করোনায় বিশ্ব অস্থিরতার মাঝেও ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ

করোনা স্থবিরতার পাশাপাশি বিশ্ব অস্থিরতার মাঝেও অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। চলতি অর্থ বছরের প্রথম দশ মাসেই রফতানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়েছে। যা প্রায় ৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এরমধ্যে সাড়ে ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয়ের মাধ্যমে তৈরি পোশাক খাত ৮১ শতাংশ ভূমিকা রেখেছে।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর সব শেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত প্রথম ১০ মাসে বাংলাদেশের ৪ হাজার ৩৩৪ কোটি ৪৩ লাখ মার্কিন ডলার রফতানি আয় হয়েছে। পুরো অর্থ বছরে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ৩৫০ কোটি মার্কিন ডলার। যা দুইমাস আগেই অর্জিত হয়েছে।

তবে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে যথারীতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে তৈরি পোশাক খাত। খাতটি ৩৫ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে। গত বছরের তুলনায় ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাড়তি আয়ের প্রেক্ষিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে রেকর্ড ৩৬ শতাংশ।

গেল ৬ থেকে ৭ মাসে বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে অর্ডার এসেছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহসভাপতি রাকিবুল ইসলাম বলেন, এ অর্ডারগুলো অন টাইমে শিপমেন্ট করার মাধ্যমেই আমরা আমাদের ৪০ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের পরও ৪৩ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত অর্জন করতে পারব। গেল ৪০ বছরের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েই আমরা করোনাকালীন মালিক ও শ্রমিকরা দিনরাত পরিশ্রম করে বাংলাদেশের মূল অর্থনৈতিক চালিকা শক্তিটিকে চালু রেখেছি।

বিজিএমইএ এর প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, করোনার সময়ে সব জায়গায় যখন লকডাউন, সে সময়ে আমরা আমাদের ইন্ডাস্ট্রি চালু রেখেছি। সে সময়ে আমাদের পোর্ট কর্তৃপক্ষ আমাদের সাপোর্ট দিয়েছে, আমাদের সরকার আমাদের সাপোর্ট দিয়েছে। আমাদের শ্রমিকরা তাদের জীবন বাজি রেখে কাজে যোগ দিয়েছেন। যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে বাংলাদেশ এখন সক্ষম। যে জন্য বায়ার আমাদের দিকে আসছে।

শুধু তাই নয়, অর্থ বছরের বাকি দুই মাসে আরও অন্তত ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানি আয়ের লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে দেশের গার্মেন্টস কারখানাগুলো।

ব্যবসায়ীদের মতে, ২০২০ সাল থেকে দেশের গার্মেন্টসের পাশাপাশি অন্যান্য শিল্প কারখানায় ‍উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে ঝুঁকি নিয়েছিল বাংলাদেশ। বিশেষ করে করোনার তিন ঢেউয়ে চলমান লকডাউনে বিশেষ ব্যবস্থায় খোলা রাখা হয়েছিল গার্মেন্টস শিল্প। তারই প্রতিদান মিলেছে রফতানি আয় বৃদ্ধিতে। তবে এ হার ধরে রাখতে বিদ্যমান সমস্যাগুলো দূরীকরণের কথা বলছেন ব্যবসায়ীরা। অপরদিকে রফতানি হার ধরে রাখতে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। অর্থনীতির গতি সচল রাখতে লকডাউনের সময়ে চট্টগ্রাম বন্দর সচল রাখা হয়েছিল।

এবিষয়ে বিজিএমইএ এর সাবেক প্রথম সহসভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, প্রত্যেকটি ডিপার্টমেন্টের রফতানি খাতকে সার্বিক সহযোগিতা করতে হবে। এখানে একদিন পেছানোর বা দুই দিন দেরি করার কোনো সুযোগ নেই। আমরা যদি এ জায়গাগুলোকে চিহ্নিত করতে পারি, আমরা আমাদের ক্রেতাদের যদি বুঝাতে পারি যে আমাদের দেশে কোনো আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নেই, তাহলে আমাদের প্রতি তাদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পাবে এবং ব্যবসার গতিও বাড়বে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, আমাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রক্রিয়া চলছে এবং এটি চলবে। এছাড়া আমরা ইয়র্ড স্পেস অনেক বাড়িয়েছি।

উল্লেখ্য, ২০২০-২১ অর্থ বছরে বাংলাদেশের রফতানি আয় ছিল ৩৮ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে গার্মেন্টস খাতে ৩১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় ছিল।

এসএইচ-২৭/১২/২২ (অনলাইন ডেস্ক, সূত্র : সময়)