মড্রিচই পাচ্ছেন ব্যালন ডি’অর!

তাহলে বিশ্ব ফুটবলে লিওনেল মেসি ও ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর রাজত্ব শেষই হতে চলেছে? মেসি-রোনালদোর রাজত্বে হানা দিয়ে লুকা মড্রিচই জিততে যাচ্ছেন ব্যালন ডি’অর? এই প্রশ্নগুলোর আনুষ্ঠানিক উত্তর মিলবে সোমবার রাতেই। তবে এরই মধ্যে ভাসা ভাসা উত্তর মিলেছেও। ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো নাকি এরই মধ্যে জেনে গেছেন, তিনি নন, বছরের অন্য সব ব্যক্তিগত বড় পুরস্কারের মতো সবচেয়ে মর্যাদার ব্যালন ডি’অরটাও জিততে যাচ্ছেন মড্রিচ। ইতালির ক্রীড়া দৈনিক স্কাই স্পোর্টস ইতালিয়া এ নিয়ে প্রতিবেদনও ছাপিয়েছে। ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে রোনালদোর মতো রিয়াল মাদ্রিদও জেনে গেছে-লুকা মড্রিচের হাতেই উঠতে যাচ্ছে ব্যালন ডি’অর।

নয়তো মড্রিচকে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য রিয়াল এমন প্রস্তুতি নিয়ে ফেলবে কেন? হ্যাঁ, সম্ভাব্য বিজয়ী ধরে মড্রিচকে শুভেচ্ছা জানানোর সমস্ত প্রস্তুতিই সেরে ফেলেছে তার ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ। আগামীকাল প্যারিসের অনুষ্ঠানে মড্রিচকে শুভেচ্ছা জানাতে তার সঙ্গে যাবেন রিয়ালের ৪ প্রতিনিধি। রিয়ালের সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ, অধিনায়ক সার্জিও রামোস ছাড়াও মড্রিচের সঙ্গে প্যারিসে যাবেন সাবেক দুই তারকা রবার্তো কার্লোস ও রাউল গঞ্জালেস। উল্লেখ্য, গত বছর ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর জয়ের সময়ও তার সফরসঙ্গী হয়ে প্যারিসে গিয়েছিল রিয়ালের ৪ প্রতিনিধি।

শুধু ক্লাব রিয়াল নয়। সম্ভাব্য বিজয়ী মড্রিচকে শুভেচ্চা জানানোর জন্য প্রস্তুত তার পুরো পরিবারও। এরই মধ্যে দেশ ক্রোয়েশিয়া থেকে মড্রিচরে পরিবার মাদ্রিদে পৌঁছেছে। এখন প্রস্তুতি নিচ্ছে মড্রিচের সঙ্গে প্যারিসে যাওয়ার। ক্লাব এবং পরিবারের সদস্যদের এই প্রস্তুতিই স্পষ্ট করে বলে দিচ্ছে সব। মড্রিচের বিজয়ের ঘোষণা মিলে মেসি এবং রোনালদোর শুভাকাঙ্খিদের হতাশার সুরেও।

রোনালদো তবু সম্ভাবনার দৌড়ে আছেন। মেসির এবার ব্যালন ডি’অর জয়ের কোনো সম্ভাবনাই নেই। বছরে এ পর্যন্ত দেওয়া ৪টি বড় পুরস্কারের কোনোটিতেই পদক মঞ্চে উঠতে পারেননি মেসি। ব্যালন ডি’অরের দৌড়েও তিনি নেই। কিন্তু এই বিষয়টি মানতেই পারছেন না বার্সেলোনার কোচ আর্নেস্তো ভালভার্দে, ‘অন্যদের মতো আমিও বিস্মিত যে, সে পদক মঞ্চে উঠতে পারবে না।’

মেসি পদক মঞ্চেই যেতে পারবেন না। রোনালদোও জেনে গেছেন, তিনি জিততে পারবেন না। সত্যি সত্যিই যিদি তেমনটা ঘটে, তাহলে বিশ্ব ফুটবলে মেসি-রোনালদোর রাজত্বে আনুষ্ঠানিকভাবেই যবনিকা ঘটবে। বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার, উয়েফা ও ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার এবং ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব ফুটবল হিস্ট্রি অ্যান্ড স্ট্যাটিস্টিকসের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার-বছরের এই ৪টি বড় পুরস্কারই জিতে নিয়েছেন মড্রিচ।

