টিকা কর্মসূচী হলে হার্ড ইমিউনিটি অর্জিত হবে!

দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্তের হার এখন ২৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। গত দুই সপ্তাহ যাবত এই হার বেশ দ্রুতগতিতে বাড়ছে।

ভাইরাসের বিস্তার ঠেকানোর জন্য সরকার ১১দফা বিধিনিষেধ জারি করলেও বাস্তবে সেটি অকার্যকর রয়েছে।

সংক্রমণের হার হু হু করে বাড়লেও বিধিনিষেধ বাস্তবায়নের তেমন কোন কার্যক্রম দৃশ্যমান নয়।

হোটেল- রেস্তোরাঁয় খাবার ক্ষেত্রে টিকা সনদ দেখানো কিংবা গণ-পরিবহনে অর্ধেক যাত্রী বহন করা – এসবের কোন কিছুই বাস্তবায়ন করা যায়নি।

এছাড়া জনসমাগমে মাস্ক পরার বিষয়টিকেও অনেকে তোয়াক্কা করছেন না।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অনেক বলছেন, পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, বিধি-নিষেধ কার্যকর করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো হাল ছেড়ে দিয়েছে।

বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিং-এ জানতে চাওয়া হয়েছিল, যেভাবে সবকিছু স্বাভাবিক নিয়মে চলছে, তাতে করে তারা কি হার্ড ইমিউনিটির কথাই চিন্তা করছেন?

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক নাজমুল হাসান বলেন, হার্ড ইমিউনিটি হতে হলে নির্দিষ্ট সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে টিকা দিতে হবে অথবা তাদের সংক্রমিত হতে হবে। সংক্রমিত হবার পর তাদের শরীরে পর্যাপ্ত অ্যান্টিবডির উপস্থিতি থাকতে হবে।

“আমাদের টিকা কর্মসূচীতে যথেষ্ট উন্নতি করেছি। টিকা কর্মসূচী সফলভাবে চালিয়ে যেতে পারলে হার্ড ইমিউনিটি অবশ্যই অর্জিত হবে,” বলেন অধ্যাপক হাসান।

সরকার বলছে, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী বিধি-নিষেধ জারি করা হয়।

অন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু বিধি-নিষেধ জারি করলেই হবে না, সেটি কার্যকরও করতে হবে।

করনো ভাইরাসের সংক্রমণ বিবেচনা করে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় সশরীরে ক্লাস বন্ধ করে আবারও অনলাইনে ফিরে গেছে। দেশের উচ্চ আদালতও আবারো ভার্চুয়াল কার্যক্রম শুরু করেছে।

বিধি-নিষেধের জন্য সরকারকে পরামর্শ দেয় কোভিড১৯ সংক্রান্ত জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটি।

এই কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মো. শহিদুল্লাহ বলছিলেন, বাংলাদেশে এখন করোনা ভাইরাসের তৃতীয় ঢেউ চলছে। এর মাধ্যমে কি বাংলাদেশে হার্ড ইমিউনিটি অর্জন হবে?

এমন প্রশ্নে অধ্যাপক শহিদুল্লাহ বলেন, “এটা কিন্তু হতেও পারে। এর আগের ওয়েভে একটি বড় সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হয়েছে এবং টিকাও পেয়েছে। ”

“যদি দেখা যায়, আমাদের জনগোষ্ঠীর আশি শতাংশ সংক্রমিত হয়েছে, সবকিছু মিলিয়ে এক সময় হয়তো হার্ড ইমিউনিটিতে যাবে।”

অধ্যাপক শহিদুল্লাহ ধারণা করছেন, ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি থেকে বাংলাদেশে করনো ভাইরাসের সংক্রমণ কমে আসবে।

ছয়মাস আগে বাংলাদেশে যখন করোনা ভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়েছিল, তখন সংক্রমণের হার ৩৪ শতাংশ পর্যন্ত হয়েছিল। তবে হার্ড ইমিউনিটির বিষয়টি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে।

বিপুল জনগোষ্ঠী দফায়-দফায় আক্রান্ত হলেও করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করা যাবে কি না সেটি এখনো পরিষ্কার নয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নুসরাত সুলতানা লিমা বলেন, এভাবে ভাইরাসের বিস্তার হতে থাকলে পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে সেটি বলা মুশকিল।

তিনি বলেন, যারা টিকা নিয়েছেন তারাও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন এবং তাদের মাধ্যমে ভাইরাসের বিস্তারও হচ্ছে।

“এটাকে আসলে হার্ড ইমিউনিটি সঠিকভাবে বলা যায় না। তবে কেউ যদি টিকা নেয় তাহলে তার ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তির ঝুঁকি কমে আসে”

তিনি সতর্ক করে দেন, ভাইরাসের বিস্তার যদি থামানো না হয় তাহলে সেখান থেকে নতুন কোন ভ্যারিয়েন্টের জন্ম হতে পারে।

এই ভ্যারিয়েন্ট দুর্বলও হতে পারে, আবার শক্তিশালীও হতে পারে।

“পরিস্থিতি ভালোও হতে পারে, আবার খারাপের দিকেও যেতে পারে। ভাইরাসের মোটিভ বোঝা কঠিন,” বলেন নুসরাত সুলতানা লিমা।

সরকারের সাথে সম্পৃক্ত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হার্ড ইমিউনিটি সরকারের লক্ষ্য নয়, অন্যদিকে বিধি-নিষেধ মানাতে তেমন কোন তৎপরতাও দেখা যাচ্ছে না।

পরিবহন মালিক এবং ব্যবসায়ীদের কাছে চাপের মুখে বেশ ছাড়ও দেয়া হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা এর পেছনে মূলত অর্থনৈতিক বিষয় জড়িত।

এর আগে একাধিকবার যখন বিধি-নিষেধ জারি করা হয়েছিল, তখনও সেটি মানাতে পারেনি সরকার। কারণ এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতির অধ্যাপক শারমিন মবিন ভুঁইয়া বলেন, অর্থনীতির কথা বিবেচনা করলে সরকারের পক্ষে কোভিড বিধি-নিষেধ নিয়ে কঠোর হবার সুযোগ নেই।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, টিকা দেয়া এবং বিভিন্ন নির্দেশনা দেবার কাজটি তারা করছেন। এগুলো বাস্তবায়নের জন্য সরকারের আরো বিভিন্ন বিভাগ রয়েছে।

তবে যেভাবে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি হচ্ছে তাতে এবার বিষয়টি কোথায় গিয়ে ঠেকবে সেটি অনুমান করা কঠিন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের জন্য।

এসএইচ-০২/২০/২২ (অনলাইন ডেস্ক, সূত্র: বিবিসি)