ঘরে বসে অর্ডার করলেই পৌঁছে যায় মাদক

ঢাকার অবাধে মিলছে সব ধরনের মাদক। এক সময় স্পটভিত্তিক মাদক বিক্রি হলেও এখন ছড়িয়ে গেছে সবখানে। তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনলাইনেই চলছে মাদক বিক্রির হিড়িক। ঘরে বসে অর্ডার করলেই পৌঁছে যাচ্ছে মাদক।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সরেজমিনে দেখা যায়, প্রকাশ্যে এক কিশোর ফেনসিডিলের নতুন চালান আসায়, সেটি গুনে দেখছে। এ ছাড়াও রাজধানীর খিলগাঁওয়ে পরিচয় গোপন করতে বোরখা পরে মাদক বিক্রি করতে দেখা যায় এক নারীকে।

এদিকে মোহাম্মদপুরের বিহারী ক্যাম্পে দিনে-দুপুরে বিক্রি হয় ইয়াবা ও গাঁজা। দিনের ২৪ ঘণ্টাই এখানে যে কেউ চাইলে ইয়াবা কিনতে পারে। ক্যাম্পের অলিগলিতে মেলে সব ধরনের মাদক।

পিছিয়ে নেই কারওয়ান বাজারও। তবে আগের চেয়ে এখানে মাদক বিক্রি কমলেও সেটি বন্ধ হয়নি। সময় সংবাদের এই প্রতিবেদক পরিচয় গোপন করে মাদক কিনতে গেলে সন্দেহ হয় বিক্রেতাদের। পরে আশ্বস্ত করা হলে মেলে ইয়াবা ও গাঁজা।

যদিও পুলিশ বলছে ভিন্ন কথা। বাজারটি শিল্পাঞ্চল ও তেজগাঁও থানার আওতায় পড়ায়, দুই থানার মাঝে চলে দোষারোপের খেলা।

পুলিশ জানায়, এ এলাকায় মাদক কিনতে পারলে ৫শ’ টাকা পুরস্কৃত করা হবে। অপর দিকে বিক্রেতারা বলছে, শিল্পাঞ্চল থানা পয়সা খায় না, খায় তেজগাঁও থানা।

দেশে সব ধরনের মাদক ঢোকে সীমান্ত পথে। এর মধ্যে অন্যতম কুমিল্লা। সীমান্ত লাগোয়া বাড়িগুলোতে সন্ধ্যা হলে জমে নেশার আসর। ঘরে ঢুকে মাদক সেবনের পর সটকে পড়েন মাদকাসক্তরা। তেমনি একটি সীমান্তবর্তী এলাকা কুমিল্লার সুয়াগাজী।

বেশিরভাগ সময় গভীর রাতে কাঁটাতার গলে মাদক ঢোকে এ পাড়ে। পরবর্তীতে নানা কৌশলে সেই মাদক ঢুকছে ঢাকায়।

সামনে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন। তাই আইন শৃঙ্খলাবাহিনী এই জেলায় খুব তৎপর। যে কারণে ইদানিং কুমিল্লা থেকে ঢাকায় মাদক ঢোকা কমে গেছে।

তবে সেই চাহিদা পূরণ করছে সীমান্তের বাকি জেলাগুলো দিনাজপুরের হিলি সীমান্ত। পাইকারি বা খুচরা দুই পর্যায়েই মাদক কেনা যায় হিলিতে।

নীলফামারির সীমান্ত লাগোয়া গ্রামগুলোর যেখানে সেখানে দেখা যায় ফেনসিডিলের বোতল।

পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, কোস্টগার্ড এবং মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের গত ৫ বছরের পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছর এক লাখ করে বাড়ছে মাদক মামলায় আসামির সংখ্যা। কিন্তু কমছে না মরণ নেশার ব্যবহার।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের উপপরিচালক আহসানুর রহমান জানান, মাদকের বড় বাজার হচ্ছে ঢাকা। আগে স্পটভিত্তিক মাদক বিক্রি হতো। তবে মার্কেট চলে এসেছে অনলাইনে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে বিক্রি হচ্ছে।

পুলিশের অসাধু কিছু সদস্যও জড়িত মাদকের সঙ্গে। সম্প্রতি পুলিশের শতাধিক সদস্য এ কারণে চাকরি হারিয়েছেন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, দু’একজন পুলিশ সদস্য মাদক বিক্রির চেষ্টায় চাকরি হারিয়েছেন। এরপর আমরা গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করি। ১শ’র ওপরে পুলিশ সদস্য ডোপ টেস্টে পজেটিভ হওয়ায় চাকরি হারিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকে, তাহলে এর চেয়ে তো আর দুর্ভাগ্যের কিছু নাই।

ডিএমপি কমিশনার বলছেন, শুধু রাজধানীতেই প্রতিদিন মাদক মামলা হয় ৫০ থেকে ৬০টি। একই অপরাধে প্রতিদিন আটকের সংখ্যাও অর্ধশত।

ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, দেশে কারাগারে যত আসামি আছে তার মধ্যে প্রায় ৮০ ভাগ কয়েদিই মাদকের সঙ্গে জড়িত।

দেশে মাদকসেবীর সংখ্যা ৭০ লাখ। কিন্তু বাস্তবতা হলো সারা দেশে সরকারি বেসরকারি মিলে নিরাময় কেন্দ্রে শয্যা সংখ্যা ৭ হাজারও নেই।

এসএইচ-০৮/২৮/২২ (অনলাইন ডেস্ক, সূত্র : সময়)