সরকারি খরচে ইউরোপ সফর থেকে ফিরেই অবসরে সচিব

চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার ঠিক আগের দিন ইউরোপে একটি শিক্ষা সফর শেষ করে দেশে ফিরেছেন একজন জ্যেষ্ঠ সচিব।

স্থানীয় সরকার বিভাগের (এলজিডি) জ্যেষ্ঠ সচিব হেলাল উদ্দিন আহমেদ সরকারি খরচে নেদারল্যান্ডস ও স্পেন সফর শেষে গত শনিবার দেশে ফেরেন। পরের দিন রোববারই ছিল তার কর্মক্ষেত্রের শেষ দিন। এরপর তিনি চলে যান এলপিআরে (অবসর গ্রহণের প্রস্তুতিমূলক ছুটি)।

প্রশ্ন ওঠে, একজন আমলা হিসেবে কর্মজীবনের শেষে এই শিক্ষাসফর সরকারের কাজে আসবে কীভাবে? তার ১০ দিনের এই সফরের সম্পূর্ণ খরচ বহন করা হয়েছে ‍দুটি সরকারি প্রকল্পের তহবিল থেকে। অবসরের দ্বারপ্রান্তে থাকা আমলাদের শিক্ষা সফরকে অর্থের অপচয় বলে অভিহিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘এটা অনৈতিক ছিল। তিনি এটা করতে পারেন না।’

অভিজ্ঞরাই জ্যেষ্ঠ সচিব হন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘তার তো শিক্ষা সফরের দরকার নেই। এটা নতুন কর্মকর্তাদের জন্য প্রয়োজন, যাতে তারা সেই শিক্ষা নিয়ে দেশের জন্য অবদান রাখতে পারেন।’

হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমার বয়স খুব বেশি না। অবসর যেহেতু নিয়েছি, আমার এই অভিজ্ঞতা যে কোনো খাতে কাজে লাগতে পারে। ওয়াসা, এলজিইডিসহ কত সংস্থাই তো রয়েছে। তারা বিভিন্ন প্রকল্পে আমাদেরকে কাজে লাগাতে পারে।’

হেলাল উদ্দিন আহমেদ ১৯৮৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন এবং ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনের সচিব ছিলেন।

শিক্ষা সফর

এই শিক্ষা সফরে যাওয়া অপর ৬ জনের মধ্যে ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।

মন্ত্রণালয়ের নথি অনুযায়ী, তারা ১১ থেকে ২০ মে নেদারল্যান্ডসে ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ এবং স্পেনে গ্লোবাল ওয়াটার সামিটে অংশ নিয়েছিলেন।

গত ১৭-১৮ মে গ্লোবাল ওয়াটার সামিট অনুষ্ঠিত হয়। নেদারল্যান্ডস সফরটি ২৬-২৭ মে ঢাকায় অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ সম্মেলনের প্রস্তুতির অংশ ছিল।

তবে, ঢাকায় প্ল্যান কনফারেন্সে অংশ নিচ্ছেন না হেলাল উদ্দিন আহমেদ।

ঢাকার খাদ্য ব্যবস্থা (ডিএফএস) প্রকল্প, ইমার্জেন্সি মাল্টি সেক্টর রোহিঙ্গা ক্রাইসিস রেসপন্স প্রজেক্ট (ইএমসিআরপি) এবং সিটি গভর্ন্যান্স প্রজেক্টের অর্থ থেকে এই শিক্ষা সফরের খরচ বহন করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর এলাকার জন্য একটি নিরাপদ ও টেকসই খাদ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য ডিএফএস প্রকল্পের জন্য জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থাকে ১২ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছে নেদারল্যান্ডস। বিশ্বব্যাংকের দেওয়া ১৬৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ইএমসিআরপি প্রকল্পের লক্ষ্য কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের মৌলিক সেবা ও সামাজিক স্থিতিস্থাপকতা প্রদান করা। আর জাইকার অর্থায়নে ২ হাজার ৯০৪ কোটি টাকার সিটি গভর্নেন্স প্রকল্পের লক্ষ্য নগর অবকাঠামো উন্নয়ন।

এই দলটি খাদ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে গবেষণায় বিখ্যাত নেদারল্যান্ডসের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিল জানিয়ে হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নে প্রয়োজন হবে বিধায় আমরা সেখানে জলাবদ্ধতা বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে গিয়েছিলাম।’

স্পেনের ওয়াটার সামিট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় ভবিষ্যতে আমাদের পানি কিনতে হবে। কীভাবে পানি বাজারজাত করা যায় তা জানার জন্য আমরা শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিয়েছি।’

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অবসরের আগে হেলাল উদ্দিন আহমেদের এই সফরটি কোনো উপহারের অংশ কি না সেই প্রশ্ন আসতেই পারে।

যে ৩টি প্রকল্প থেকে উচ্চ পর্যায়ের এই প্রতিনিধি দলের ভ্রমণ ব্যয় বহন করা হয়েছে সেগুলোর সঙ্গে সফরের ঘোষিত উদ্দেশ্যের খুব কমই সম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটি জনস্বার্থে নেওয়া প্রকল্প তহবিল ব্যবহারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতায় প্রশ্ন তৈরি করে।’

এসএইচ-০৪/২৫/২২ (অনলাইন ডেস্ক, সূত্র : দ্য ডেইলিস্টার)