মোবাইল এজেন্ট অ্যাপে চলছে হুন্ডি

দেশের অর্থনীতিতে ডালপালা বিস্তৃত করে চলছে হুন্ডি ব্যবসা। মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস ও অ্যাপের মাধ্যমে হুন্ডিতে অবৈধপথে পাঠানো হচ্ছে টাকা। অবৈধ মাধ্যমে যারা টাকা পাঠাচ্ছেন তারা সিআইডির নজরদারিতে আছেন বলে জানান প্রতিষ্ঠান প্রধান।

মঙ্গলবার সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া জানান, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসগুলোর অধীনে যেসব ডিস্ট্রিবিউশন হাউজ কাজ করছে তাদের নজরদারির আওতায় রাখতে হবে। যদি তারা এসব ডিস্ট্রিবিউশন হাউজকে নজরদারিতে না রাখেন তাহলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। ডিস্ট্রিবিউশন হাউজগুলোকে খুব সতর্কতার সঙ্গে নজরদারি করতে হবে।

দুপুরে মালিবাগের সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

সিআইডি প্রধান বলেন, হুন্ডি ব্যবসায়ীরা দিনকে দিন তাদের সিস্টেম আপডেট করছে। তারা এখন অ্যাপের মাধ্যমে টাকা লেনদেন করছেন। ‘ফ্রিডম-ফ্লেক্সি২৪ ডটকম’ এমন একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে সৌদি প্রবাসী হুন্ডি কারবারিরা বাংলাদেশে যে নাম্বারগুলোতে টাকা পাঠানো হবে সেই নম্বরগুলো ইনপুট দিত এবং বাংলাদেশে থাকা বিভিন্ন এমএফএস এজেন্টদের সহায়তায় বাংলাদেশি হুন্ডির এজেন্টদের মাধ্যমে টাকাগুলো সরাসরি ডিস্ট্রিবিউশন হয়ে প্রাপকের কাছে যেত।

তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত চক্র অবৈধভাবে হুন্ডির মাধমে বিদেশে অর্থপাচার ও বিদেশে অবস্থানরত ওয়েজ আর্নারদের কষ্টার্জিত অর্থ বিদেশ থেকে বাংলাদেশে না এনে স্থানীয় মুদ্রায় মূল্য পরিশোধ করার মাধ্যমে অর্থ পাচার করতো। তারা ভিপিএন ব্যবহার করে এসব কাজ করতো।

হুন্ডি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যহত থাকবে মন্তব্য করে সিআইডি প্রধান বলেন, ২ হাজার এজেন্ট সিমের বেশ কিছু সদস্য হুন্ডির মতো অবৈধ কাজে সরাসরি জড়িত। ডিজিটাল হুন্ডির কাজকে সহজ, নির্ভুল এবং দ্রুততম উপায়ে সম্পন্ন করার জন্য তারা বেশ কিছু সফটওয়্যার ব্যবহার করছে। আমরা তা সনাক্ত করে নজরদারিতে রেখেছি।

প্রবাসী আয় কমে যাওয়ার পেছনে হুন্ডি ব্যবসাকে দায়ী করে সিআইডি প্রধান বলেন, বৈশ্বিক সংকটের কারণে গত কয়েক মাসে উল্লেখযোগ্য হারে প্রবাসী আয় কমে এসেছে। এতে করে কমে এসেছে রিজার্ভ, দেখা দিয়েছে ডলারের তীব্র সংকট। এই অবস্থায় অবৈধ হুন্ডি ব্যবসা বন্ধ করতে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠপর্যায়ে তাদের তৎপরতা বাড়িয়েছে।

ব্যাংকের বদলে হুন্ডি বেছে নেয়ার কারণ নিয়ে মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, সরকারের পলিসিসহ ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কতটা সহজভাবে টাকা পাঠানো যায় তা নিয়ে আমরা কাজ করছি। আপনারা জানেন রেমিট্যান্স ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পাঠানোর জন্য বাংলাদেশ সরকার প্রণোদনার ব্যবস্থা রেখেছে। আড়াই শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে প্রণোদনা বাড়ানো হয়েছে। তারপরও কেন তারা ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাঠাচ্ছে না তা আমার বোধগম্য হচ্ছে না।

তিনি বলেন, রেমিটেন্স বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণপ্রবাহ। সাম্প্রতিক বিশ্ব পরিস্থিতি এদেশের অর্থনীতির ওপর যে চাপ তৈরি করেছে তা মোকাবেলা করার জন্য সরকার অত্যন্ত তৎপর। হুন্ডি সবসময় রিজার্ভের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর এই ঝুঁকি মোকাবেলায় সিআইডি হুন্ডি কার্যক্রমের ওপর নজরদারি বাড়িয়েছে।

এদিকে সোমবার রাতে রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে মোবাইল এজেন্টের নামে অবৈধ হুন্ডি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি।

এসএইচ-২৬/২২/২২ (অনলাইন ডেস্ক)