বাংলাদেশের রানের পাহাড় : চাপে ওয়েষ্ট ইন্ডিজ

বাংলাদেশের দেওয়া ৫০৮ রানের লক্ষ্য নিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই স্পিনারদের সামনে পরাস্ত হচ্ছে সফরকারীরা। শনিবার দলীয় ৫৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে প্রথম ইনিংস শেষ করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টাইগারদের দুই হাসান (সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান)এর সামনে ব্যাট হাতে দাঁড়াতেই পারছেনা তারা।

দ্বিতীয় দিন শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ ২২ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ৭৫ রান। শ্যেন ডওরিচ ১৭ ও শিমরন হিটমেয়ার ৩২ রানে অপরাজিত আছেন।বাংলাদেশের লিড ৪৩৩ রান।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ তাদের ইনিংস শুরু করতে করতেই ৫ উইকেট হারিয়েছে। তিন উইকেট নিয়েছেন মিরাজ। ১২ ওভারে তিনি তার তৃতীয় শিকার তুলে নেন। এবার তার শিকার হোপ। হোপ ১০ রান করে আউট হয়ে যান। এর আগে দশম ওভারে বল করতে নিজের দ্বিতীয় শিকার তুলে নেন মিরাজ। মিরাজের বলে শুন্য রানে সাজঘরে ফেরেন চেসে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ শিবিরে তৃতীয় আঘাত হানেন সাকিব আল হাসান। তিনি নবম ওভারের শেষ ওভারে সুনীল অ্যামিবিজকে সাজঘরে ফেরান। আউট হওয়ার আগে তিনি ৭ রান সংগ্রহ করেন।

৬ষ্ঠ ওভারের তৃতীয় বলে মেহেদী হাসানের মিরাজের বলে বোল্ড হয়ে পাভিলিয়নে ফিরেন কাইরান পাওয়েল। এতে ক্যারিবীয়দের দুই ওপেনারই বিদায় নেয়। ১৫ বল মোকাবেলা করে ৪ রান করেন তিনি। তার আগে প্রথম ওভারেই সাকিব আল হাসানের বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান ব্রেথওয়েট। কোনো রান করতে পারেননি ক্যারিবীয় অধিনায়ক।

এদিকে ঢাকা টেস্টে টসে জিতে রিয়াদের সেঞ্চুরিতে ৫০৮ রানে শনিবার প্রথম ইনিংস শেষ হয় বাংলাদেশ। ১৩৬ রান করেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলে ওয়ারিকানের বলে বোল্ড হন তিনি। দিনের শুরুতে সাকিবকে হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে টাইগাররা। সেই চাপ থেকে টেনে তুলেন রিয়াদ-লিটন জুটি। লিটন ৫৪ রানের এক ঝকঝকে ইনিংস খেলে আউট হয়ে সাজঘরে ফিরে গেলে এর পর মিরাজ-তাইজুল কেউ আর বেশিক্ষণ ক্রিজে টিকে থাকতে পারেনি। মিরপুর টেস্টে সফরকারি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫০৮ রানের বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করায় টাইগাররা। মাহমুদউল্লাহ ১৩৬ রান করে ওয়ারিকনের বলে বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে আসেন।

দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরুর কিছু সময় পর সাকিব আল হাসান আউট হয়ে গেলে স্বাগতিকদের ছষ্ঠ উইকেটের পতন হয়। সেই সাথে হাতছাড়া হয় সাকিবের সেঞ্চুরি। ব্যাক্তিগত ৮০ রান করে রোচের বলে হোপের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজ ঘরে ফিরে যান তিনি। তার আউটের পর মাহমুদুল্লাহ ও লিটনের জুটিতে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে স্বাগতিকরা। রিয়াদ এদিন তার ক্যারিয়ারের হাফসেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিচ্ছেন লিটন দাস। মধ্যাহ্ন বিরতিতে যাওয়ার আগেই লিটনও তার ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন।

