একমাসেরও কম, ২৯ দিন পর পর্দা উঠবে বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আসরের। তারও আগে আয়ারল্যান্ডে তিন জাতি (বাংলাদেশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর আয়ারল্যান্ড) ক্রিকেটে অংশ নেবে মাশরাফির দল।
আপাতত গন্তব্য আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ডাবলিন। এইতো আজ বেলা ১১টার সময় ডাবলিনের পথে যাত্রা শুরু করেছে টাইগাররা। এমিরেটসের ফ্লাইটে দুবাই হয়ে ডাবলিন। বিশ্বকাপ মিশনের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে আয়ারল্যান্ড যাত্রা করা মাশরাফি, তামিম, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, সৌম্য, সাব্বির, মিঠুন, লিটন, মোস্তাফিজ, মোসাদ্দেক ও মিরাজরা এখন বিমানে।
তারা ভাল খেলে পারফরমেন্সের উজ্জ্বল আভায় মাঠ আলোকিত করে সফল হয়ে ফিরে আসুন- গোটা জাতির কামনা সেটাই। পাশাপাশি ক্রিকেটার, কোচ তথা জাতীয় দলের বহরের নিরাপত্তা নিয়েও আছে চিন্তা।
কেন থাকবে না? ক্রাইস্টচার্চের সেই লোমহর্ষক, পৈশাচিক ও বর্বোরোচিত প্রাণসংহারি হামলায় হতবিহ্বল অবস্থায় দেশে ফেরার পর কেটেছে মাত্র ৪৭ দিন। তারপর আবার দেশের বাইরে পাড়ি জমিয়েছে প্রিয় জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা। আত্মীয়, পরিজন, স্বজন, ভক্ত, সমর্থক, সুহৃদ শুভানুধ্যায়ী তথা গোটা জাতি যে শুধুই তাদের সাফল্য কামনায় উন্মুখ- তা নয়। ক্রিকেটার, কোচিং স্টাফ তথা পুরো দলের জীবনের নিরাপত্তা নিয়েও চিন্তিত, উদ্বিগ্ন।
সবাই দলের সাফল্য কামনার পাশাপাশি সৃষ্টিকর্তার আনুকূল্য ও দয়াও কামনা করছেন কায়মনে। পাশাপাশি একটি প্রশ্ন সবার মনে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে- ‘আচ্ছা ক্রিকেটারদের জন্য আয়ারল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যে কেমন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে? সেটা কি পর্যাপ্ত? বিসিবি কি সন্তুষ্ট?’
এর বাইরে বলা হয়েছিল বিসিবি নিজ উদ্যোগ ও খরচেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করবে। প্রয়োজন হলে দেশ থেকে নিরাপত্তা কর্মী নিয়ে যাওয়া হবে। তার খবর কি ?
এমন সময়োচিত ও কৌতুহলি প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে জানা গেল, বিসিবি ক্রিকেটার, বিদেশি-দেশি কোচিং স্টাফ, টিম অফিসিয়ালসহ পুরো দলের নিরাপত্তা জোরদার করতে সচেষ্ট। পুরো দলকে একটা বাড়তি নিরাপত্তার চাঁদরে ঢেকে রাখারও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বাড়তি নিরাপত্তার অংশ হিসেবে আয়ারল্যান্ডে তিন জাতি টুর্নামেন্ট চলাকালীন ১৬-১৭ দিন (১৭ মে ফাইনাল শেষে ১৮ মে যুক্তরাজ্য যাবে জাতীয় দল) আইরিশ নিরাপত্তা কর্মীদের নিরাপত্তা বেষ্টনি ছাড়াও টিম বাংলাদেশের সাথে সার্বক্ষণিক ৭ সদস্যের প্রাইভেট সিকিউরিটি ফোর্স নিয়োগ করা হবে।
