দক্ষিণ কোরিয়ায় চালু হচ্ছে বাংলাভাষার স্কুল

দক্ষিণ কোরিয়ার মাটিতে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশি স্কুল চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে কোরিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত তরুণরা পাঠদান করবেন।

আগামী প্রজন্মকে নৈতিক মূল্যবোধ, বাংলার স্বাধীনতার ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে প্রযুক্তিতে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলাই তাদের স্বপ্ন বলে জানিয়েছেন।

একটি জরিপে ১১৫ শিক্ষার্থী বাংলা স্কুলে ভর্তির আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। সেখান থেকে উৎসাহিত হয়েই স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনা করে বাংলাদেশ এডুকেশন এন্ড কালচারাল একাডেমি, কোরিয়া নামের একটি সংগঠন।

তারা দক্ষিণ কোরিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে আলোচনা করেন। রাষ্ট্রদূত স্কুল উপদেষ্টামন্ডলীর প্রধান হয়ে তাদের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন।

দক্ষিণ কোরিয়াতে শিক্ষাব্যবস্থা বিশ্বখ্যাত ও গবেষণাপ্রসূত। যে কারণে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা প্রতিনিয়তই সেখানে বাড়ছে। সেই সঙ্গে জীবিকার তাগিদে অনেক বাংলাদেশি ইপিএস (এমপ্লয়মেন্ট পারমিট সিস্টেম) কোরিয়াতে প্রবেশ করছেন। ভিসা পরিবর্তন করে পরিবার নিয়ে কোরিয়াতে স্থায়ী বসবাসের সুযোগও পাচ্ছেন বাংলাদেশিরা।

সময়ের ব্যবধানে এসব মানুষ নিজেদের মেধা ও শ্রম দিয়ে কোরিয়াতে ভালো অবস্থান তৈরি করেছেস। পরিবারসহ কোরিয়াতে বসবাস করা বাংলাদেশির সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে।

রাজধানী সিউলে বিদেশি বিদ্যালয় ২১টির বেশি। এসব স্কুলের বেশিরভাগেই ইংরেজিভাষায় লেখাপড়া করানো হয়। কোরিয়াতে মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা থাকলেও বাংলা বা ধর্মীয় শিক্ষার প্রাতিষ্ঠানিক কোনো ব্যবস্থা নেই।

কোরিয়ার হানিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মোনোয়ার হোসেন সময় সংবাদকে বলেন, কোরিয়াতে কোনো বাংলাদেশি স্কুল না-থাকায় এতে ছেলে-মেয়েরা ভিনদেশি স্কুলে লেখাপড়া করে বিদেশি ভাষায় আকৃষ্ট হচ্ছে। তারা বাংলাদেশের কৃষ্টি-কালচার ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃতি সম্পর্কে অজানাই থেকে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, কোরিয়াতে এই বাংলা স্কুল আমাদের সন্তানদের বাংলাভাষা শিক্ষার পাশাপাশি দেশীয় সংস্কৃতি-সভ্যতা সম্পর্কে জানতে ভূমিকা পালন করবে।

স্কুল পরিচালনা পরিষদের সদস্যরা জানিয়েছেন, কয়েকদিনের মধ্যেই প্রথমে অনলাইনে ক্লাস চালু হবে। আমরা শুধু বাংলাভাষাই নয়, পুরো বাংলাদেশকেই আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে উপস্থাপন করতে চাই।

স্কুলে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের পাঠ্যক্রম অনুসরণ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে কোরিয়া সরকারের পাঠদানের পদ্ধতিও বিবেচনায় থাকছে।

পরবর্তী প্রজন্ম এই স্কুলের মাধ্যমে বাংলাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে এবং বাংলা বর্ণমালা পড়তে লিখতে শিখবে। শিশুদের অভিভাবকরাও নিজ সন্তানদের মাতৃভাষা শেখাতে বেশ আগ্রহী এবং তাদের দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত ইতিবাচক।

বাংলাদেশি ছেলে মেয়েদের বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্মীয় রীতিনীতি ও অনুশাসন শিক্ষাদান, প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়ন এবং উভয় দেশের সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখতে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন স্কুল পরিচালকরা।

এসএইচ-১৪/০২/২২ (অনলাইন ডেস্ক)