যত কোনও ধরনের পদক্ষেপ সরকারকে এখনো নিতে দেখা যায়নি।

আজ দুপুরের পরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বলা হয়েছে, দেশের সব বন্দরে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।

অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম সেখানে বলেন, নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট প্রতিরোধে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।

“দক্ষিণ আফ্রিকায় পাওয়া একটি নতুন ভ্যারিয়েন্টকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সেবিষয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আমাদের সকল পোর্ট অব এন্ট্রিগুলোতেও আমরা সতর্কবার্তা দিয়েছি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলছি।”

গেল শুক্রবার করোনাভাইরাসের এপর্যন্ত পাওয়া সবচেয় উদ্বেগ সৃষ্টিকারী ধরণ ওমিক্রন সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

গত ২৪ নভেম্বর নতুন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়ার কথা সংস্থাটিকে অবহিত করে দক্ষিণ আফ্রিকা।

সর্বশেষ ‌এই ভ্যারিয়েন্টটি কোভিড জীবাণুর সবচেয়ে বেশি ‘মিউটেটেড’ হওয়া সংস্করণ।

ওমিক্রনের প্রবেশ ঠেকাতে বিশ্বের অনেক দেশ খুব দ্রুততার সাথে পদক্ষেপ নিয়েছে।

বেশ কিছু দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা ও তার পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দেশের সাথে ইতিমধ্যেই বিমান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে।

নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রিয়া, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ইসরাইল সহ অনেক দেশ নতুন করে কোয়ারেন্টিন এবং দেশের ভেতরে চলাচল, দোকানপাট খোলা রাখা, জনসমাগমের উপর কঠোর বিধি নিষেধে আরোপ করেছে।

এসএইচ-২২/২৮/২১ (অনলাইন ডেস্ক)