ঢাকা থেকে দার্জিলিং, শিলিগুড়ি যাতায়াত শুরু করবে মিতালী এক্সপ্রেস

দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর অবশেষে ঢাকা থেকে সরাসরি দার্জিলিং ও শিলিগুড়ি ট্রেন ভ্রমণের পথ চালু হতে যাচ্ছে। পর্যটকদের জন্য এই পথটি ভারত যাতায়াতের জন্য অত্যন্ত সহজ হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া নামের আন্তঃদেশি মিতালী এক্সপ্রেসের ট্রেনের বাঁশি বাজতে যাচ্ছে আগামী ১ জুন।

ট্রেনটির প্রথম যাত্রা শুরু হবে ভারতের পশ্চিমবাংলার উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি শহরের নিউ জলপাইগুড়ি (এনজিপি) স্টেশন হতে। মিতালী এক্সপ্রেস ১ জুন ভারতের কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব ও বাংলাদেশের রেলমন্ত্রী অ্যাড: নুরুল ইসলাম সুজন অনলাইনের মাধ্যমে উদ্বোধনের পর নিউ জলপাইগুড়ি থেকে যাত্রা শুরু করবে।

বাংলাদেশের নীলফামারীর চিলাহাটি ও ভারতের হলদিবাড়ি রেলপথে ১৯৬৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দার্জিলিং মেইল ট্রেনটি চলাচল করেছিল। এরপর পাক ভারত যুদ্ধের সময় তা বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ প্রায় ৫৮ বছর পর এই রেলপথে পুনরায় যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলকে কেন্দ্র করে দুই বাংলায় এখন সাজসাজ রব।

জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়েতে ঢাকা থেকে পশ্চিমবঙ্গের নিউ জলপাইগুড়ি রুটে ট্রেন চলাচল নিয়ে প্রস্তুতি চলছে। ভিসা ইমিগ্রেশন ও কোভিড সংক্রান্ত প্রটোকল চূড়ান্ত করেছে উভয় দেশ। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ট্রেনে যাতায়াতের জন্য ভিসাসংক্রান্ত ছাড়পত্র দেওয়ায় বাংলাদেশস্থ ভারতীয় দূতাবাস ও ভারতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস ভিসা দেওয়া শুরু করেছে।

এই ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাবে বাংলাদেশ অংশে ঢাকার কমলাপুর, চট্টগ্রাম, নীলফামারীর চিলাহাটি স্টেশনে। ভারতের অংশে টিকিট মিলবে কলকাতার ফেয়ারলি প্যালেস ও নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে। ঢাকা থেকে নিউ জলপাইগুড়ি পর্যন্ত মিতালী এক্সপ্রেসের রেলপথ দূরত্ব ৫৯৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে ভারতের অংশে ৬৯ কিলোমিটার।

মিতালী এক্সপ্রেস বাংলাদেশের ঢাকা থেকে ছাড়বে সপ্তাহে দুদিন সোমবার ও বৃহস্পতিবার আর ভারতের নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে ছাড়বে রবিবার ও বুধবার। ট্রেনটি ভারতের নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ছাড়বে দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে, ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে পৌঁছাবে রাত ১০টা ৩০ মিনিটে। একইভাবে ঢাকা থেকে ছাড়বে রাত ৯টা ৫০ মিনিটে, ভারতে পৌঁছাবে পরের দিন সকাল ৭টা ৫ মিনিটে।

ট্রেনটি দিনের বেলা ৪৫৬ আসন নিয়ে এবং রাতে ৪০৮ আসন নিয়ে চলাচল করবে। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে হলদিবাড়ী হয়ে নীলফামারীর চিলাহাটি সীমান্ত পার হবে মিতালী। এরপর বাংলাদেশের চিলাহাটি, নীলফামারী, পার্বতীপুর, হিলি, সান্তাহার, নাটোর, ঈশ্বরদী বাইপাস ও বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়ে ট্রেনটি ঢাকায় পৌঁছাবে। একইভাবে ট্রেনটি নিউজলপাইগুড়ি পৌঁছাবে।

মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনে থাকছে ১০টি তাপানুকূল কোচ। এর মধ্যে চারটি করে মোট আটটি এসি ফার্স্ট ক্লাস ও এসি চেয়ারকার কোচ থাকবে। বাকি দুটি জেনারেটার ও ব্রেকআপ ভ্যান থাকবে। এসি বাথের জন্য নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট পর্যন্ত ভ্রমণকরসহ ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ হাজার ৯০৫ টাকা, এসি চেয়ারকারের ভাড়া ৩ হাজার ৮০৫ টাকা। ৫ বছর পর্যন্ত অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য মূল ভাড়ার ৫০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়েছে।

মালামাল বহনের সম্ভাব্য খরচে রয়েছে ৫ বছরের কম বয়সী যাত্রীর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২০ কেজি ওজনের মালামাল বিনামূল্যে বহন করা যাবে। ২০ কেজির উপরে কিন্তু ৩৫ কেজির নিচে ওজন হলে প্রতি কেজিতে ২ ডলারের সমপরিমাণ টাকা এবং ৩৫ কেজির ওপরে ওজন হলে প্রতি কেজিতে ১০ ডলারের সমপরিমাণ টাকা অতিরিক্ত যুক্ত হবে।

আবার প্রাপ্তবয়সের যাত্রীর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩০-৩৫ কেজি ওজনের মালামাল বিনামূল্যে বহন করা যাবে। এর বেশি ওজনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃক নির্ধারিত হারে অতিরিক্ত খরচ যুক্ত হবে। ২০২১ সালের ২৭ মার্চ এই ট্রেন সার্ভিস উদ্বোধন করেছিলেন দুদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি। উদ্বোধন হয়ে থাকা ট্রেনটি কোভিড-১৯ এর কারণে চলাচল করতে পারেনি। পহেলা জুন এবারই প্রথম যাত্রী পরিবহন করতে যাচ্ছে ট্রেনটি। ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন কার্যালয় থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (পশ্চিম) অসীম কুমার তালুকদারের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, ভিসাসহ অন্যান্য যেসব জটিলতা ছিল তার অবসান হওয়ায় ঢাকা-নিউজলপাইগুড়ি ট্রেন চলাচলের সব প্রস্তুতি আমরা গ্রহণ করেছি। ১ জুন থেকে ট্রেনটি চলাচল করবে এ ব্যাপারে রেলমন্ত্রী নিশ্চিত করেছেন। যদিও এখানো অর্ডার হাতে আসে নাই, তরপরও ১ জুন থেকেই মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনটি চলাচল শুরু করবে এটি প্রায় নিশ্চিত।

বাংলাদেশে রেলের কোচ সংকটের কারনে আপাতত মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনটি ভারতীয় রেকে (কোচ) চলাচল করবে। মিতালী এক্সপ্রেস এর নম্বর করা হয়েছে ভারত থেকে আসার সময় ৩১৩১ ও ঢাকা থেকে যাওয়ার সময় ৩১৩২।

তিনি আরও জানান মিতালীর পাশাপাশি করোনাভাইরাসের কারণে দুই বছরের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর ২৯ মে চালু হবে ঢাকা কলকাতা মৈত্রী ও খুলনা-কলকাতা বন্ধন এক্সপ্রেস। করোনাভাইরাসের কারণে মৈত্রী ও বন্ধন এক্সপ্রেস ২০২০ সালে ১৫ মার্চ থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর করোনার সংক্রমণ মাথায় নিয়ে উদ্বোধন হওয়া মিতালী যাত্রাই শুরু করতে পারেনি। সব মিলিয়ে টানা দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ট্রেন চলাচল।

করোনা সংক্রমণ কমে আসার পর গত ২২ ফেব্রুয়ারি ইন্ডিয়ান রেলওয়েকে চিঠি দেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে। সেখানে বাংলাদেশ রেল চলাচলের জন্য প্রস্তুত বলে জানানো হয়। ওই চিঠির জবাব ১৭ মে পাঠায় ইন্ডিয়ান রেলওয়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই রেলগুলো ফের চলাচলের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

এসএইচ-১৩/২৪/২২ (অনলাইন ডেস্ক, সূত্র : সময়)