বিশ্বের ১৩ দেশের মধ্যে বেঙ্গল টাইগার সংরক্ষণে বাংলাদেশ ৬ নম্বরে। ৫ বছর আগে সর্বশেষ জরিপে সুন্দরবনে বেঙ্গল টাইগার ছিল ১১৪টি। অন্যদিকে ভারতে অংশে তা ৩ হাজারের বেশি। জবাবে বন বিভাগ বলছে, সুন্দরবনে বাঘ সংরক্ষণে দুটি প্রকল্প চলছে। ২০৩৪ সাল নাগাদ অবস্থার উন্নতি হবে।
বাঘকে বলা হয় একটি বনের জীববৈচিত্র্যের অবস্থা নিরূপনের ইন্ডিকেটর (Indicator) প্রজাতি। যে বনের অবস্থা ভালো সেখানে বাঘের সংখ্যা বেশি থাকে। বাঘ কমে যাওয়ার অর্থ বনাঞ্চলের অবস্থা বা বাঘের আবাসস্থল বিরূপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়া।
বাংলাদেশে প্রায় ছয় হাজার বর্গকিলোমিটারের সুন্দরবন। আর এখানে রাজত্ব করে দুলর্ভ বেঙ্গল টাইগার। তবে আগের দিন নেই, বেঁচেবর্তে আছেন কোনোমতে। চোরা শিকারি ও খাবার সংকটে টিকে থাকাই দায়।
সারা বিশ্বে বন উজাড় ও শিকারি কর্তৃক বাঘ হত্যার ফলে বর্তমানে এই প্রাণীটি মহাবিপন্ন (Critically Endangered) প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
বাঘ পৃথিবীর মাত্র ১৩টি দেশে এখন অস্তিত্ব বজায় রেখেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত, বার্মা, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, চীন, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, লাওস, ভুটান, নেপাল ও রাশিয়া অন্যতম।
বাঘের আটটি উপ-প্রজাতির মধ্যে ইতোমধ্যে বালিনিজ টাইগার, জাভানিজ টাইগার ও কাম্পিয়ান টাইগার বিশ্ব থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
বর্তমানে বাঘের (Penthera tigris) পাঁচটি উপ-প্রজাতি (sub-species) কোনোরকমে টিকে আছে। এগুলো হলো বেঙ্গল টাইগার, সাইবেরিয়ান টাইগার, সুমাত্রান টাইগার, সাউথ চায়না টাইগার এবং ইন্দো-চায়না টাইগার।
২০১৮ সালের জরিপে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘ ছিল ১১৪টি। অথচ তখন ভারতে ছিল তিন হাজারের ওপরে। নেপালে বেড়েছে সাড়ে তিনশ। ভুটানেরও আছে ভালো অগ্রগতি।
বন্যপ্রাণী বিভাগের বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ বলেন, ২০৩৪ সাল পর্যন্ত সুন্দরবনের বাঘ পুনরুদ্ধার ও দ্বিতীয় প্রজন্মের টাইগার অ্যাকশন প্ল্যানের বাস্তবায়ন চলছে, ভারতের সঙ্গেও জোরদার করা হচ্ছে আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল আজিজ বলেন, ভারত, নেপাল, ভুটান, থাইল্যান্ড, রাশিয়ারসহ ১৩ দেশের বাঘ সংরক্ষণের তালিকায় ৬ নম্বরে বাংলাদেশ। পরিস্থিতির উন্নয়নে প্রকল্প নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে বনজীবী ও জাতীয় পর্যায়ে সবাইকে সম্পৃক্ত করতে হবে।
বাঘের সংখ্যা বাড়াতে হলে এর নিরাপদ আবাসের পাশাপাশি খাবারের সংস্থানও জরুরি বলে মনে করেন গবেষকরা।
বন্যপ্রাণী গবেষক ড. রেজা খান বলেন, সুন্দরবনে বাঘের শিকার প্রাণীর মধ্যে চিত্রা হরিণ, শুকর ও বানর রয়েছে। এর খাবারের প্রায় ৮০ শতাংশই হরিণ। তাই বাঘের সংখ্যা বাড়াতে হরিণ, বন্য শূকরের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি নিরাপদ আবাস নিশ্চিত করতে হবে।
শুধু সুন্দরবনের বাঘ নয়, পার্বত্য এলাকার লাম চিতা, লেপার্ড সংরক্ষণেও কর্যকর পদক্ষেপ চাইছেন প্রাণী গবেষকেরা।
এসএইচ-০১/২৯/২৩ (অনলাইন ডেস্ক)