সিরিজ জয় বাংলাদেশের

সিলেটের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের টেস্ট অভিষেক হয়েছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুঃস্বপ্নের হার দিয়ে। তবে ওয়োনডে অভিষেকটা রঙিন হলো জয়ের রঙে। সেই জয়ের সঙ্গে মিশে থাকল সিরিজ জয়ের বাড়তি আনন্দও। সিলেটে অলিখিত ফাইনালে রূপ নেওয়া তৃতীয় ম্যাচে ৮ উইকেটে জিতে তিন ম্যাচের সিরিজটা ২-১ ব্যবধানে জিতে নিল বাংলাদেশ।

ঢাকার মিরপুরে প্রথম ম্যাচের মতো এদিনও জয়ের রাস্তাটা তৈরি করে দেন বোলাররা। দুর্দান্ত বোলিংয়ে ক্যারিবীয়দের বেঁধে ফেলে ৯ উইকেটে মাত্র ১৯৮ রানে। জবাবে তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকারের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে ১১.৩ ওভার বাকি থাকতেই পৌঁছে গেছে লক্ষ্যে (২০২/২)।

কাগজে-কলমে ওয়ানডে সিরিজটা ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে বাংলাদেশের। কিন্তু সিরিজের বাস্তব চিত্রটা বলছে, বাংলাদেশের দ্বৈরথটা ছিল আসলে এক শাই হোপের সঙ্গে! মোটেও বাড়াবাড়ি নয়। মিরপুরে দ্বিতীয় ম্যাচে ক্যারিবীয় ওপেনার একাই হারিয়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশকে। একপ্রান্ত আগলে রেখে খেলেছিলেন ১৪৪ বলে হার না মানা ১৪৬ রানের অসাধারণ এক ইনিংস।

শুক্রবার সিলেটে সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ম্যাচেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসটা এক শাই হোপময়। বাংলাদেশি বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের মুখে ক্যারিবীয়রা ৯ উইকেট হারিয়ে করতে পারে মাত্র ১৯৮ রান। এর ১০৮ রানই করেন হোপ একা। এক প্রান্ত আগলে রেখে এদিনও তিনি ব্যাট করেছেন পুরো ৫০ ওভার। ক্যারিবীয় ইনিংসের বাকি ৯০ রানের মধ্যে ১৬ রান এসেছে অতিরিক্ত থেকে। মানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাকি ১০ ব্যাটসম্যান মিলে করেছেন মাত্র ৭৪!

এই তথ্যই বলে দিচ্ছে হোপ বাদে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অন্য সব ব্যাটসম্যানই করেছেন আসা-যাওয়ার মিছিল। মিরাজ, সাকিব, মাশরাফিদের তাণ্ডবের মুখে উইকেটে কোমড় সোজা করে দাঁড়াতেই পারেননি কেউ। হোপের সেঞ্চুরি বীরত্বের পরও তাই ক্যারিবীয় ইনিংস আটকে যায় ২০০-এর নিচে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইনিংসটি ১৯ রানের। যেটি খেলেছেন মারলন স্যামুয়েলস। এছাড়া দুই অঙ্ক ছুঁয়েছেন আর মাত্র দুজন। কেমো পল ১২ ও ড্যারেন ব্রাভো করেছেন ১০ রান।

বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল মেহেদী হাসান মিরাজ। ১০ ওভারে মাত্র ২৯ রান দিয়ে তিনি নিয়েছেন ৪ উইকেট। এছাড়া সাকিব ও মাশরাফি নিয়েছেন ২টি করে উইকেট। একটি উইকেট নিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ।

১৯৯ রানের সহজ লক্ষ্য তাড়ায় তামিম ও লিটন দাসের উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৪৫ রান। লিটন ২৩ রান করে ফিরে যাওয়ার পর সৌম্যকে নিয়ে জুটি বাঁধেন তামিম। দ্বিতীয় উইকেটে তাদের ১৩১ রানের জুটিতেই মূলত নিশ্চিত হয়ে যায় জয়। কারণ, সৌম্য যখন আউট হন, দল তখন জয় থেকে মাত্র ২৩ রান দূরে।

দলকে জয়ের পথে নিয়ে যেতে তামিম-সৌম্য দুজনেই করেছেন হাফসেঞ্চুরি। সৌম্য ৮০ রান করে ফিরলেও তামিম মাঠ ছেড়েছেন জয় সঙ্গে নিয়ে। সে সময় তার সঙ্গী ছিলেন মুশফিকুর রহীম। যিনি করেছেন অপরাজিত ১৬। তামিম খেলেছেন ১০৪ বলে ৮১ রানের হার না মানা ইনিংস। যে ইনিংসটি তিনি চার মেরেছেন ৯টি।

সৌম্যর ব্যাটের ধার ছিল আরও বেশি। তিনি ৮১ বলে করেছেন ৮০ রান। এই পথে তিনি সমান ৫টি করে ছক্কা-চার মেরেছেন। তবে তামিম বা সৌম্য নন, ম্যাচসেরার পুরস্কারটি উঠেছে বল হাতের নায়ক মিরাজের হাতে। আর সিরিজ সেরা? এই সান্ত্বনাটুকু পেয়েছেন দুর্দান্ত সেঞ্চুরির পরও হারের তেতো স্বাদ হজম করা ক্যারিবীয় ওপেনার শাই হোপ।

টানা দুই ম্যাচে অপরাজিত সেঞ্চুরি। প্রথম ম্যাচেও করেছিলেন ৪৩ রান। তিন ম্যাচে ২৯৭ রান। গড়ও ২৯৭! সিরিজ সেরার পুরস্কারটি তার প্রাপ্যই। তবে সিরিজ জয়ের পর ওই পুরস্কার নিয়ে বাংলাদেশিদের আফসোস থাকার কথা নয়।

এসএইচ-১৩/১৪/১২ (স্পোর্টস ডেস্ক)