স্বপ্ন পূরণে সাহসী যাত্রা ১৯৯৮-২০২২

১৯৯৮ সালে পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার। কিন্তু সেসময় কাজ শুরু হতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে পুনরায় পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়।

বিশ্ব ব্যাংক প্রকল্পে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ঋণ সহায়তার প্রস্তাব নিয়ে আসে। কিন্তু তাদের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় পদ্মা সেতু প্রকল্পের বাস্তবায়ন বিলম্বিত হতে থাকে।

২০১০ সালের জুলাইয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য প্রাক-যোগ্যতা দরপত্র মূল্যায়ন করে পাঁচটি দরদাতা প্রতিষ্ঠান বাছাই করে তা বিশ্ব ব্যাংকের অনাপত্তির জন্য পাঠায় সরকার।

কিন্তু সংস্থাটি তা ঝুলিয়ে রাখার একপর্যায়ে পদ্মা সেতুতে ‘সম্ভাব্য দুর্নীতির’ অভিযোগ আনে বিশ্ব ব্যাংক। দীর্ঘ টানাপোড়েন শেষে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্ব ব্যাংককে ‘না’ বলে দেয়।

সেই টানাপড়েনের জেরে তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে সরে যেতে হয়। তখনকার সেতু সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে দুদকের মামলায় কারাগারেও যেতে হয়। প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমানসহ অভিযোগ তোলা হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের একাধিক সদস্যের বিরুদ্ধেও।

অভিযোগের সত্যতা না থাকায় সেই মামলায় পরে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় দুদক। কানাডার আদালতেও দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। তবুও দাতা সংস্থাগুলো এ সেতুর অর্থায়নে ফিরে আসেনি।

শেষ পর্যন্ত নকশা অপরিবর্তিত রেখে নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয় সেই বিপুল কর্মযজ্ঞ। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে মূল সেতুর নির্মাণ ও নদী শাসন কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে বসানো হয় প্রথম স্প্যান। মোট ৪২টি পিলারে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যান বসিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর মূল কাঠামো তৈরি হয়।

কিন্তু মাঝে ২২টি খুঁটির নিচে নরম মাটি পাওয়া গেলে নকশা সংশোধনের প্রয়োজন হয়। পরে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নকশা সংশোধন করে পাইল বাড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেয়। তাতে বাড়তি সময় লেগে যায় প্রায় এক বছর।

এরপর করোনাভাইরাস মহামারী আর বন্যার মধ্যে কাজের গতি কমে যায়। সব বাধা পেরিয়ে অক্টোবরে বসানো হয় ৩২তম স্প্যান। এরপর বাকি স্প্যানগুলো বসানো হয়ে যায় অল্প সময়ের মধ্যেই।

মূল সেতু নির্মাণের কাজটি করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি কোম্পানি সিনোহাইড্রো করপোরেশন। দুটি সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ করেছে বাংলাদেশের আবদুল মোমেন লিমিটেড।

সিনোহাইড্রো করপোরেশনই পদ্মা সেতুর জন্য নদী শাসনের কাজ করছে। গত নভেম্বর পর্যন্ত সে কাজের ৭৬ শতাংশ শেষ হয়েছে। সব মিলিয়ে নভেম্বর পর্যন্ত পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ ৮২ দশমিক ৫০ শতাংশ শেষ হয়েছিল।

৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকার এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে মোংলা বন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দরের সঙ্গে রাজধানী এবং বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। তাতে মোট দেশজ উৎপাদন এক দশমিক দুই শতাংশ বাড়বে এবং প্রতি বছর শূন্য দশমিক ৮৪ শতাংশ হারে দারিদ্র্য কমবে বলে সরকার আশা করছে।

সেতু নির্মাণকাজের ধাপে ধাপে নানা প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নির্মাণ করা হয়েঠে এ সেতু। বাংলাদেশের সক্ষমতার এই মহা-অর্জন আজ আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব। বাংলাদেশের সাহসের দৃশ্যমান প্রতীক।

এসএইচ-২১/২৪/২২ (অনলাইন ডেস্ক)