বঙ্গবন্ধুকে কফিনসহ দাফন করতে চেয়েছিল ঘাতকরা

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনা জানেন না, এমন ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালির মৃত শরীরের ওপরও নিপীড়ন চালিয়েছিল ঘাতকরা।

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সুবেহ সাদিকে যখন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে নিজ বাসভবনে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে বুলেটের বৃষ্টিতে ঘাতকরা ঝাঁজরা করে দিয়েছিল। তখন যে বৃষ্টি ঝরছিল, তা যেন ছিল প্রকৃতিরই অশ্রুপাত। ঘাতকদের উদ্যত অস্ত্রের সামনে ভীতসন্ত্রস্ত বাংলাদেশ ঢাকা পড়েছিল শোকে।

যে তর্জনীর ইশারায় ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু জনসমুদ্রে ঢেউ তুলেছিলেন, ১৫ আগস্টের কালরাতে তাকে হত্যার পর তার তর্জনী কেটে দেয় ঘাতকরা। নির্মমভাবে হত্যার পর প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধানমন্ডির ৩২ নম্বরেই পড়ে ছিল বাংলার মহানায়কের মরদেহ।

পরদিন ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে জন্মস্থান টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মরদেহ পৌঁছায়। জাতির পিতার কফিন হেলিকপ্টার থেকে নামিয়েছিলেন টুঙ্গিপাড়ার তৎকালীন সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার কাসেম, ক্যাশিয়ার, পোস্ট অফিসের পোস্ট মাস্টার আনোয়ার হোসেন, স্থানীয় মেম্বার আব্দুল হাই; গ্রামবাসী আকবর কাজী, মো. ইলিয়াস হোসেন, জহর মুন্সি, সেনা মিয়া কবিরাজ, শেখ নুরুল হক, গেদু মিয়া, সোহরাব মাস্টারসহ অন্যরা। তারা টুঙ্গিপাড়া থানা সংলগ্ন হ্যালিপ্যাড থেকে কফিন বহন করে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে নিয়ে যান।

নিজেদের কলঙ্ক ঢাকতে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছিল ঘাতকদল। ষড়যন্ত্রকারী ও বঙ্গবন্ধুর ঘাতকরা স্থানীয়দের নির্দেশ দেন কফিনসহ দাফন করতে। তবে ইমাম সাহেবের আপত্তি থাকায় তা সম্ভব হয়নি। স্থানীয় মসজিদের ইমাম মৌলবি আব্দুল হালিম জানান, একজন মুসলমান হিসেবে বঙ্গবন্ধুর মরদেহ ইসলামি বিধিবিধান মেনে দাফন করতে হবে। এরপর সেনা কর্মকর্তারা সব নিয়ম সেরে মরদেহ দাফনের জন্য ১৫ মিনিট সময় দেন।

এরপর খোলা হয় কফিনটি। কফিন খোলার কাজটি করেছিলেন ওই গ্রামেরই কাঠমিস্ত্রি হালিম শেখ। তার সহযোগী ছিলেন তারই ১০ বছর বয়সী ছেলে আয়ুব আলী শেখ। কফিন খুলে বঙ্গবন্ধুর মরদেহ দেখে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন তারা। বঙ্গবন্ধুর বুক গুলিতে ঝাঁজরা করে দেয়া হয়েছিল। গুলিগুলো বুক দিয়ে ঢুকে পিঠ দিয়ে বের হয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধুর হাতেও গুলি লেগেছিল। তখনও তার শরীর দিয়ে রক্ত ঝরছিল। গায়ে ছিল সাদা গেঞ্জি ও পাঞ্জাবি। পরনে ছিল সাদা চেক লুঙ্গি। পাঞ্জাবির এক পকেটে ছিল চশমা ও প্রিয় পাইপ।

টুঙ্গিপাড়ার স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জাতির পিতার মরদেহ ১৬ আগস্ট দুপুরে টুঙ্গিপাড়া নেয়া হয়। তাকে ‘তিব্বত ৫৭০’ (কাপড় কাচা) সাবানে গোসল করিয়ে রিলিফের কাপড়ের কাফন দিয়ে সমাহিত করা হয়। দেশের অসহায় মানুষের জন্য, দুস্থদের জন্য রেড ক্রিসেন্ট থেকে পাঠানো ত্রাণের যে শাড়ি এসেছিল, সে শাড়িকাপড় দিয়েই কাফন পরানো হয়েছিল ইতিহাসের এই মহানায়ককে। জানাজায় গ্রামবাসী অংশগ্রহণ করতে চাইলেও দেয়া হয়নি। দাফন অনুষ্ঠানে টুঙ্গিপাড়া, পাটগাতী ও পাঁচকাহনিয়া গ্রামের মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ জন অংশগ্রহণ করতে পেরেছিলেন।

জানাজা ও দাফন শেষে বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করেছিলেন মরহুম মৌলবি আব্দুল হালিম। বঙ্গবন্ধুর আত্মার মাগফেরাত কামনায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছিলেন টুঙ্গিপাড়াবাসী।

এসএইচ-১৪/১৫/২২ (অনলাইন ডেস্ক)