আপদকালীন মজুত গড়ে তুলা হচ্ছে

ভারত, মিয়ানমার ও ভিয়েতনাম থেকে চাল এবং রাশিয়ার গম আমদানি করে আপৎকালীন মজুত গড়ে তুলছে বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম বন্দরে একের পর এক চাল এবং গমবাহী জাহাজ ভিড়ছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে গমবাহী ৬টি ও চালবাহী ৪টি জাহাজ থেকে পণ্য খালাস চলছে। এ অবস্থায় সংকট কাটাতে সরকারের আমদানি করা চালের একটি অংশ ওএমএস এবং টিসিবির মাধ্যমে বাজারে ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।

চট্টগ্রাম বন্দরের জিসিবির ৫ এবং ৯ নম্বর জেটিতে অবস্থানরত দুটি জাহাজ থেকে আটটি ক্রেনের সাহায্যে চালের বস্তা ট্রাকে নামানো হচ্ছে। চালের বস্তা ভর্তি হতেই একের পর এক ট্রাক গুদামের দিকে ছুটছে। এর মধ্যে নগরীর হালিশহরে সরকারি কেন্দ্রীয় গুদামের পাশাপাশি চাল পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর গুদামেও চলে যাচ্ছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের প্রধান দুটি জেটির পাশাপাশি পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের জেটিতে চাল এবং সাইলো জেটিতে খালাস হচ্ছে রাশিয়া থেকে আনা গম। এছাড়া বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থানরত আরও ৫টি মাদার ভেসেল থেকে গম এবং অপর একটি মাদার ভেসেল থেকে চাল খালাস চলছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই খালাস শেষ হয়ে সরকারি গুদামে যাবে অন্তত ২ লাখ মেট্রিক টন গম ও ৯০ হাজার মেট্রিক টনের বেশি চাল।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, ‘লোডিং থেকে পরিবহন পর্যন্ত সব রকমের সহযোগিতা আমরা করছি। আর এগুলোকে আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়ন্ত্রণ করছি, যাতে আমাদের দেশে কোনো ধরনের সংকট সৃষ্টি না হয়।’

মূলত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকটের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। আগামী বছরের শুরুতে সেই সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। এ অবস্থায় আপৎকালীন সংকট মোকাবিলায় সরকার ভারত ও মিয়ানমারের পাশাপাশি ভিয়েতনাম থেকেও চাল আমদানি করছে। তবে বর্তমান বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য বেসরকারি খাতকেও চাল আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে।

চট্টগ্রামের পাহাড়তলি বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এস এম নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘বর্তমানে সরকারি চাল আসছে। এগুলো সরকারের গুদামে ঢুকছে। এর পুরো মজুতই সরকার নিয়ন্ত্রণ করছে। সরকার এ চাল ওএমএসের মতো কর্মসূচির মাধ্যমে বিতরণ করবে। সুতরাং চালের বাজার মোটামুটি একটি স্থিতিশীল অবস্থায় চলে আসছে বলে আমার মনে হচ্ছে।’

এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে মোকাম মালিক, বেসরকারি আমদানিকারক এবং শিল্প গ্রুপগুলোর সিন্ডিকেট কারসাজির মুখে অস্থির হয়ে উঠেছে দেশের চালের বাজার। এ অবস্থায় সংকট কাটাতে সরকারিভাবে আমদানি করা চালের একটি অংশ টিসিবি কিংবা ওএমএসের মাধ্যমে বিক্রির পরামর্শ দিয়েছে ক্যাব।

চট্টগ্রাম ক্যাবের সভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, ‘টিসিবি এবং ওএমএসের পরিধি যদি আরেকটু বাড়ানো যায়, তাহলে সংকট কমবে। কারণ, বেসরকারি মিল মালিকরা দেশের বাজারে চালের সংকট তৈরির চেষ্টা করছেন। এসব কর্মসূচির পরিধি বাড়লে তারা চাপের মুখে পড়বেন।’

চলতি বছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সাড়ে পাঁচ লাখ মেট্রিক টন গম এবং ৭১ হাজার মেট্রিক টন সরকারের আমদানি করা চাল খালাস করা হয়েছে।

আমনের এ ভরা মৌসুমে বাংলাদেশে চালের কোনো সংকট নেই বললেই চলে। একই সঙ্গে মিয়ানমার ও ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করা চালও দ্রুত গুদামে চলে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা কারসাজি না করলে দ্রুতই চালের দাম কমে আসবে–আশা করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

এসএইচ-১৩/২২/২২ (অনলাইন ডেস্ক)