এর আগে শনিবার দ্বিতীয় দিনে সকাল ৯ টা ৩০ মিনিটে দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান ব্যাট করতে নামে। প্রথম দিনে বাংলাদেশের পক্ষে অভিষিক্ত সাদমান ইসলাম ৭৬ রান করেন। ক্যারিবীয়দের পক্ষে দেবেন্দ্র বিশু ২ উইকেট নেন।

টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল স্বাগতিক বাংলাদেশ। চট্টগ্রামে প্রথম টেস্ট জিতে সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে আছে টাইগাররা। এ ম্যাচে বাংলাদেশ দলের হয়ে টেস্টে অভিষেক হয় ওপেনার সাদমান ইসলামের। ক্যারিবীয় পেসার শ্যানন গ্যাব্রিয়েল নিষিদ্ধ থাকার কারণে এ ম্যাচ খেলতে পারছেন না।

দিনের প্রথম সেশনের ১৬ তম ওভারে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। রস্টন চেজের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সৌম্য। ৪২ বলে ১৯ রান করেন তিনি। সৌম্য সরকার ও অভিষিক্ত সাদমান ইসলাম ওপেনিংয়ে ৪২ রানের জুটি গড়েছিলেন।

অভিষিক্ত ওপেনার সাদমান ইসলাম ও মুমিনুল হকের দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৪৫ রানের জুটি লাঞ্চের আগে শেষ ওভারেই ভেঙ্গে যায়। পেসার কেমার রোচের বলে বড় শর্ট খেলতে গিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন মুমিনুল। ৪৬ বল মোকাবেলায় ২৯ রান করেন তিনি। তাঁর বিদায়ের সঙ্গেই লাঞ্চ বিরতির ঘোষণা আসে। লাঞ্চ বিরতি পর্যন্ত বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২ উইকেটে ৮৭ রান।

নিজের অভিষেক ম্যাচের প্রথম ইনিংসেই হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ওপেনার সাদমান ইসলাম। ধৈর্যশীল ইনিংসে সাদমান খেলেন ১৪৭ বল খেলে হাফ সেঞ্চুরি করেন।এরপর সৌম্য ও মুমিনুলের পথেই হাঁটেন মিঠুন। স্পিনার দেবেন্দ্র বিশুর বলে অপ্রয়োজনীয় শট খেলতে গিয়ে বোল্ড হন তিনি। তৃতীয় উইকেট জুটিতে অভিষিক্ত সাদমানের সঙ্গে গড়েন ৬৪ রানের জুটি। ৬১ বল মোকাবেলায় খেলেন ২৯ রানের ইনিংস খেলেন তিনি।

অভিষেক ম্যাচে স্পিনার দেবেন্দ্র বিশুর দ্বিতীয় শিকার হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন সাদমান ইসলাম। ১৯৯ বল মোকাবেলা করে ৭৬ রানের ইনিংস খেলে লেগ বিফরের ফাঁদে পড়েন তিনি। দ্বিতীয় সেশনে ৮৮ রানে দুই উইকেট হারিয়ে চা বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের দ্বিতীয় টেস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে ৪ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন মুশফিকুর রহিম। দ্বিতীয় টেস্টে নামার আগে ৬৫ টেস্টে মুশফিকের রান ছিল ৩৯৯২। আজ ৮ রান করেই চার হাজারি ক্লাবে প্রবেশ করেন তিনি। এর আগে ওপেনার তামিম ইকবাল চার হাজার রানের ক্লাবে প্রবেশ করেছিলেন। তামিমের রান ৪০৪৯।

চা বিরতির পর তৃতীয় সেশনের শুরুতেই বিদায় নেন অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম। ২৪ বলে ১৪ রান করে ক্যারিবীয় পেসার শিমরান লুইসের বলে বোল্ড হন তিনি। ক্যারিয়ারের ২৪ তম টেস্ট হাফ সেঞ্চুরি করেন বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে বিশু ২টি, বাথওয়েট ২টি, রোচ ২টি এবং লিউস,চেজ ও ওয়ারিকন ১টি করে উইকেট তুলে নেন।

এসএইচ-২০/০১/১২ (স্পোর্টস ডেস্ক)