দেশে ধান উৎপাদনে নয়া রেকর্ড

কৃষকরা স্থানীয় জাতের পরিবর্তে উচ্চ ফলনশীল জাত (উফশী) ও হাইব্রিড ধান চাষ করায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে টানা ষষ্ঠবারের মতো ধানের উৎপাদন বেড়েছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) বোরো উৎপাদনের তথ্যে দেখা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বোরো মৌসুমে দুই কোটি সাত লাখ টন ধান উৎপাদিত হয়েছে। এটি এর আগের অর্থবছরের তুলনায় তিন শতাংশ বেশি।

২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে মোট চাল উৎপাদন দুই দশমিক পাঁচ শতাংশ বেড়ে তিন কোটি ৯১ লাখ টনে দাঁড়িয়েছে। এটি সর্বোচ্চ রেকর্ড।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিআরআরআই) সাবেক মহাপরিচালক জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, ‘দেশে আধুনিক সরঞ্জাম ও নতুন জাতের বীজের ব্যবহার বেড়েছে। কৃষকরা আরও ভালোভাবে খেত প্রস্তুত করছেন। সরকার নন-ইউরিয়া সারে ভর্তুকি দেওয়ায় সার ব্যবহার সুষম হচ্ছে।’

তার মতে, ‘সামগ্রিকভাবে মাঠ পর্যবেক্ষণ নিবিড় হয়েছে। কৃষকরা তাদের পরিবারের জন্য সারা বছরের খাবার নিশ্চিত ও বাড়তি অংশ বিক্রি করে উপার্জনের আশায় ফসল উৎপাদনে আরও যত্নবান হয়েছেন।’

সাত বছর আগে বাংলাদেশে চালের মোট উৎপাদন ছিল তিন কোটি ৩৮ লাখ টন।

২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে ফসল উৎপাদন সামগ্রিকভাবে বেড়েছে। ধানি জমির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি আধুনিক জাতের ফসল ফলানোয় চাল আমদানি কমেছে।

২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সাড়ে ১০ লাখ টন চাল আমদানি করেছিল। এটি আগের অর্থবছরের তুলনায় সামান্য বেশি।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের গত ১ জুলাই থেকে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত চাল আমদানি হয়নি। বিশ্লেষকদের বলছেন, গত অর্থবছরে উৎপাদন বেশি হওয়ায় চাল আমদানির প্রয়োজন হয়নি।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি ব্যবসা ও বিপণন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম  বলেন, ‘দেশে ডলার ঘাটতির কারণে রিজার্ভ যখন চাপে আছে তখন ফলন বেশি হওয়ায় চাল আমদানির প্রয়োজনীয়তা কমেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ফলন বেশি হওয়ায় শস্য আমদানিতে বৈদেশিক মুদ্রার বাড়তি প্রয়োজন কমেছে। ডলার ঘাটতির কারণে যদি চাল আমদানি কমে যেত তাহলে দেশের বাজারে চালের দাম বেড়ে যেত। এতে দরিদ্র মানুষের ওপর বাড়তি চাপ পড়তো।’

‘চালের দাম স্থিতিশীল থাকায় আমি খুশি,’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ তৃতীয় বৃহত্তম ধান উৎপাদনকারী দেশ। কৃষিতে সরকারের মনোযোগের কারণে চালের উৎপাদন বেড়েছে।’

বিবিএসের তথ্যে দেখা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশের মোট ধানি জমির ৮১ শতাংশে উচ্চ ফলনশীল ধান চাষ হচ্ছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে তা ছিল ৭৩ শতাংশ।

অন্যদিকে, উচ্চ ফলনশীল ও স্থানীয় জাতের তুলনায় বেশি ফলন দেওয়া হাইব্রিড ধানের চাষ ২০০৯-১০ অর্থবছরের ছয় শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

এই সময়ের মধ্যে, স্থানীয় জাতের ধান চাষ অর্ধেক কমেছে। এখন স্থানীয় জাতের ধান চাষ হচ্ছে মোট ধানি জমির প্রায় নয় শতাংশ এলাকায়।

বিআরআরআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস মনে করেন, ‘মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের উদ্বুদ্ধ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় কৃষকদের জন্য শস্য বিমার মাধ্যমে ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর সুযোগ আছে।’

তার মতে, কৃষি গবেষণায় সরকারের মনোযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি কৃষি বিজ্ঞানীদেরকেও উৎসাহ দিতে হবে।

এক গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাবারের বাড়তি চাহিদা মেটাতে বিআরআরআই ফসলের উৎপাদন বাড়াতে কাজ করছে। দেশের জনসংখ্যা এখন প্রায় ১৭ কোটি।

বাকৃবি অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম দেশের চাহিদা মেটাতে আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভর না করে ধানের উৎপাদন বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। তাই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের উৎপাদন ও এর প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে হবে। এ জন্য সারসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণ আমদানি যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।’

এসএইচ-০৫/১৬/২৩ (অনলাইন ডেস্ক, সূত্র : দ্য ডেইলি স্টার)