বিশ্ব রেকর্ড গড়ে জিরো থেকে হিরো

বিশ্ব দরবারের কথা বাদ দিন। ২২ বছর বয়সী আলিস আল ইসলাম বাংলাদেশের ক্রিকেট মহলেই বলতে গেলে অচেনা। সেই অচেনা আলিসই অভিষেকে গড়ে ফেললেন অনন্য এক বিশ্ব রেকর্ড। টি-টুয়েন্টিতে অভিষেকেই হ্যাটট্রিক করে বনে গেলেন জিরো থেকে হিরো।

আসলে বলা উচিত ভিলেন থেকে হিরো বনে গেছেন আলিস ইসলাম। আজ রংপুরের বিপক্ষে হাই-ভোল্টেজ ম্যাচটি দিয়েই বিপিএলে অভিষেক হলো তার। কিন্তু অভিষেকেই ভিলেন বনে যাওয়ার পথটা পরিস্কার করে ফেলেন। ব্যাট হাতে মাঠে নামার সুযোগই পাননি। ফিল্ডিংয়ে নামার পর ঢাকা ডায়নামাইটসের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান তখনো তাকে বল হাতে দেননি।

মানে তার অভিষেকটা তখনো ফিল্ডিংয়েই আটকা। কিন্তু সেই ফিল্ডিং করতে গিয়েই করে বসলেন দুদুটি অমার্জনীয় ভুল! পরপর দুই বলে দুবার আনারিপনা করে ক্যাচ ফেললেন মোহাম্মদ মিঠুনের। সেই মিঠুন রাইলি রোসোর সঙ্গে মিলে গড়লেন ১২১ রানের জুটি। যে জুটিতে জয়ের পথটা অনেকটাই সহজ হয়ে যায় রংপুরের। আলিসের আনারি হাতে ১৮ ও ১৯ রানে দাঁড়িয়ে দুবার জীবন পাওয়া মিঠুন নিজেও খেললেও ৩৫ বলে ৪৯ রানের ইনিংস।

ঢাকা ম্যাচটা হারলে ব্যর্থতার বড় দায়টা অভিষিক্ত আলিসের ঘাড়েই পড়ত নিশ্চিত। তিনি হয়ে যেতেন ভিলেন। কিন্তু ক্রিকেট দেবতা তাকে ভিলেণ থেকে হিরো বানিয়ে দিল। ভাগ্য দেবতার আশির্বাদে আলিস প্রথমে বিপদের সবচেয়ে বড় কাটা হয়ে উঠা রাইলি রোসোকে আউট করে ঢাকাকে ম্যাচে ফেরালেন। মাত্র ৪৪ বলে ক্যারিয়ার সেরা ৮৩ রানের ইনিংস খেলে প্যাভিলিয়নে ফেরেন রোসো।

এরপর ইংলিশ অলরাউন্ডার রবি বোপারাকে ফেরালেন সাকিব। আলিস রূপকথার গল্প তখনো কল্পনার বাইরে। অবশেষে সেই গল্পের শুরুটা হলো ১৮তম ওভারের চতুর্থ বলে। দুবার যার ক্যাচ ছেড়েছেন, হ্যাটট্রিকপর্বের প্রথমেই সেই মিঠুনকে ফেরালেন। পরের দুই বলে ফেরালেন রংপুর অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা ও ফরহাদ রেজাকে। অভিষেকেই হ্যাটট্রিক পূর্ণ করে নাম লেখালেন ইতিহাসের পাতায়। টি-টুয়েন্টিতে এর আগে বিশ্বের কেউই অভিষেকে হ্যাটট্রিক করতে পারেননি।

আলিসের এই হ্যাটট্রিক জাদুর পরও অবশ্য জয় রংপুরের হাতের নাগালেই ছিল। শেষ দুই ওভারে মাশরাফির দলের দরকার ছিল ২২ রান। পরের ওভারে আন্দ্রে রাসেল তুলে নেনর ২ উইকেট। ফেরান সোহাগ গাজী ও বেনি হাওয়েলকে। নাটকীয়তা হয়েছে শেষ ওভারেও। শেষ ওভারে রংপুরের দরকার ছিল ১৪ রান। সাকিব বল তুলে দেন হ্যাটট্রিক নায়ক আলিসের হাতেই।

তার প্রথম দুই বলেই দুটি বাউন্ডারি মারেন শফিউল ইসলাম। সমীকরণ তখন রংপুরের জন্য আরও সহজ। ৪ বলে দরকার ৬ রান। শফিউল পরের বলে নিলেন ১ রান। ৩ বলে দরকার ৫। নাজমুল পরের বলে রানই নিতে পারলেন না। শেষ ২ বলে দরকার ৫। পঞ্চম বলে নাজমুল নিলেন ১। শেষ বলে দরকার ৪। কিন্তু শফিউল ১ রানের বেশি নিতে পারেননি। মানে ঢাকার ১৮৩ রানের জবাবে রংপুরের দৌড় থামে ১৮১ রানে। ঢাকার অবিশ্বাস্য জয়ের শেষটা আচড়ও তাই হ্যাটট্রিক নায়ক আলিসের হাতেই।

৪ ওভার বোলিং করে ২৬ রানে রেকর্ড গড়া হ্যাটট্রিকসহ ৪ উইকেট। দলকে নাটকীয় জয় এনে দেওয়ার ম্যাচে ম্যাচসেরার পুরস্কারটাও পেয়েছেন তিনিই। আক্ষরিক অর্থেই আলিস জিরো থেকে হিরো।

এসএইচ-১৫/১১/১৯ (স্পোর্টস ডেস্ক)