ওমিক্রন আতঙ্কে ভারত, বাংলাদেশ সীমান্তে কড়া নজরদারি

চোখ রাঙাচ্ছে কোভিড-১৯ এর নতুন ধরন ওমিক্রন। ইতিমধ্যেই দক্ষিণ আফ্রিকায় নিজের খেলা দেখাতে শুরু করেছে এটি। দেখতে দেখতে এসে পৌঁছেছে ভারতেও। এখনও পর্যন্ত ৩০ বার নিজের স্পাইক প্রোটিনে মিউটেশন ঘটিয়ে ফেলেছে ওমিক্রন। ফলে এর ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা আগের কোভিড ধরনের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

বৃহস্পতিবার কর্নাটকে দুইজনের শরীরে মিলেছে ওমিক্রনের নমুনা। ওই দুই ব্যক্তির জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের পর জানা যায় তাদের দেহে ওমিক্রন থাবা বসিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা ফেরত ওই দুই ব্যক্তির একজনের বয়স ৬৬, অপরজন ৪৬ বছর বয়সী।

এর মধ্যে একজন অতিসম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দুবাই হয়ে ভারতে ফেরেন। এবং হোটেলে করোনা পরীক্ষার সময় তার কোভিড পজিটিভ আসে পরে জানা যায় তিনি ওমিক্রন সংক্রমিত হয়েছেন। তার সংস্পর্শে আসা বাকিদেরও চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় সবথেকে চিন্তার বিষয় দ্বিতীয় ব্যক্তির বিদেশ ভ্রমণের কোন ইতিহাস নেই। সেক্ষেত্রে তিনি কি করে করোনার এই নতুন ধরনে সংক্রমিত হলেন তা নিয়ে নানা সংশয়।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী দুইজনই করোনার দুইটি ডোজই নিয়েছেন। এই খবর জানানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব লব আগরওয়াল দেশবাসীকে সতর্কও করেছেন। সাবধানতা অবলম্বনের জন্য বিমানবন্দরে নামলেই যাত্রীদের আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করতে হবে- এই মর্মে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।

শুধু তাই নয়, দিল্লিতেও করোনার নতুন ধরনের আতঙ্ক গ্রাস করেছে। বিদেশ থেকে আসা ১২ জন ব্যক্তি ওমিক্রন সন্দেহে দিল্লির লোক নায়ক জয় প্রকাশ নারায়ণ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে ১০ জনের শরীরে কোভিড পজিটিভ ধরা পড়েছে, বাকি দুইজনের করোনার লক্ষণ থাকলেও এখনও রিপোর্ট আসেনি। বৃহস্পতিবার এই হাসপাতালে ওই ওয়ার্ডটিতে ৮ জন রোগী থাকলেও শুক্রবার তা বেড়ে হয়েছে ১২ জন। নতুন চার জনের মধ্যে দুইজন যুক্তরাজ্য, একজন করে যাত্রী ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ড থেকে ফিরেছেন। ওই ১২ জনেরই জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের পর জানা যাবে তারা ঠিক কোন করোনার কোন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত।

শুক্রবারও কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে জানানো হয়েছে ‘ওমিক্রনের চরিত্র বিশ্লেষণ করলে তা থেকে আশঙ্কা করা হচ্ছে ভারতসহ বিশ্বের আরও অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে এই ধরন।’

এদিন লোকসভায় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মানসুখ মান্ডব্য বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলি থেকে ভারতে আসা ১৬ হাজার যাত্রীর কোভিড পরীক্ষা করা হয়েছে, এর মধ্যে ১৮ জন কোভিড পজিটিভ ধরা পড়েছে। ওমিক্রন নির্ধারণে তাদের সকলেই জিনোম সিকোয়েন্সিং পরীক্ষা করা শুরু হয়েছে।’ তিনি আরও জানান ‘কোভিড-১৯ এর নতুন করে সংক্রমণ রোধে সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার প্রস্তুত। রাজ্যগুলির কাছেও পর্যাপ্ত পরিমান ওষুধ মজুদ আছে।’

