করোনা টিকা না নিলে সেবা দেয়া হবে না!

দেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, সরকারি সেবা পেতে বাধ্যতামুলক ভ্যকসিন নেওয়ার শর্ত যুক্ত করতে তারা সরকারকে সুপারিশ করেছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকও মঙ্গলবার বলেছেন, ‘নো ভ্যাকসিন নো সার্ভিস’, অর্থাৎ টিকা না দিলে সরকারি সেবা মিলবে না।”

কিন্তু যে দেশে এখন পর্যন্ত জনসংখ্যার মাত্র ২৫ শতাংশ মানুষকে দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে, সে সময় এ ধরণের ‘নো ভ্যাকসিন-নো সার্ভিস’-এর মত সিদ্ধান্ত কতটা যৌক্তিক বা নৈতিক – সেই প্রশ্ন উঠিতে শুরু করেছে।

তবে স্বাস্থ্যবিভাগ যুক্তি দিচ্ছে যে, ভ্যাকসিন দেয়ার জন্য মানুষের আগ্রহ বাড়াতে বা একটা চাপ তৈরি করতে তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

কর্মকর্তারা বলেছেন, কিছুদিন ধরে ভ্যাকসিন দেয়ার ব্যাপারে মানুষের আগ্রহ কমে গেছে বলে তারা তাদের টিকা কেন্দ্রগুলোর পরিসংখ্যানে দেখছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম বলছেন, ভ্যাকসিন ছাড়া সরকারি সেবা যদি দেয়া না হয়, তাহলে মানুষের আগ্রহ আবার বাড়বে।

“কিছু কিছু লোক যারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করে, তারাও ভ্যাকসিনের আওতার বাইরে রয়ে গেছে। হয়তো ইচ্ছে করেই তারা ভ্যাকসিন নেয়নি।”

“গ্রামাঞ্চলেও অনেকে ভ্যাকসিনের জন্য আসে নাই। তাদেরকেই ভ্যাকসিনের আওতায় আনা আমাদের টার্গেট” বলেন অধ্যাপক আলম।

কিন্তু সরকারি হিসাবেই দেখা যায়, এক কোটির বেশি মানুষ নিবন্ধন করার পর তাদের ভ্যাকসিনের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে দিনের পর দিন।

১২ বছরের বেশি স্কুল শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন দেয়ার ক্ষেত্রেও নিবন্ধনের জটিলতা এবং ধীরগতিসহ নানা অভিযোগ উঠছে।

এমন পরিস্থিতিতে মানুষের আগ্রহ কম থাকার যে বক্তব্য স্বাস্থ্যবিভাগ দিচ্ছে-তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলেছেন, এপর্যন্ত কত শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে-এই প্রশ্ন বিবেচনায় না নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ এমন সব বক্তব্য দিচ্ছে।

তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম বলেছেন, পরিসংখ্যান যা বলা হচ্ছে, তাতে ‘গন্ডগোল’ আছে।

তার বক্তব্য হচ্ছে, দেশের ১৭কোটি জনসংখ্যার হিসাব করে ভ্যাকসিন দেয়ার নানা পরিসংখ্যান তুলে ধরা হচ্ছে।

তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইড লাইন অনুযায়ী দেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়ার কার্যক্রম চালাচ্ছে সরকার।

“সতেরো কোটি জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ মানে ১২ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়ার টার্গেট করা হয়েছে। এপর্যন্ত আমরা ৪৫ বা ৫০ শতাংশ মানুষকে প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন দিয়েছি। এভাবে পরিসংখ্যান দেখতে হবে” বলে তিনি মন্তব্য করেন।

কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ১৭ কোটি জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ হিসাব করা হলে সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১৪ কোটি। বিশেষজ্ঞরা বরাবরই বলে এসেছেন ভ্যাকসিন কার্যকর হতে দুটো ডোজ প্রয়োজন।

সরকারি হিসাবে এপর্যন্ত দুই ডোজ ভ্যাকসিন পেয়েছেন প্রায় তিন কোটি ৭০ লাখ মানুষ। অর্থাৎ, ২৮ শতাংশর কম মানুষ দুই ডোজ ভ্যাকসিন পেয়েছেন।

তবে সরকার যদি একটি ডোজকে সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে যথেষ্ট মনে করে, তখনও তাদের হিসাব অনুযায়ী টার্গেট জনসংখ্যার অর্ধেক সেবা নেবার অধিকার হারাবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক একজন অতিরিক্ত মহগাপরিচালক অধ্যাপক সানিয়া তাহমিনা বলেছেন, মোট জনসংখ্যার চার ভাগের এক ভাগ মানুষকে টিকা দিয়ে নো ভ্যাকসিন-নো সার্ভিস, শ্লোগান তোলা হলে-সেটা কাগজে কলমেই থেকে যাবে।

তিনি মনে করেন, এরআগে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধির মুখে সরকার থেকে নো মাস্ক-নো সার্ভিসের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু সেটাও কার্যকর করা যায়নি।

“মাস্কের বিষয়টা ব্যক্তির হাতে ছিল। তারপরও সেভাবে কার্যকর হয়নি।”

“কিন্তু ভ্যাকসিশন কারও হাতে নেই। এটা সরকারের হাতে। যেখানে ভ্যাকসিন দেয়ার হার অনেক কম, সেখানে নো ভ্যাকসিন, নো সার্ভিস-এই বিষয়টা বলার জন্য বলা হচ্ছে” বলে মনে করেন মিজ তাহমিনা।

আরেকজন বিশেষজ্ঞ ড: বে-নজীর আহমেদ বলেছেন, বেশিরভাগ মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতার বাইরে রেখে এ ধরনের পদক্ষেপ যৌক্তিক নয়।

এখন সরকারের হাতে পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন রয়েছে কীনা-তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, এখন দেশে দুই কোটি ডোজের বেশি ভ্যাকসিন রয়েছে।

এসএইচ-০২/০২/২১ (অনলাইন ডেস্ক)