রিয়াল ছাড়ছেন কোন ৭ জন?

একি সর্বনাশা সংবাদ চাউর হলো গণমাধ্যমে? খবরটি নিশ্চিতভাবেই রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থকদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো। একজন নয়, দুজন নয়—মৌসুম শেষে ছয় সাতজন তারকা খেলোয়াড় রিয়াল ছাড়বেন? স্পেনের গণমাধ্যমে এমন সংবাদই ঘুরতে শুরু করেছে। এক যোগে ক্লাব ছাড়ার সম্ভাবনার দৌড়ে থাকা সেই ৭ তারকার নামগুলো শুনে রিয়াল সমর্থকদের পিলে চমকে যাওয়ারই কথা। ব্যালন ডি’অর জয়ী লুকা মড্রিচ, মার্সেলো, কেইলর নাভাস, গ্যারেথ বেল, ইসকো, জেসুস বায়েজো এবং মাত্রই কদিন আগে কিনে আনা মারিয়ানো দিয়াজ—এই ৭ জনই নাকি মৌসুম শেষে রিয়াল ছেড়ে পাড়ি জমাতে পারেন নতুন কোনো ঠিকানায়!

খেলোয়াড় বিক্রি করে নয়। বিশ্ব ফুটবল অঙ্গনে রিয়াল, রিয়াল হয়েছে নামীদামী খেলোয়াড় কিনে। বরাবরই বস্তায় বস্তায় টাকা ঢেলে তারকা খেলোয়াড় কিনে চমকে দিয়েছে বিশ্বকে। কিন্তু ২০১৪ সালের পর থেকেই সেই রিয়ালেই যেন অন্য জোয়ার। নামীদামী খেলোয়াড় কেনা নয়, বরং রিয়াল তারকা খেলোয়াড় বিক্রি করতেই বেশি আগ্রহী!

গত ৪ বছরে বড় কোনো খেলোয়াড়কেই কেনেনি রিয়াল। উল্টো বিক্রি করেছে হামেশ রদ্রিগেজ, আলভারো মোরাতা, অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়াদের মতো তারকাদের। তারও আগে বিক্রি করেছে গঞ্জালো হিগুয়েইনকে। এবং সর্বশেষ বিক্রি করেছে ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সুপারস্টার ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোকে।

দীর্ঘ ৯ বছর রিয়ালকে দুহাত ভরে দেওয়া রোনালদো অবশ্য নিজ ইচ্ছাতেই রিয়াল ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছেন জুভেন্টাসে। তবে তাকে বিক্রি করলেও রিয়াল এখন পর্যন্ত তার বিকল্প কাউকে কিনতে পারেনি বা কিনেনি। সামনেও কিনতে পারবে কিনা বলবে সময়। এই অবস্থার মধ্যেই ভেসে উঠল ভয়ে কাঁপন ধরানো ওই সংবাদ।

খবরটিকে স্রেফ ফাঁপা আওয়াজ বলে একেবারে উড়িয়েও দেওয়া যাচ্ছে না। গত গ্রীষ্মের দলবদলের সময়ই ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার মার্সেলো ও ব্যালন ডি’অর জয়ী ক্রোয়েশিয়ান মিডফিল্ডার লুকা মড্রিচকে ঘিরে গরম গুঞ্জন ছিল। ইতালিয়ান ক্লাব ইন্টার মিলান তো মড্রিচের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করে প্রস্তাবও দিয়েছিল। এবং সেই প্রস্তাবে প্রাথমিক সম্মতিও জানিয়েছিলেন মড্রিচ। শেষ পর্যন্ত চুক্তিটা না হলেও ইন্টার মিলান মড্রিচের পিছু ছাড়েনি। বরং তলতলে নাকি যোগাযোগ অব্যাহতই রেখেছে।

একইভাবে মার্সেলোকে জড়িয়েও গুঞ্জন চলেছে বেশ। ব্রাজিলিয়ান এই ডিফেন্ডারকে কেনার ক্রেতার নাম জুভেন্টাস। প্রিয় বন্ধু রোনালদোই নাকি তলেতলে মার্সেলোকে ফুসলাচ্ছেন জুভেন্টাসে নেওয়ার জন্য। আর প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে পুণর্মিলনীর আশায় মার্সেলোও নাকি রাজি। আগামী গ্রীষ্মে তাই ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডারের রিয়াল ছাড়ার সম্ভাবনাই প্রবল বলে মনে করছে স্প্যানিশ গণমাধ্যম।

রিয়ালে যোগ দেওয়ার পর থেকেই রোনালদোর ছায়া হয়ে ছিরেন গ্যারেথ বেল। ফলে প্রতি গ্রীষ্মেই তার দল বদলের গুঞ্জন শোনা যেতো। কিন্তু গেল মৌসুমে রোনালদো জুভেন্তাসে পাড়ি জমানোর পর রিয়ালের প্রধান তারকা হওয়ার সুযোগ ছিল বেলের সামনে। দলও তেমনটিই চাইছিল। কিন্তু বাজে পারফরম্যান্সের কারণে তা আর হয়ে ওঠেনি। ফলে রিয়ালের সমর্থকরাই আর দলে চাইছেন না ওয়েলেস এই ফরোয়ার্ডকে।

তালিকায় থাকা আরেক নাম ইসকো। স্প্যানিশ এই মিডফিল্ডারের রিয়াল ছাড়ার বিষয়টি বলতে গেলে এক রকম নিশ্চিতই। কোচ সান্তিয়াগো সোলারির সঙ্গে ২৫ বছর বয়সী ইসকোর সম্পর্কটা এখন ঠিক সাপে-নেউলের মতো। কেউ কাউকে দেখতেই পারছেন না।

