গত ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশের পর থেকে একের পর এক হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। ফলে গ্রেপ্তার আতঙ্কে ভুগছেন দলটির নেতাকর্মীরা। এরইমধ্যে সিনিয়র নেতাসহ সারাদেশের বহু নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত ২৮ অক্টোবর থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত মোট নয় দিনে শুধু রাজধানীতেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিএনপির ১৫৫৪ জন নেতাকর্মী। এছাড়া এই নয়দিনে রাজধানীতে মামলা হয়েছে ১০২টি।
সবমিলিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের কপালে এখন চিন্তার ভাঁজ। গ্রেপ্তার-হয়রানি এড়িয়ে কীভাবে চলমান আন্দোলনে মাঠে থাকা যায় সে কৌশল অবলম্বন করছেন। বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগাচ্ছেন। রাতের বেলা এখন কেউই নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন না। ভিন্ন জায়গায় থাকছেন। অবস্থান শনাক্তকরণ এড়াতে বন্ধ রাখছেন মোবাইল ফোন। তবে জরুরি ভিত্তিতে অনলাইনেই যোগাযোগ রক্ষা করছেন।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, গ্রেপ্তার, হয়রানি ও দলীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে বেছে নেয়া হয়েছে টেলিগ্রাম অ্যাপস। এটি ব্যবহার করে বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মী থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতারা একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের আদান-প্রদানসহ গ্রেপ্তার এড়ানো এবং আন্দোলনের নানা নতুন কৌশলের আলাপচারিতাও চলছে ওই মাধ্যমে। এরই মধ্যে বিএনপির নেতাদের জেলাভিত্তিক টেলিগ্রাম গ্রুপ খোলার তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এসব গ্রুপের কাজকর্ম দেখাশোনার জন্য দায়িত্বে আছেন নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা মডারেটর। তারা পুরো বিষয়টি সমন্বয়ের কাজ করেন। আর সেই সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন স্থানীয় পর্যায়ের শীর্ষ নেতারা। তারাই আবার একই মাধ্যমে তৃণমূলের তথ্য পৌঁছে দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে।
এছাড়াও বিপদ থেকে উত্তরণে আরও ভিন্ন কৌশল নিচ্ছেন নেতাকর্মীরা। সূত্র জানায়, টেলিগ্রাম এবং বিদেশি নম্বরের হোয়াটসঅ্যাপে দেশে প্রচলিত মোবাইল নেটওয়ার্কের ইন্টারনেট ডাটাও ব্যবহার করা হচ্ছে না। এমনকি ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া ডাটা ব্যবহার না করে নজর এড়াতে আলাদা পকেট রাউটার ব্যবহার করছেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আওয়ামী সন্ত্রাসী ক্যাডারদের যৌথ আক্রমণে দেশের সর্বত্র আতঙ্ক ও ভয়ের যুদ্ধকালীন উদ্বিগ্নতা বিরাজমান। নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে গ্রেপ্তারের আতঙ্ক, নিরুদ্দেশ হওয়া সন্তানের জন্য মা-বাবার আহাজারি, হামলা-ভাঙচুর হওয়ার আক্রমণের ভয় ইত্যাদি নানামুখী পৈশাচিক ঘটনা অব্যাহত রয়েছে।’
এদিকে শুধু বিএনপিই নয়, বিরোধী অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও একই কৌশল অবলম্বন করছেন। এতে করে ডিজিটাল মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা খুব সহজেই তাদের অবস্থান শনাক্ত এবং মুঠোফোনের কথোপকথনে নজরদারি করতে পারছেন না।
তবে সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টেলিগ্রাম বা হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে আত্মগোপন দীর্ঘায়িত করা গেলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চাইলে আসামির অবস্থান শনাক্ত করা কঠিন নয়। সময়সাপেক্ষ হলেও যে মাধ্যমেই হোক, দেশের ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক ব্যবহার করলেই যে কাউকে শনাক্ত করা সম্ভব।
উল্লেখ্য, গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশে শীর্ষ নেতারা বক্তব্য শেষ করার আগেই পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের তুমুল সংঘর্ষ হয়। পরের দিন ২৯ অক্টোবর দেশব্যাপী সর্বাত্মক হরতালের ডাক দেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ওই কর্মসূচির পর একদিন বিরতি দিয়ে ৩১ অক্টোবর থেকে টানা তিন দিন সারাদেশে সড়ক, রেল ও নৌপথে অবরোধ পালন করে দলটি। এরপর গত রবিবার থেকে ৪৮ ঘণ্টার টানা অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়, যা শেষ হয় মঙ্গলবার সকাল ৬টায়। এরপর আজ বিরতি দিয়ে ফের ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। বুধবার সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত টানা ৪৮ ঘণ্টা সড়কপথ, রেলপথ ও নৌপথে সর্বাত্মক অবরোধ পালন করবে দলটি।
এসএইচ-০৪/০৭/২৩ (অনলাইন ডেস্ক)