জ্বালানি তেলের দাম কোন দেশে কত?

দেশের বাজারে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম এক লাফে ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে প্রতি লিটার ১১৪ টাকা উঠে গেছে। একই সঙ্গে পেট্রোলের দাম ৫১ দশমিক ১৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩০ টাকায়। এছাড়া অকটেনের দাম ৫১ দশমিক ৬৮ শতাংশ বাড়িয়ে লিটার প্রতি ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। যা এরইমধ্যে বাড়তে থাকা নিত্যপণ্যে বাজারে এ নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সরকার বলছে, বৈশ্বিক জ্বালানি তেলের বাজার বিবেচনায় তেলের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। তাহলে বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জ্বালানি তেলের দাম কত?

করোনা মহামারির ধাক্কা সামালে বৈশ্বিক অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের আগের গত ফেব্রুয়ারি মাসে শুরু হওয়া ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের দরুণ বিশ্ব অর্থনীতি আরও এক ধাপ পিছিয়ে যায়। কেননা, বিশ্বের অন্যতম তেল রফতানিকারক দেশ রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় সরবরাহ ঘাটতি দেখা দেয়। ফলে অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়তে থাকে। এ বছরের শুরুর দিকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ১২০ ডলারের ওপরে উঠে যায়।

তবে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা কমে ১০০ ডলারের নিচে নেমেছে। শুক্রবার আন্তর্জাতিক বাজারে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ১০ সেন্ট বা শূন্য দশমিক ১ শতাংশ কমে ব্যারেলপ্রতি ৯৪ দশমিক শূন্য ২ ডলারে নেমে গেছে। এছাড়া ইউএস ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের ক্রুডের দাম ৬ সেন্ট কমে ব্যারেলপ্রতি ৮৮ দশমিক ৪৮ ডলারে ঠেকেছে।

এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৯৩ দশমিক ৮১ ডলারে নেমে আসে। যা ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক হামলার পর সর্বনিম্ন।

অপরদিকে প্রতিবেশি দেশ ভারতের কলকাতায় প্রতি লিটার অকটেনের দাম ১০৬ রুপি বা ১৩৭ টাকা ৮০ পয়সা। একই সঙ্গে কলকাতায় পেট্রোলের বাজারমূল্য লিটার প্রতি ১০৫ রুপি বা ১৩৬ টাকা ৫০ পয়সা। ডিজেলের দাম ৯২ দশমিক ৭১ রুপি বা ১২০ টাকা ৫২ পয়সা।

রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগে দেশটিতে প্রতি লিটার জ্বালানি তেলের দাম ১০ থেকে ১২ রুপি কম ছিল। কিন্তু ইউক্রেন রাশিয়া সংঘাত শুরুর পর এক ধাক্কায় সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম ১০ থেকে ১২ রুপি করে বেড়ে যায়।

বৃহস্পতিবার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, ভারতের মুম্বাইতে প্রতি লিটার পেট্রোলের দাম ১০৬ দশমিক ৩১ রুপি, বা ১২৬ টাকা ৪৪ পয়সা এবং ডিজেলের দাম ৯৪ দশমিক ২৭ রুপি বা ১১২ টাকা ১২ পয়সা। এছাড়া দিল্লিতে প্রতি লিটার পেট্রোলের দাম ৯৬ দশমিক ৭২ রুপি, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১১৫ টাকা শূন্য ৩ পয়সা এবং ডিজেলের দাম ৯৪ দশমিক ২৭ রুপি, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা পরিমাণ ১১২ টাকা ১২ পয়সা।

এদিকে দেউলিয়া হওয়া শ্রীলঙ্কা ঘাটতির মধ্যেই গেল ১৮ জুলাই জ্বালানি তেলের দাম কমিয়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইকোনমিকস টাইমসের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সিলন পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (সিপিসি) এবং লঙ্কা ভারতীয় তেল কর্পোরেশন জ্বালানির খুচরা মূল্য কমিয়েছে।