এই অবস্থায় এই জানুয়ারিতেই রিয়াল ছাড়ার পাকা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন ইসকো। রিয়ালও তাকে বিক্রি করে দিতে রাজি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হয়তো জানুয়ারিতে তার ক্লাব ছাড়া হচ্ছে না। তবে সোলারি কোচ থাকলে, মৌসুম শেষে যে ইসকোর ঠিকানা হবে নতুন কোথাও, তাতে কোনো সংশয় নেই।

এরপর রয়েছেন কেইলর নাভাস। ২০১৪ বিশ্বকাপের পর লেভান্তে ছেড়ে রিয়ালে যোগ দেওয়ার পর থেকে গত মৌসুম পর্যন্ত দলের এক নম্বর গোলরক্ষক ছিলেন তিনি। গত ৫ মৌসুমের মধ্যে ৪ বারই রিয়ালকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জেতাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও রেখেছেন তিনি। কিন্তু এখন আর কোস্টা রিকান এই গোলরক্ষকের ওপর রিয়াল কর্তাদের ততটা আস্থা নেই। তাই গত গ্রীষ্মে চেলসি থেকে বেলজিয়ান গোলরক্ষক থিবো কুর্তোইসকে কিনে এনেছে রিয়াল।

শুধু কিনে আনা নয়। কুর্তোইসকে দলের এক নম্বর গোলরক্ষকের মর্যাদাও দিয়ে দেওয়া হয়েছে। লিগ এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচ হলেই গ্লাভস জোড়া তুলে দেওয়া হয় তার হাতে। আর এতদিনের ভরসা ৩২ বছর বয়সী নাভাসের ডাক পড়ে কেবল কম গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট কোপা ডেল রের ম্যাচ হলে! বয়স হলেও নাভাস এখনই বেঞ্চ গরম করে কাটাতে রাজি নন।

বরং সব ধরনের প্রতিযোগিতাতেই দলের এক নম্বর গোলরক্ষকের চ্যালেঞ্জটা নিতে তিনি প্রস্তুত। তাই তিনি রিয়াল ছেড়ে অন্য কোথাও পাড়ি জমানোর কথাই ভাবছেন। যদিও কিছুদিন আগে রিয়ালের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করেছেন। কিন্তু স্পেনের গণমাধ্যম বলছে, মৌসুম শেষে নাভাসের রিয়াল ছাড়ার সম্ভাবনাই প্রবল।

এরপর আছেন জেসুস ভায়েজো। ২২ বছর বয়সী এই স্প্যানিশ ডিফেন্ডারের রিয়ালের মূল দলে অভিষেক ২০১৫ সালে। অথচ গত সাড়ে তিন মৌসুমে রিয়ালের জার্সি গায়ে তিনি মাঠে নেমেছেন মাত্র ৭ বার! দুই বছর অবশ্য স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল জারাগোজা ও জার্মান ক্লাব ফ্রাঙ্কফ্রুটের হয়ে ধারে খেলেছেন। কিন্তু ২০১৭ সাল থেকে তিনি আবার ফিরে এসেছেন রিয়ালে। কিন্তু ম্যাচ খেলার সুযোগই মিলছে না। গত মৌসুমে তবু ৭টি ম্যাচ খেলেছেন। এ মৌসুমে এখনো মাঠে নামা হয়নি। মানে পুরোটা সময়ই কাটছে বেঞ্চ গরম করে।

স্পেনের তরুণ ডিফেন্ডার তাই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন রিয়াল ছাড়ার। তিনি এমন একটা ক্লাবে যেতে চান, যেখানে গেলে খেলতে পারবেন নিয়মিত। মৌসুম শেষে তার দল বদলানোর বিষয়টি মোটামুটি নিশ্চিত বলেই জানা গেছে।

তালিকার সর্বশেষ নাম মারিয়ানো দিয়াজ। স্পেনের ২৫ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড রিয়ালেরই ঘরের ছেলে। তবে ২০১৭ সালে তাকে বিক্রি করে দিয়েছিল ফরাসি ক্লাব অলিম্পিক লিঁ’ওর কাছে। গত গ্রীষ্মে আবার তাকে লিঁ’ও থেকে ফিরিয়ে এনেছে। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে তাকে ফিরিয়ে আনা, মারিয়ানোর কাছ থেকে রিয়াল তা পাচ্ছে না। ব্যাক আপ ফরোয়ার্ড হিসেবে তেমন কাজেই আসছেন না। এ পর্যন্ত ১০ ম্যাচ খেলে করেছেন মাত্র ১টি গোল।

গণমাধ্যমের খবর, তাকে তাই আবার বিক্রি করে দেওয়ার কথাই ভাবছে রিয়াল। মারিয়ানোও এরই মধ্যে বুঝে গেছেন, নিয়মিত খেলতে হলে তাকে ছাড়তে হবে রিয়াল। কারণ, অলিম্পিক লিঁ’ওতে তিনি ছিলেন দলের এক নম্বর ফরোয়ার্ড। প্রতিটা ম্যাচেই ছিলেন কোচের অটোমেটিক চয়েজ। সেই মারিয়ানো রিয়ালে এসে মাঠে নামার সুযোগই তেমন পাচ্ছেন না। যাও বা সুযোগ পান, মাঠে নামতে হয় বদলি হিসেবে!

সম্ভাবনা অনুযায়ী এই ৭ জনই যদি খুঁজে নেন নতুন ঠিকানা, সেটি সত্যিকার অর্থেই রিয়ালের জন্য হবে বড় এক ধাক্কা।

এসএইচ-২১/১৮/১৯ (স্পোর্টস ডেস্ক)