মেসির ফ্রি কিকের রহস্য ফাঁস

সামনে ৫-৬ জনের মানবপ্রাচীর তৈরি করা তো বটেই; তার ফ্রি কিক ঠেকানোর জন্য প্রতিপক্ষ দলগুলো কত কৌশলই তো করেন। কোন পজিশনে থাকলে শট রুখে দেওয়া যাবে, গবেষণা করে তা বের করেই কৌশলমতো অবস্থান নেন প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডার, গোলরক্ষকরা। কিন্তু প্রতিপক্ষের কোনো কৌশলই কাজে আসে না। ফ্রি কিক থেকে হরহামেশাই প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডার-গোলরক্ষকদের বোকা বানাচ্ছেন লিওনেল মেসি। এই মৌসুমে এরই মধ্যে সরাসরি ফ্রি কিক থেকে করেছেন ৪টি গোল। গত ৮ ডিসেম্বর এসপানিওলের বিপক্ষে এক ম্যাচেই ফ্রি কিক থেকে গোল করেছেন দুটি।

মেসির এই ফ্রি কিক সাফল্যের রহস্য কি? কিভাবে তিনি এমনভাবে মাপা শট নিয়ে থাকেন যে, তার শট জাল জড়াতে দেখেও গোলরক্ষকদের করার কিছু থাকে না! রহস্য উদঘাটনের গবেষণা চলছে সেই শুরু থেকেই। তবে এবার বুঝি রহস্যটা আবিষ্কারই করে ফেলেছে স্প্যানিশ ক্রীড়া দৈনিক মার্কার ফুটবল বিশ্লেষকরা। গবেষণা করে তারা বের করেছে, মোট ৩টি ভিন্ন ভঙ্গিতে ফ্রি কিক নিয়ে থাকেন মেসি।

প্রথম দেখায় কৌশলগুলো একই রকম মনে হতে পারে। তবে একটু খেয়াল করে দেখলেই স্পষ্ট, ফ্রি কিক নেওয়ার সময় তার শারীরিক ভঙ্গি একেক সময় থাকে একেক রকম। কখনো শরীরটা একটু বেশি বাঁকিয়ে নেন। যেন বলটাও তার শরীরের মতোই বাঁক নেয়। কখনো হাত প্রসারিত করেন, তো কখনো দুহাতই থাকে বুকের সামনে। কখনো শরীরের পুরো ভরটা রাখেন ডান পায়ের পাতার ডগার উপর। কখনো বা ডানের পুরো পাতাটাই মাটিতে রাখেন।

শট নেওয়ার সময় কখনো বাঁ-হামের বুটের ডগা ব্যবহার করেন। কখনো শট নেন বাঁ-পায়ের পাতাটা ৫০ ড্রিগি অ্যাঙ্গেল করে। বার বার একই ভঙ্গিতে শট নিলে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডার-গোলরক্ষকরা কৌশল ধরে ফেলতে পারে, তাই তাদের বোকা বানানোর জন্যই একেক সময় একেক কৌশল।

প্রথমে বলটা নিজের মতো করে মাটিতে বসান। এরপর নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড়িয়ে মাথাটা উপরের দিকে তুলে শরীরটা ধনুকের মতো বাঁকিয়ে শট নেন। তার সেই বাঁকানো শট বাতাসে উড়ে গিয়ে প্রতিপক্ষ গোলরক্ষককে অসহায় দর্শক বানিয়ে ঢুকে যায় জালে। যা তাকে দিয়েছে বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা ফ্রি কিক স্পেশালিস্টের তকমা।

মজার ব্যাপার হলো, ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে কিন্তু মেসি ফ্রি কিকে এতোটা দক্ষ ছিলেন না। এতোটা নিখূঁত ছিল না। বার্সেলোনার মূল দলের হয়ে মেসির শুরুটা ২০০৪-০৫ মৌসুমে। তবে প্রথম দুই মৌসুমে তিনি কোনো ফ্রি কিকই নেননি। তৃতীয় অর্থাৎ ২০০৬/০৭ মৌসুমে নেন একটি ফ্রি কিক। কিন্তু তার সেই ফ্রি কিক গোলের ঠিকানা পায়নি।

২০০৭/০৮ মৌসুমে নেন ৫টি ফ্রি কিক। কিন্তু তার একটিকেও গোলের ঠিকানা দিতে পারেননি। সরাসরি ফ্রি কিক থেকে গোলের জন্য তাই তাকে অপেক্ষা করতে হয় ২০০৮-০৯ মৌসুম পর্যন্ত। ফ্রি কিক থেকে প্রথম সেই গোলটিও তিনি করেন ওই মৌসুমে নেয়া ৭ ফ্রি কিকের সর্বশেষ শটটিতে। মানে ১৩ নম্বর ফ্রি কিক থেকে প্রথম গোল করেন তিনি।

তবে সেই শুরু। সেই থেকে গত ১১ মৌসুমেই ফ্রি কিক থেকে গোল করেছেন তিনি। তবে সাফল্যের হার গত দুই মৌসুমেই সবচেয়ে বেশি। গত মৌসুমে ফ্রি কিক থেকে গোল করেছেন ৭টি। এ মৌসুমে এরই মধ্যে করে ফেলেছেন ৪টি। মৌসুমের বাকি পথ তো পড়েই আছে।

পরিসংখ্রানের পাতা ঘেটে মার্কা আবিষ্কার করেছে, ক্যারিয়ারজুড়ে মেসি এ পর্যন্ত ফ্রি কিক নিয়েছেন ৪০৭টি। তাতে তিনি সরাসরি গোল করেছেন ৩৮টি। ক্যারিয়ারের প্রথম দিকের তুলনায় এখন গোল সাফল্য বেশি বটে; তবে তিনি এখন শটও নেন বেশি।

২০০৮/০৯ মৌসুমে ৭ শটে এক গোল করার কথা তো আগেই বলা হয়েছে। ২০০৯/১০ মৌসুমে ১৬ শটে করেন ২ গোল। ২০১০/১১ মৌসুমে ২১ শটে ১টি। ২০১১/১২ মৌসুমে ৪৯ শটে করেন ৩ গোল। ২০১২/১৩ মৌসুমে ৪৪ শটে ৩টি, ২০১৩/১৪ মৌসুমে ৩৬ শটে ৩টি। ২০১৪/১৫ মৌসুমে ৫০ শটে ২টি, ২০১৫/১৬ মৌসুমে ৪২ শটে ৪টি। ২০১৬/১৭ মৌসুমে ৪৫ শটে ২, ২০১৭/১৮ মৌসুমে ৭২ শটে করেন ৭ গোল। এবার ১৯ শটেই করে ফেলেছেন ৪ গোল। মৌসুমের এখনো অর্ধেকও হয়নি। এবার তাই ফ্রি কিক গোলে রেকর্ড গড়াই হাতছানী বার্সেলোনার আর্জেন্টাইন তারকার সামনে।

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে মেসির মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ব্রাজিল কিংবদন্তি পেলে। তিনি মেসিকে আখ্যায়িত করেছেন এক পায়ের খেলোয়াড় বলে। হ্যাঁ, মেসি ফ্রি কিকগুলোও বাঁ-পায়েই নেন বটে; তবে তার দর্শনীয় ফ্রি কিক গোলগুলো পেলের সমালোচনাকে মিথ্যা বলেই প্রমাণ করে।

এসএইচ-০৪/১৫/১২ (স্পোর্টস ডেস্ক)