দেশের আসল ভিআইপি প্রবাসীরাই

ডলার সংকটে দেশের ভরসা রেমিট্যান্স। অথচ এ অর্থ দেশে পাঠাতে ঝক্কির শেষ নেই প্রবাসীদের। কখনও সময়মতো পৌঁছায় না টাকা, কখনও মেলে না প্রণোদনার সামান্য অর্থটুকুও। ফলে বৈধ চ্যানেল বাদ দিয়ে ঝুঁকি আছে জেনেও অনেকেই পা বাড়ান হুন্ডিতে। এ প্রবণতা কমাতে রেমিট্যান্সের প্রণোদনা ৫ শতাংশ করলেও ক্ষতি নেই বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

রোজ কত আবেগ, কত অনুভূতি বিসর্জন দিয়ে, অশ্রুভরা চোখে দেশ ছাড়েন হাজার হাজার মানুষ। নিরেট চাওয়া, নিজে ভালো থাকা, আর প্রিয়জনদের ভালো রাখা। এরই মাঝে একটু একটু করে শক্ত হয় বাংলাদেশের অর্থনীতি। কিন্তু এ চলতি পথ কতটা স্বস্তি দিচ্ছে প্রবাসীদের?

এ প্রশ্নের জবাবে একজন প্রবাসী বলেন, আমাদের দেশের বিমানবন্দরেই তো কত হয়রানি। এখানে আসা যাওয়ার সবকিছুতেই কষ্ট।

আবার উপার্জিত অর্থ দেশে পাঠাতেও পড়তে হয় আরেক দফা বিপত্তিতে। বেশিরভাগ দেশেই সাপ্তাহিক ছুটির দিন রোববার, বাংলাদেশে শুক্র আর শনিবার। মানে এ তিনদিন ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠানোর সুযোগ নেই বললেই চলে। এর ওপর বৈধভাবে পাঠাতে লাগে বাড়তি সময়, বিস্তর ফারাক থাকে হুন্ডিতে দেয়া টাকার রেটের সঙ্গেও।

এ বিষয়ে ব্যাংক এশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. ফারুক হোসেন বলেন, আমরা চাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এমন একটি নির্দেশনা আসুক যেন, রেমিট্যান্স ইউনিটটি ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে।

অর্থনীতিবিদ ড. এম আবু ইউসুফ বলেন, সরকারের উচিত হবে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক চ্যালেনের পার্থক্য কমিয়ে আনার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা। ডলার সংকটে দিশেহারা বাংলাদেশ। টান পড়েছে রিজার্ভেও। ধুঁকতে থাকার অর্থনীতিতে এখনো লাইফলাইন রেমিট্যান্স। যে অর্থ আয় করতে কোনো সরকারকেই কোনোদিন করতে হয়নি কোনো বিনিয়োগ। তাই সময় এসেছে বাঁক বদলের। তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক নন, রাষ্ট্রের আসল ভিআইপি প্রবাসীরাই। এ সত্যি মানতে হবে ব্যাংক থেকে বিমানবন্দর- সবখানেই।

অর্থনীতিবিদ ড. এম আবু ইউসুফ বলেন, প্রবাসীরাই আমাদের দেশের ভিআইপি। বিমানবন্দর থেকে শুরু করে সব জায়গায় তাদের অগ্রাধিকার দেয়া উচিত।

আবার উপকারিতার প্রশ্নে রফতানি আয়ের চেয়ে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্ব বেশি রেমিট্যান্সের। এমন তথ্য দিয়ে ব্যাংকার আর অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রফতানিতে ২০ শতাংশ প্রণোদনা দেয়া গেলে, রেমিট্যান্সে ৫ শতাংশ করাই যায়।

আমরা যদি রফতানি আয় খাতগুলোকে ১০ থেকে ২০ শতাংশ প্রণোদনা দিতে পারি, তাহলে রেমিট্যান্সে আড়াই শতাংশ কেন? ৪ থেকে ৫ শতাংশ দেয়াই যেতে পারে বলে মন্তব্য করে ড. এম আবু ইউসুফ।

মো. ফারুক হোসেন বলেন, যারা মাসিক ভিত্তিতে লো লেভেলে কাজ করেন, তারাই কিন্তু তাদের আত্মীয়দের টাকা পাঠিয়ে থাকেন। সেক্ষেত্রে তাদের সেই ব্যাংক আকাউন্ট থাকে না। প্রণোদনার ক্ষেত্রে অনেক নথির প্রয়োজন হয়। যার কারণে তাৎক্ষণিকভাবে টাকা পাঠানো যায় না। তাই প্রণোদনা পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো নথির বাধ্যবাধকতা না থাকলে ভালো।

বিশ্বজুড়েই সংকটের কালো মেঘ অর্থনীতির আকাশে। যেখানে ছোট অর্থনীতির দেশগুলোর মাথাব্যাথার কারণ ডলারের বিপরীতে মুদ্রার অবমূল্যায়ন। বিশ্লেষক মত বলছে, প্রবাসীদের ছোটখাটো চাওয়া পূরণের মাধ্যমে সে পরিস্থিতি ভালোভাবেই সামাল দিতে পারে বাংলাদেশ।

এসএইচ-১৫/০৯/২২ (অনলাইন ডেস্ক, সূত্র : সময়)