এ সময় এক লিটার অকটেন ৯২ পেট্রোলের দাম ২০ রুপি কমিয়ে ৪৫০ রুপি নির্ধারণ করা হয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ১১৮ টাকা ৩৭ পয়সা। অকটেন ৯৫ পেট্রোলের দাম ১০ রুপি কমিয়ে ৫৪০ রুপি নির্ধারণ করা হয় (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৪২ টাকা শূন্য ৪ পয়সা)। এছাড়া ডিজেলের দাম লিটার প্রতি ২০ রুপি কমে ৪৪০ রুপিতে নেমে আসে। বাংলাদেশি টাকা যার পরিমাণ দাঁড়ায় ১১৫ টাকা ৭৪ পয়সা।

আবার চরম অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটের ভুগতে থাকা পাকিস্তানও গেল ৩১ জুলাই পেট্রোলের দাম ৩ দশমিক শূন্য ৫ রুপি কমিয়ে দেয়। যদিও একই সময় ডিজেলের দাম ৮ দশমিক ৯৫ টাকা বাড়িয়ে দেয় দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে থাকা দেশটি।

গত ৩১ জুলাই করাচি ভিত্তিক পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনালের এক প্রতিবেদন অনুসারে, দেশটি অর্থ বিভাগ এক প্রতিবেদনে জানায়, আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রোলিয়ামের দামের ওঠানামা এবং বিনিময় হারের তারতম্যের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার পেট্রোলিয়াম পণ্যের বিদ্যমান মূল্য সংশোধন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

১ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়া নতুন মূল্য অনুযায়ী, প্রতি লিটার পেট্রোলের দাম ৩ রুপি কমিয়ে ২৩০ রুপি থেকে ২২৭ রুপি নির্ধারণ করা হয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৯৫ টাকা ৯১ পয়সা। অপরদিকে প্রায় ৯ রুপি বাড়িয়ে ডিজেলের দাম নির্ধারণ করা হয় ২৪৪ দশমিক ৯৫ রুপি। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১০৩ টাকা ৪০ পয়সা।

এছাড়া কেরোসিনের দাম ৪ দশমিক ৬২ রুপি বেড়ে লিটার প্রতি ২০১ দশমিক শূন্য ৭ রুপিতে উঠে যায়। টাকায় যার পরিমাণ ৮৪ টাকা ৮৮ পয়সা।

ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির উদ্বেগের মধ্যে গত ২৫ জুন নেপাল সরকার পেট্রোলিয়াম পণ্যের দাম কমিয়ে দেয়।

দ্য কাঠমান্ডু পোস্টে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, পেট্রোলিয়াম পণ্যের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। পেট্রোলের দাম লিটার প্রতি ২০ রুপি কমানো হয়েছে। একইভাবে, ডিজেলের দাম লিটার প্রতি ২৯ রুপি কমেছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পেট্রোলের দাম এখন প্রতি লিটারে ১৭৯ রুপি এবং ডিজেলের দাম হবে ১৬৩ রুপি। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ যথাক্রমে ১৩৩ টাকা ৮৬ পয়সা এবং ১২১ টাকা ৮৯ পয়সা।

তবে নেপালের ওয়েল করপোরেশন লিমিটেডের তথ্য অনুসারে, বর্তমানে দেশটিতে প্রতি লিটার পেট্রোলের দাম ১৮১ রুপি, ডিজেলের দাম ১৭২ রুপি এবং কেরোসিনের দাম ১৭২ রুপি। বাংলাদেশি মুদ্রার যার পরিমাণ যথাক্রমে ১৩৫ টাকা ৩৫ পয়সা, ১২৮ টাকা ৬২ পয়সা এবং ১২৮ টাকা ৬২ পয়সা।

অপরদিকে এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনৈতিক দেশ চীনেও গেল ২৮ জুন পেট্রোল ও ডিজেলের খুচরা দর কমানো হয়। সিজিটিএন এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রিফর্ম কমিশনের অনুসারে, পেট্রোল এবং ডিজেলের দাম প্রতি টন যথাক্রমে ৩২০ ইউয়ান (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪ হাজার ৪৮২ টাকা ৬৭ পয়সা) এবং ৩১০ ইউয়ান (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪ হাজার ৩৪২ টাকা ৫৯ পয়সা)।

দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকরা ডিজেলকে সবচেয়ে সাশ্রয়ী জ্বালানি মনে করলেও বর্তমানে দেশটিতে ডিজেলের দামও ঊর্ধ্বমুখী। শনিবার দেশটিতে এক লিটার ডিজেলের দাম ১ দশমিক ৫ ডলার বা ১৪৪ টাকা। যা গত দুই মাসে এক ডলারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্কের জ্যামাইকায় একটি মবিল কোম্পানির তেলের পাম্পে প্রতি গ্যালন তেলের দাম ৫ ডলার। কোথাও কোথাও আবার তারও বেশি মূল্যে তেল বিক্রি হচ্ছে। দেশটিতে এ মুহূর্তের বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রতি লিটার তেলের দাম ১৩৫ টাকা। যা গেল দুই মাস আগে অর্থাৎ মে মাসেও এক লিটার তেলের দাম বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫৫ টাকা ছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের সরকার কোনোভাবেই জ্বালানি তেলের এ মূল্য বৃদ্ধি কোনোভাবেই রোধ করতে পারছেন না।

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের একটি পেট্রোল স্টেশনে শনিবারের মূল্য তালিকা বলছে, প্রতি লিটার অকটেন বিক্রি হচ্ছে ১ ইউরো ৯৬২ সেন্টে বা ১৯০ টাকায়। প্রতি লিটার পেট্রোল বিক্রি হচ্ছে ২ দশমিক শূন্য ৭২ ইউরোতে বা ২০০ টাকায়। আর ডিজেল বিক্রি হচ্ছে ১ ইউরো ৯৯ সেন্টে বা ১৯২ দশমিক ৭৯ টাকায়।

ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর আগে প্রতি লিটার ডিজেল বিক্রি হতো ১ ইউরো ৪০ সেন্টে এবং পেট্রোল বিক্রি হত ১ ইউরো ৭০ সেন্টে।

ইউরোপের আরেক দেশ জার্মানিতে প্রতি লিটার ডিজেল বিক্রি হচ্ছে ১ ইউরো ৮৯ সেন্টে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা দাঁড়ায় ১৮৩ টাকা ২৩ পয়সা। আর পেট্রোল প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ১ ইউরো ৭৫ সেন্টে বা ১৬৯ টাকা ৬৬ পয়সা।

গেল ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া ইউক্রেন সংঘাতের আগে যা ছিল ১ ইউরো ১০ সেন্ট থেকে ১ ইউরো ১৫ সেন্ট। অর্থাৎ বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ছিল ১০৬ থেকে ১১১ টাকা।

গেল দুই মাস আগেও আয়ারল্যান্ডে এক লিটার পেট্রোলের দাম ছিল ১ ইউরো ৩০ সেন্ট বা ১২৬ টাকা। সেই দাম ক্রমবর্ধমানভাবে বাড়তে বাড়তে ১ ইউরো ৯৫ সেন্টে ঠেকেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় ১৮৯ টাকা। জ্বালানির এ অস্বাভাবিক দাম বাড়ার প্রভাব পড়ছে দেশটির নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যেও।

অস্ট্রেলিয়ায় জ্বালানি তেলের দাম গত কয়েক মাসে ব্যাপক আকারে বেড়ে গেছে। দেশটিতে ভালো পেট্রোল কিনতে হলে অস্ট্রেলিয়ান মুদ্রায় ২ ডলারের মতো দিতে হচ্ছে। আবার ডিজেল কিনতে হলে আরও বেশি অর্থ গুণতে হচ্ছে। অর্থাৎ এক লিটার পেট্রোল কিনতে হলে অস্ট্রোলিয়ানদের দেড়শো টাকা গুণতে হচ্ছে এবং ডিজেল কিনতে হলে ১৬০ টাকার মতো দিতে হচ্ছে।

এসএইচ-১৯/০৬/২২ (অনলাইন ডেস্ক)