নারী ক্রিকেটার চামেলী পেলেন নতুন জীবন

বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় চামেলী খাতুন পেলেন নতুন জীবন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সার্বিক সহযোগিতায় দীর্ঘ দেড় মাসের চিকিৎসা শেষে ঢাকা থেকে বেসরকারি বিমান নভোএয়ারের একটি ফ্লাইটে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী হযরত শাহমুখদুম বিমানবন্দরে পৌছান। এর অাগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভারতের ব্যাঙ্গালুরুর থেকে বেসরকারি বিমান জেট এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে দেশে ফিরেছেন ঢাকা হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌছান।

মুলত চামেলীর দাবির প্রতি সম্মান দেখিয়ে চিকিৎসা করা হয় ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে। শীর্ষ পর্যায়ের স্পর্শ বেসরকারি অর্থপেডিক হাসপাতালের ডাক্তারের তত্ত্বাবধায়নে ১৭ দিন ধরে তাঁর চিকিৎসা চলে। বুধবার দুপুর ১২টার দিকে মহানগরীর দরগাপাড়া এলাকার নিজ বাড়িতে ফেরেন পদ্মা পাড়ের এই মেয়ে। অাগামী তিন মাস পর অাবার তাঁকে চেকঅাপের জন্য যেতে হবে ভারতে। প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসার ব্যয়ের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ি তাঁকে ৫ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে বুধবার সকালে বিষয়টি জানানো হয়েছে বলে জানান এই অলরাউন্ডার।

চামেলী জানান, আগের তুলনায় অনেকটা সুস্থ্যবোধ করছেন এখন। তবে দীর্ঘ এই জার্নির কারেন পা কিছুটা ফুলেছে। তবে তা সেরে যাবে। চিকিৎসকের পরামর্শে ধীরে ধীরে চলাফেরার চেষ্টাও করছেন। তবে এখনও সেভাবে পারছেন না। ভারতের ব্যাঙ্গালুরুর শীর্ষ পর্যায়ের স্পর্শ বেসরকারি অর্থপেডিক হাসপাতালে চামেলীর ডান পায়ের লিগামেন্টের অস্ত্রোপচার হয়েছে ২৬ নভেম্বর। দু’দিন হাসপাতালে অবজারভেশেন থাকার পর ড্রেসিংসহ অন্যান্য চিকিৎসার জন্য ৯ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকতে হয় তাঁকে। এসময় কালিন থাকেন হাসপাতালের ঠিক দক্ষিণে দুই মিনিটের হাঁটা পথে সোয়েতা গেস্ট হাউজে। এখান থেকেই প্রতিদিনের ড্রেসিং আর অন্যান্য চিকিৎসা নেন। ৮ ডিসেম্বরঐ হাসপাতালে সেলাই কাটার কথা থাকলেও অপারেশনস্থানের সার্বিক বিবেচনা করে অাগামী ২২ ডিসেম্বর সেলাই কাটার পরামর্শ দেয়া হয়েছে তাঁকে। স্থানীয় হাসপাতালেই তা কাটা হবে।

স্পর্শ হাসপাতালের অর্থপেডিকের ডা. প্রশান্ত তেজওয়ানির বরাত দিয়ে তিনি জানান, পায়ের পরিস্থিতি উন্নতির দিকে রয়েছে। পুরোপুরি সেরে উঠতে আরও এক বছর সময় লাগবে। বর্তমানে স্ট্রেচারে ভর দিয়ে অন্য সদস্যের সাহায্য নিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে। এইভাবে চলবে ছয়মাস। তারপর স্বাভাবিকভাবে পা ফেলতে পারবেন। এ সময়ের মধ্যে তাঁকে নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হবে এবং কিছু ফিজিওথেরাপি নিতে হবে। অাগামী বছরের মার্চে অাবারো তাঁকে যেতে হবে ভারতের ঐ হাসপাতালে চেকঅাপের জন্য। এই তিন মাসের সার্বিক চিকিৎসার সবকিছু বুঝিয়ে দিয়েছেন পদ্মা পাড়ের এই মেয়েকে। এক বছর পর মাঠে ফিরতে পারবেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার অালম, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান পাপন, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, সদর অাসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশাসহ সকল শুভাকািঙ্খদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে চামেলী বলেন, সকলের সার্বিক সহযোগিতার কারনে নতুনভাবে জীবন ফিরে পেলেন। নইলে হয়ত ব্যয়বহুল এই চিকিৎসা তাঁরপক্ষে করা সম্ভব হতনা।

২০১১ সালে ক্রিকেটার চামেলীর পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়ায় দীর্ঘদিন থেকে অবস্থান করছিলেন রাজশাহী মহানগরীর দরগাপাড়ার জরাজীর্ণ বাড়ির একটি ঘরে। বিষয়টি পদ্মানিউজ২৪ ডটকমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে অনেকেই তার পাশে এসে দাঁড়ান। এ সময় তার চিকিৎসার সকল দায়িত্ব নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গত ২ নভেম্বর রাজশাহী থেকে ঢাকা নিয়ে ভর্তি করা হয় জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতালে) ২১৬ নং কেবিনে। সেখানে প্রাথমিক পর্যায়ের পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে হাসপাতালেই চিকিৎসার প্রস্তুতি শরু হয়। কিন্তু চামেলী দাবি করেন ভারতে চিকিৎসার জন্য। তার দাবির প্রতি সম্মান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয় ভারতে। গত ২৩ নভেম্বর চিকিৎসার জন্য ভারতের ব্যাঙ্গালুরুর যান। সেখানকার বেসরকারী স্পর্শ অর্থপেডিক হাসপাতালে ভর্তি হন ২৫ নভেম্বর।

বাংলাদেশ জাতীয় নারী দলের হয়ে ১৯৯৯ থেকে ২০১১ পর্যন্ত মাঠ মাতিয়ে বেড়িয়েছেন চামেলী খাতুন। ২০১০ সালের এশিয়া কাপের রানার আপ হওয়া দলের হয়ে মাঠ মাতান এই দাপুটে ক্রিকেটার। এর বাইরে ঢাকা বিভাগে খেলেছেন টানা। দুই মৌসুম শেখ জামালের ক্যাপ্টেন হিসেবে সামনে থেকে টেনে নিয়ে গেছেন দলকে। সেই তিনিই পরাস্ত হন ইনজুরিতে। এখন তার চিকিৎসা চলছে।

পড়ুন : দেশে ফিরেছেন চামেলী

এসএইচ-০২/১২/১২ (সুমন হাসান)