কুকুরের কামড়ে প্রতিবছর আহত হয় দু’লাখেরও বেশি মানুষ

দেশের স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসেবে গত ১০ বছরে জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার কমলেও প্রতিবছর কুকুরের কামড়ে আহত হচ্ছে দু’লাখেরও বেশি মানুষ, যাদের বেশিরভাগই শিশু।

স্বাস্থ্য বিভাগ গত এক দশক ধরে জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল নিয়ে কাজ করছে, কিন্তু রাস্তাঘাটে ঘুরে বেড়ানো কুকুরের কামড় থেকে মানুষকে রক্ষা করার ব্যাপারে তারা রীতিমত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।

এক সময় কুকুর নিধন করা হলেও এখন সেটি আইনে নিষিদ্ধ। আবার কুকুরকে টিকা দেয়ার কাজও যথাযথভাবে হচ্ছে না। ফলে বাড়ছে কুকুরের সংখ্যা।

আর এ নিয়ে ভয় ও উদ্বেগ আছে অনেকের মধ্যেই। এদেরই একজন ঢাকার শাহাজাদপুর এলাকার রুমানা আখতার ইতি বলছেন, “কুকুর অনেক ভয় পাই। সকালে অফিসের জন্য বের হয়ে দেখি সামনেই কুকুর। ওগুলো পার হয়ে গলির মুখে আসলে সেখানেও দেখি আরও কুকুর দাঁড়িয়ে আছে।”

কুকুর নিয়ে এই আতঙ্কের মূল কারণ হচ্ছে প্রতিনিয়ত কুকুরের কামড়ে জখম হওয়ার ঘটনা। এ ধরনের অনেক ঘটনার কোন হিসেব না থাকলেও স্বাস্থ্য বিভাগের এক হিসেব বলছে প্রতি বছর কুকুরের কামড়ে আহত হওয়ার ঘটনা প্রায় দু’লাখ।

যদিও বাংলাদেশে জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা গত এক দশকে অনেক কমেছে, তারপরেও বাড্ডার ফাইজা আক্তার বলছেন যে পাড়া মহল্লায় যেভাবে দল বেঁধে কুকুর ঘুরে বেড়ায় সেটিই তার ভয়ের কারণ।

“এলাকায় এতো বেশি কুকুর, তারা ডাকাডাকি করে ও অনেক সময় হিংস্র হয়ে যায়। এগুলো সরানো গেলে ভালো হতো,” বলছিলেন তিনি।

অনেকে কুকুরের কামড়ের শিকার হয়েছেন এবং সিটি কর্পোরেশন বলছে প্রতিনিয়ত এ ধরনের অভিযোগ তাদেরও কাছেও আসছে।

ঢাকার সিদ্ধেশ্বরীতে নিজের বাসায় যাওয়ার পথে কুকুরের কামড়ে আহত হওয়ার পর নিজের ক্ষোভের কথা বলেছেন সুনীতি কুমার বিশ্বাস।

“হঠাৎ করে দুটি কুকুর আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো। কামড় দিলো। আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম। তখন হাসপাতালও বন্ধ। চিকিৎসক বন্ধুর পরামর্শে পরদিন ভোরে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে গিয়ে দেখি আমার সামনে আরও দুই-আড়াইশ মানুষ টিকা নিতে এসেছে।”

স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে প্রতি বছর তিন লাখের বেশি রোগীকে বিনামূল্যে জলাতঙ্কের টিকা দেয়া হচ্ছে। ফলে জলাতঙ্কে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেকাংশে কমেছে।

কিন্তু যত্রতত্র ঘুরে বেড়ানো কুকুর নিয়ে নাগরিক বিড়ম্বনা যে ব্যাপক বেড়েছে তার সুরাহা কিভাবে হবে সেটি অবশ্য কারও জানা নেই।

প্রাণীকল্যাণ নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলা বলছে মানুষ ও কুকুরের মধ্যে সম্পর্ক ভালো করার জন্য সরকারের নানা উদ্যোগে সহায়তা দিচ্ছেন তারা।

এরকম একটি সংগঠন কেয়ার ফর পজের কর্মকর্তা মঈদ শরীফ বলছেন কুকুর নিয়ে উদ্বেগ কমাতে দুটি পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে। একটি হলো গণ-টিকা দেয়া আর অন্যটি হলো যতযত্র কোন ধরনের মৃতদেহ যেন পড়ে না থাকে সেটা নিশ্চিত করা।

তবে বাস্তবতা হলো গ্রামে কুকুর-বেড়ালের সাথে অনেকের সখ্য থাকলেও শহর এলাকায় রাস্তাঘাটে থাকা কুকুরকে অনেকেই বিপজ্জনক বলে মনে করে। ঢাকার সংক্রামক ব্যধি হাসপাতালেই প্রতিদিন ৩০০-এর বেশি কুকুরের কামড়ে আহত রোগী চিকিৎসা নেন।

এ অবস্থায় অনেকের মধ্যে ক্ষোভও আছে যে শহর এলাকায় কুকুর কেন এভাবে যত্রতত্র ঘুরে বেড়াবে। স্থপতি ও নগরবিদ ইকবাল হাবিব বলছেন এমন দৃশ্য উন্নত দেশের শহরগুলোতে তার চোখে পড়েনি।

“যথেচ্ছভাবে অসুস্থ সুস্থ কুকুর রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়, অনেক মানুষ রাস্তায় ঘুমায় কিংবা বস্তিতে থাকে। সে অর্থে সংক্রামক ব্যধি ছড়িয়ে যাবার ঝুঁকি থাকে। এগুলোর নিয়ন্ত্রণ আমাদের ব্যবস্থাপনায় আনতে হবে। এসব কুকুর হত্যা না করে বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে এদের পুনর্বাসন করা যেতে পারে।”

তবে স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে কুকুরের কামড় নিয়ে যাতে উদ্বেগ কমে সেজন্য ইতোমধ্যে কুকুরকে তিন ধাপে প্রায় ২২ লাখ ৫১ হাজার ডোজ জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকা দেওয়া হয়েছে। এর বাইরেও চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে দেশের তিনশরও বেশি হাসপাতালে।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোঃ জোবায়দুর রহমান জানিয়েছেন কুকুরের বিষয়ে মানুষকে সচেতন করা আর কুকুরের টিকা কর্মসূচি জোরদার করে নিরাপদ সহাবস্থান নিশ্চিত করাই তাদের এখনকার লক্ষ্য।

এসএইচ-১১/২৮/২২ (অনলাইন ডেস্ক, সূত্র : বিবিসি)