মাঠে ফেরার স্বপ্ন বুকে আঁকছেন চামেলী

বল হাতে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানকে ঘায়েল করা, আবার নিজে ব্যাট হাতে প্রতিপক্ষের বোলারকে ঘায়েল করে বল মাঠের বাইরে পাঠানো। ভারতের ব্যাঙ্গালুরের সোয়েতা গেষ্ট হাউজের দোতলার ১০৫ নং রুমে কখনও শুয়ে, আবার কখনও একটু বারান্দায় স্ট্রেচারে ভর করে দুর আকাশের দিকে তাকিয়ে এমন কল্পনার মাঝে দিন কাটাচ্ছেন বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের সাবেক খেলোয়াড় চামেলী খাতুন। সেই সাথে বিগত দিনের দেশ-বিদেশের মাঠের স্মৃতিগুলো হাতড়াচ্ছেন আর আশায় বুক বাঁধছেন। সফল অস্ত্রপচারের পর এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা সেরে উঠার জন্য।

ভারতের ব্যাঙ্গালুরের শীর্ষ পর্যায়ের স্পর্শ বেসরকারি অর্থপেডিক হাসপাতালে রাজশাহীর মেয়ে চামেলীর ডান পায়ের লিগামেন্টের অপরাশেন হয়েছে সপ্তাহ খানেক আগে। অপারশেন শেষে প্রতিদিনের ড্রেসিং আর সেলাই কাটার অপেক্ষায় হাসপাতালের ঠিক দক্ষিনে দু’মিনিটের হাটা পথে সোয়েতা গেষ্ট হাউজে অবস্থান করছেন।

চামেলীর ভাগ্নি মুশফিকা রোজি, ডা. প্রশান্ত তেজওয়ানির বরাত দিয়ে জানালেন, চামেলীর পায়ের কন্ডিশন ক্রমশই ভাল হচ্ছে। পুরোপুরি সারতে ছয় মাস লাগবে। ছয় মাস পর পায়ে ভর দিয়েই চলাফেরা করতে পারবেন। এই সময় কালিন তাঁকে স্ট্রেচারে ভর দিয়ে হাটতে হবে।

তিনি বলেন, প্রতিদিন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ড্রেসিং করার জন্য। আজ-কালের মধ্যে সেলাই কাটা হতে পারে। আগামী ১০ নভেম্বর রাজশাহী ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহায্য সহযোগিতা, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশাসহ শুভাকাঙ্কিদের আর্থায়নে সকল চিকিৎসা খরচ চলছে। রাজশাহী থেকে ব্যাঙ্গালুর পর্যন্ত আসা যাওয়ার প্লেনের খরচ বহনের ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড।

চামেলী খাতুন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশাসহ সকল শুভাকাঙ্কিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, এই সকল মানুষদের সহযোগিতা না পেলে ব্যয়বহুল এই চিকিৎসা তার পক্ষে করা সম্ভব হতনা। বর্তমানে ভাল আছেন। তিনি রাজশাহীসহ দেশবাসির দোয়া কামনা করেছেন। প্রত্যাশা করছেন সুস্থ হয়ে আবারো মাঠে ফিরতে পারবেন।

উল্লেখ্য, চামেলীর পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়ায় দীর্ঘদিন থেকে অবস্থান করছিলেন রাজশাহী মহানগরীর দরগাপাড়ার জরাজীর্ণ একটি ঘরে। বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে অনেকেই তার পাশে এসে দাঁড়ান। এ সময় তার চিকিৎসার সকল দায়িত্ব নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ২ নভেম্বর রাজশাহী থেকে ঢাকা নিয়ে ভর্তি করা হয় জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতালে) ২১৬ নং কেবিনে। সেখানে প্রাথমিক পর্যায়ের পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে হাসপাতালেই চিকিৎসার প্রস্তুতি শরু হয়। কিন্তু চামেলী দাবি করেন ভারতে চিকিৎসার জন্য। তার দাবির প্রতি সম্মান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয় ভারতে।

বাংলাদেশ জাতীয় নারী দলের হয়ে ১৯৯৯ থেকে ২০১১ পর্যন্ত মাঠ মাতিয়ে বেড়িয়েছেন চামেলী খাতুন। ২০১০ সালের এশিয়া কাপের রানার আপ হওয়া দলের হয়ে মাঠ মাতান এই দাপুটে ক্রিকেটার। এর বাইরে ঢাকা বিভাগে খেলেছেন টানা। দুই মৌসুম শেখ জামালের ক্যাপ্টেন হিসেবে সামনে থেকে টেনে নিয়ে গেছেন দলকে। সেই তিনিই পরাস্ত হন ইনজুরিতে। এখন তাঁর চিকিৎসা চলছে।

আরও পড়ুন : ক্রিকেটার চামেলী হাসপাতাল থেকে গেষ্ট হাউসে

এসএইচ-০২/০৭/১২ (সুমন হাসান)