ওমিক্রনের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে পর্যটন ব্যবসাতেও। বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সি থেকে পাওয়া তথ্য থেকে খবর পর্যটকরা ওমিকনের আশঙ্কায় বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণের বুকিং ইতিমধ্যেই বাতিল করা শুরু করেছেন। এটি সাধারণ ভ্রমণের আদর্শ সময় এবং এই সময় অনেকেই ইউরোপ, আমেরিকা বা মধ্যপ্রাচ্যে ঘুরতে যান। কিন্তু সেইসব দেশগুলিতে অনেকের বুকিং থাকলেও তারা সেই বুকিং বাতিল করছেন।

এদিকে কর্নাটকে করোনার নতুন ধরনের হদিশ মিলতেই আগাম সর্তকতা মূলক ব্যবস্থা নিল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর। বিদেশফেরত যাত্রীদের ওপর নজরদারির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের জন্য যে দুইটি দেশ হুমকির কারণ হয়ে উঠতে পারে সেই তালিকায় শীর্ষে রয়েছে প্রতিবেশি বাংলাদেশের নাম। এরপরই রয়েছে সিঙ্গাপুর।

এই দুই দেশ থেকেই সরাসরি বিমান চলাচল করে কলকাতা বিমান বন্দরে। ফলে এই দুই দেশ থেকে আসা বিমানযাত্রীদের করোনা পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নমুনার রিপোর্ট পজিটিভ হলে আইসোলেশনে থাকতে হবে। অন্যদিকে নমুনার রিপোর্ট না আসার পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশের সাথে পশ্চিমবঙ্গের একাধিক সীমান্ত এলাকা রয়েছে। স্থলপথে বাংলাদেশ থেকে আসা মানুষের সংখ্যা যেহেতু পশ্চিমবঙ্গে অনেক বেশি, ফলে চিন্তাও বেশি। পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত জেলা প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদেরও অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।

প্রতিদিনই বাংলাদেশ থেকে যেহেতু প্রচুর বিদেশি নাগরিক ভারতে আসেন। তাই ফুলবাড়ী-বাংলাবান্ধা, ঘোজাডাঙ্গা-ভোমরা, পেট্রাপোল-বেনাপোল সহ ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তে বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার থেকে প্রতিটি সীমান্তে চালু করা হয় কোভিড পরীক্ষা শিবির। এখন থেকে ভারতে প্রবেশ করতে হলে আরটি-পিসিআর টেস্ট করা হবে। প্রতিটি যাত্রীরই দুইটি করে নমুনা নেওয়া হচ্ছে। রিপোর্ট নেগেটিভ হলেই তবে দেশে প্রবেশের অনুমতি মিলবে। তবে রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত সরকারি খরচে ভারতে প্রবেশকারীদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সাধারণ যাত্রীদের পাশাপাশি বাংলাদেশে চলাচল করা যাত্রী ও পণ্যবাহী ট্রাকের চালক ও খালাসিদের করোনার নমুনা সংগ্রহ করা শুরু হয়েছে।

শুক্রবার বাংলাদেশ থেকে পাসপোর্টে ভারতে আসা যাত্রীদের আরটি- পিসিআর টেস্ট করা হয়। রিপোর্ট আসতে যেহেতু তিন থেকে চার দিন সময় লাগবে, তাই প্রয়োজনে যাত্রীদের ওপর নজরদারি চালাতে তাদের ফোন নম্বর, ঠিকানাসহ সমস্ত বিবরণ রেখে দেওয়া হচ্ছে।

ঘোঝাডাঙ্গা সীমান্তে কর্মরত ডা. রাজীব সানা বলেন, ‘প্রতিটি যাত্রীর দুইটি করে নমুনা রাখা হচ্ছে। যার কোভিড পজিটিভ হবে, সেই যাত্রীর কোভিডের ধরন নির্ধারণের জন্য আরেকটি নমুনা পাঠানো হবে। আমরা প্রতিটি যাত্রীর বিস্তারিত বিবরণ রেখে দিচ্ছি। যদিও কোন যাত্রীর রিপোর্ট পজিটিভ বের হয়, সেক্ষেত্রে ওই যাত্রীর সাথে যোগাযোগ করে স্বাস্থ্য বিধি অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

এসএইচ-২০/০৩/২১ (অনলাইন ডেস্ক)