বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ে রাত আটটার পর দোকানপাট বন্ধে

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের লক্ষ্যে রাত আটটার পর থেকে দোকানপাট বন্ধের নির্দেশনা কার্যকর হতে যাচ্ছে সোমবার থেকে।

এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি সাশ্রয় করা সম্ভব বলে ধারণা করছেন জ্বালানি খাতের সাথে সংশ্লিষ্টরা।

গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এই নির্দেশনা জারি করা হয়। বিশ্বব্যাপী জ্বালানির দাম বাড়ার প্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের প্রয়োজনীয়তা থেকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ঐ নির্দেশনায়।

রাত আটটার পর কোন ধরণের দোকান বা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা যাবে তা ঐ নির্দেশনায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ না করা হলেও নির্দেশনাটিতে ‘বাংলাদেশের শ্রম আইন ২০০৬-এর ১১৪ ধারার বিধানের প্রতিপালন নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা’ নিতে বলা হয়েছে। সাধারণ পরিস্থিতিতে কোন ধরণের দোকান কতক্ষণ পরিচালিত হবে তা নির্ধারণ করে দেয়া হর্য়েছে শ্রম আইনের ১১৪ ধারায়।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি কর্তৃপক্ষ ধারণা করছে, এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে প্রতিদিন অন্তত দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা সম্ভব।

পাশাপাশি, ঐ পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য যে পরিমাণ জ্বালানি প্রয়োজন হত, সেই জ্বালানির খরচও সশ্রয় হবে বলে মন্তব্য করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ মন্ত্রণালয়ের গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ারসেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন।

হোসাইন বলেন, “আমাদের পর্যবেক্ষণে আমরা দেখেছি, সন্ধ্যা ছয়টার পর বিদ্যুতের চাহিদা তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট বেড়ে যায়। বিদ্যুতের চাহিদার এই পরিবর্তন মূলত হয় সন্ধ্যার পর বাতি জ্বালানোর কারণে।”

“সন্ধ্যার পর বিদ্যুতের এই বাড়তি চাহিদা যে শুধু দোকানপাট চালু থাকার জন্য তৈরি হয় তা নয়, মানুষের ঘরবাড়ির বাতিও একটি কারণ। তবে আমাদের হিসেবে, দোকানপাট বন্ধ থাকলে প্রায় অতিরিক্ত চাহিদার ৫০ শতাংশ বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা সম্ভব হবে।”

হোসাইনের মতে এর ফলে প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা সম্ভব।

সন্ধ্যার পর বিদ্যুতের অতিরিক্ত চাহিদা সামাল দিতে যেই বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হয়, তার উৎপাদন খরচও অনেক বেশি।

“আর এই বাড়তি চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুতের যোগান দিতে আমাদের তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালাতে হয়, যার ফলে বিদ্যুতের দামও অনেকগুণ বেড়ে যায়”, বলেন মি. হোসাইন।

“গ্যাস ব্যবহার করে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ পড়ে তিন থেকে চার টাকা, যেখানে ডিজেল চালিত বিদ্যুতের দাম পড়ে প্রতি ইউনিট ত্রিশ টাকারও বেশি। আবার ফার্নেস অয়েল চালিত বিদ্যুতের দাম পড়ে পনের থেকে বিশ টাকা।”

সন্ধ্যার পর থেকে দোকানপাট বন্ধ থাকলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের এই অতিরিক্ত খরচও সাশ্রয় করা সম্ভব হবে বলে মন্তব্য করেন মি. হোসাইন।

বাংলাদেশের শ্রম আইন ২০০৬-এর ১১৪ ধারা অনুযায়ী, কোন ধরনের দোকানপাটই রাত আটটার পর খোলা রাখা যাবে না।

তবে ঐ ধারারই ৫ নম্বর উপধারা অনুযায়ী কিছু দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে না।

সেগুলো হল:

ডক, জেটি, স্টেশন, বিমান বন্দর ও পরিবহন সার্ভিস টার্মিনাল।

তরি-তরকারী, মাছ-মাংস, দুগ্ধ জাতীয় সামগ্রী, রুটি, পেস্ট্রি, মিষ্টি ও ফুলের দোকান

চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দোকান।

দাফন ও অন্স্যেষ্টিক্রিয়া সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দোকান।

তামাক, সিগারেট, বরফ, খবরের কাগজ ও সাময়িকীর দোকান ও খাবার বিক্রির খুচরা দোকান।

পেট্রোল পাম্প ও মোটর গাড়ির সার্ভিস স্টেশন।

নাপিত ও কেশ প্রসাধনীর দোকান।

যে কোন ময়লা নিস্কাষন অথবা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা।

শক্তি, আলো বা পানি সরবরাহকারী যে কোন শিল্প বা ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান।

ক্লাব, হোটেল, রেস্তোরা, খাবার দোকান, সিনেমা ও থিয়েটার।

এসএইচ-১০/২০/২২ (অনলাইন ডেস্ক, সূত্র : বিবিসি)