ফলে মেসি-রোনালদোর রাজত্বে ফাটল এরই মধ্যে ধরিয়েছেন। তবে মেসি-রোনালদোর রাজত্বের আনুষ্ঠানিক পতনটা হবে মড্রিচ সত্যি সত্যিই ব্যালন ডি’অরটা জিততে পারলে। কারণ ব্যক্তিগত পুরস্কারগুলোর মধ্যে ব্যালন ডি’অরের মর্যাদার সবচেয়ে বেশি। যে পুরস্কারটি গত ১০ বছর ধরে নিজেদের সম্পতি বানিয়ে ফেলেছিলেন মেসি-রোনালদো।

২০০৮ থেকে ২০১৭-টানা ১০ বছর পুরস্কারটি ভাগাভাগি করেছেন। জিতেছেন সমান ৫টি করে। এই ব্যালন ডি’অর জয়ের মধ্যদিয়েই তারা বিশ্ব ফুটবলে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন দ্বি-রাজত্ব।

এখানে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানিয়ে রাখা উচিত। উয়েফা এবং ফিফা বর্ষসেরা-এই দুটি পুরস্কারের দৌড়েই ভোটে শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় হয়েছেন রোনালদো। তৃতীয় হয়েছেন লিভারপুলের মিশরীয় ফরোয়ার্ড মোহামেদ সালাহ। ব্যালন ডি’অরের সেক্ষেত্রেও এই তিনজনকেই ফেভারিট মনে করা হচ্ছিল।

কিন্তু স্প্যানিশ ক্রীড়া দৈনিক মার্কার খবর, রোনালদো ও মোহামেদ সালাহ ব্যালন ডি’অরের দৌড়ে অনেকটাই পিছিয়ে। মানে সেরা তিনে তারা নেই। সবচেয়ে আকর্ষণীয় এই পুরস্কারের দৌড়ে সেরা তিনে নামি মড্রিচের সঙ্গে দুই ফরাসি-অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদের ফরোয়ার্ড আতোইন গ্রিজমান ও রিয়ালের ডিফেন্ডার রাফায়েল ভারানে।

রোনালদো ও সালাহকে টপকে গ্রিজমান ও ভারানের সেরা তিনে ঢুকে পড়ার কারণটাও স্পষ্টই। বছরের অন্য পুরস্কার গুলো দেওয়া হয়ে মৌসুমভিত্তিক পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে। তাতে রোনালদো ও সালাহ গত মৌসুমটিতে নিজ নিজ দলের হয়ে দুর্দান্ত করেছেন। কিন্তু ব্যালন ডি’অরটা দেওয়া হয় বছর ভিত্তিক পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে। মানে ২০১৮ সালের পারফরম্যান্সই এখানে বিবেচ্য বিষয়। তার চেয়েও বড় কথা, বিশ্বকাপের বছরে ব্যালন ডি’অর কর্তৃপক্ষ বিশ্বকাপকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে।

আর এখানেই এগিয়ে গেছেন গ্রিজমান ও ভারানে। ফ্রান্সের দ্বিতীয় বারের মতো বিম্বকাপ জয়ের পেছনে তাদের অবদান অপরিসীম। বিশ্বকাপের নজর কাড়া পারফরম্যান্সের পুরস্কার হিসেবেই গ্রিজমান-ভারানে জায়গা করে নিয়েছেন ব্যালন ডি’অরের দৌড়ে। পুরস্কার প্রাপ্তির দৌড়ে আছেন বিশ্বজয়ী ফ্রান্সের আরও একজন। তিনি পিএসজির তরুণ বিস্ময় কিলিয়ান এমবাপে। বছরের সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের পুরস্কার ‘কোপা’ ট্রফিটা পাচ্ছেন তিনিই।

এসএইচ-১১/০২/১২ (স্পোর্টস ডেস্ক)