আয়ারল্যান্ডে বাংলাদেশ হাইকমিশন ঐ স্থানীয় প্রাইভেট সিকিউরিটি ফোর্স নিয়োগের ব্যবস্থা করবে। সেই আইরিশ প্রাইভেট নিরাপত্তা কর্মীদের কাজ সূচারুভাবে সম্পাদন ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকবেন বিসিবির প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা মেজর (অব.) হোসেন ইমাম। বলে রাখা ভাল তিনি কাল (মঙ্গলবার দিবাগত রাত ভোর তিনটায়) ভোরেই রাজধানী ত্যাগ করেছেন।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের মিডিয়া ম্যানেজার রাবিদ ইমাম জানান, ‘একটি বিদেশি দল হিসেবে নিয়ম ও প্রথা অনুযায়ী আইরিশ সরকার এবং ক্রিকেট বোর্ড টিম বাংলাদেশের সবরকম নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে। তারা তাদের কাজ করবে। এর বাইরে আয়ারল্যান্ডে যে বাংলাদেশ হাই কমিশন আছে, তাদের সহায়তা ও মধ্যস্থতায় ৭ জনের একটি নিরাপত্তা দল নিয়োগ দেয়া হবে। যার সমুদয় খরচ বিসিবি বহন করবে।
বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা লাঞ্চ-ডিনার, ঘুরতে যাওয়া ও নামাজ পড়াসহ দল বেঁধে যখন যেখানে হোটেলের বাইরে যাবেন, তখন ঐ নিরাপত্তা বাহিনী তাদের ছায়াসঙ্গী হয়ে নিরাপত্তার চাঁদরে ঢেকে রাখবে। ঐ আইরিশ প্রাইভেট নিরাপত্তা কর্মী বাহিনীর পুরো কার্যক্রম মনিটর করবেন বিসিবি প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা মেজর ( অব ) হোসেন ইমাম।’
১৮-২৩ মে থাকবে বৃটিশ প্রাইভেট সিকিউরিটি ফোর্স
এখানেই শেষ নয়। বিশ্বকাপ শুরুর আগে ইংল্যান্ডেও পাঁচ থেকে ছয়দিনের জন্য সাত সদস্যের আরও একটি প্রাইভেট নিরাপত্তা বাহিনী নিয়োগ দেয়া হবে। সেটাও যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাই কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হবে। সেই বৃটিশ প্রাইভেট সিকিউরিটি ফোর্স টিম বাংলাদেশের নিরাপত্তার কাজে ব্যস্ত থাকবে ডাবলিনে তিন জাতি টুর্নামেন্ট শেষে ১৮ মে থেকে।
১৮ মে থেকে ২৩ মে সকাল অবধি বাংলাদেশ জাতীয় দল নিজেদের খরচে লিস্টারশায়ারে অবস্থান করবে, ট্রেনিংয়ে থাকবে। ঐ পাঁচ থেকে ছয়দিনের থাকা, খাওয়া ও নিরাপত্তার সমুদয় খরচ বিসিবিকেই বহন করতে হবে।
২৩ মে থেকে দল আইসিসির আতিথ্য পাবে। ২৩ মে থেকে আইসিসি সব দলের আবাসন, খাবার, যাতায়াত ও নিরপত্তার সমুদয় দায় দায়িত্ব নিয়ে নিবে। তার আগে আয়ারল্যান্ডের তিন জাতি আসর শেষে লিস্টারশায়ারে অবস্থানকালীন সময়ে একটি বৃটিশ প্রাইভেট সিকিউরিটি ফোর্স মাশরাফি বাহিনীর সাথে থাকবে। সেই দলের সমুদয় কাজ কর্ম মনিটর করবেন বিসিবির দুর্নীতি দমন কর্মকর্তা মেজর মোর্শেদ।
তারপর আগামী ২৩ মে থেকে আর বিসিবির ব্যক্তিগত গরজ ও খরচের প্রয়োজন নেই। কারণ তখন থেকে একদম বিশ্বকাপ যাত্রার শেষ দিন পর্যন্ত প্রতিটি প্রতিযোগী দলের থাকা, খাওয়া, যাতায়াত, প্র্যাকটিস সুবিধা প্রদান ও আনুসাঙ্গিক সবরকম সুযোগ সুবিধা দেবে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি। সাথে স্বাগতিক যুক্তরাজ্য সরকার ও ইংলিশ-ওয়েলশ ক্রিকেট বোর্ডও থাকবে। ঐ সময়ে অন্য সব দলের সাথে বাংলাদেশ দলের নিরাপত্তা ব্যবস্থার সমুদয় দায়-দায়িত্বও আইসিসি এবং স্বাগতিকদের। তাই ২৪ মে থেকে ৫ জুলাই শেষ ম্যাচ অবধি আর পৃথক কোন প্রাইভেট সিকিউরিটি ফোর্স নিয়োগের সম্ভাবনা নেই বাংলাদেশ দলের।
এসএইচ-২৪/০১/১৯ (স্পোর্টস ডেস্ক)