আফ্রিদির আসল বয়স কত?

ক্রিকেটের জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ক্রিকইনফোয় প্রবেশ করলে সেখানে আপনি পৃথিবীর যে কোনো ক্রিকেটারেরই প্রোফাইল দেখতে পাবেন। তার পুরো ক্যারিয়ার এবং তার জন্ম, বয়স, দেশ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত তথ্য পাবেন সেখানে। পাকিস্তানের লিজেন্ডারি ক্রিকেটার, বুম বুম নামে বিখ্যাত শহিদ আফ্রিদির প্রোফাইলে প্রবেশ করলে দেখতে পাবেন তার জন্ম তারিখ দেয়া ১ মার্চ, ১৯৮০ সালে। জন্মস্থান খাইবার এজেন্সি।

জন্মসাল হিসেবে ১৯৮০ সাল দেয়া থাকলেও শহিদ আফ্রিদির সত্যিকার বয়স নিয়ে তুমুল রহস্যঘেরা। ক্রিকেটের যে সব রহস্যাবৃত বিষয় রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে আফ্রিদির বয়সও যেন বড় একটি রহস্যের আধার।

অবশেষে সেই বিশাল রহস্যের সমাধান হয়ে গেছে। শহিদ আফ্রিদি নিজেই সমাধান করলেন। জানালেন তার সত্যিকারের বয়স। নিজের লেখা আত্মজীবনীর একটি অধ্যায়েই আফ্রিদি নিজের সঠিক বয়স জানালেন।

এ সপ্তাহেই পাকিস্তান এবং ভারতে একসঙ্গে প্রকাশ হয়েছে আফ্রিদির আত্মজীবনি গেম চেঞ্জার। সেই আত্মজীবনীতেই আফ্রিদি জানিয়েছেন, তার সত্যিকার জন্মসাল হচ্ছে ১৯৭৫ সাল। অর্থ্যাৎ, পিসিবি থেকে শুরু করে ক্রিকেটের অফিসিয়াল সব রেকর্ডে আফ্রিদির বয়স ৫ বছর করে কম দেখানো হয়েছিল।

ক্রিকিইনফো থেকে শুরু করে ক্রিকেটের অফিসিয়াল সব রেকর্ডে দেয়া আফ্রিদির জন্মসাল নিয়ে আগে থেকেই সন্দেহ পোষণ করতেন অনেক ক্রিকেট সমর্থক। তারা বিশ্বাস করতো, আফ্রিদিকে যেভাবে দেখানো হয়, আসলে সে এতটা কম বয়সী নয়, আরও বেশি বয়সী। অবশেষে সেটাই প্রমাণিত হলো।

১৯৯৬ সালের অক্টোবরে পাকিস্তান দলে আফ্রিদির অভিষেক নিয়ে বলতে গিয়েই নিজের প্রকৃত জন্ম তারিখ সম্পর্কে জানান শহিদ আফ্রিদি। ১৯৭৫ সাল উল্লেখ করলেও কোন মাসের কত তারিখে জন্মগ্রহণ করেছেন, সেটাই জানাননি তিনি। তবুও, কাগজ-পত্রের হিসেবে ৫ বছর বড় তিনি।

১৯৯৬ সালে নাইরোবিতে ত্রি-দেশীয় সিরিজে অভিষেক হয়েছিল আফ্রিদির এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথমে ব্যাট করতে নেমেই ৩৭ বলে সেই বিখ্যাত সেঞ্চুরিটি করে বসেন তিনি। যে রেকর্ড টিকে ছিল প্রায় ১৭ বছর। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, তখন বলা হতো মাত্র ১৬ বছর বয়সেই সেই সেঞ্চুরিটি করেছিলেন আফ্রিদি।

কিন্তু আফ্রিদির নিজের কল্যাণেই এখন জানা যাচ্ছে, ওই সেঞ্চুরিটি করার সময় আফ্রিদি সত্যি সত্যি ১৬ বছরের কিশোর ছিলেন না। তখন তার বয়স ছিল আরও ৫ বছর বেশি। আবার আফ্রিদি নিজেই তার আত্মজীবনিতে একটা সংশয় তৈরি করে দিয়েছেন। তিনি সেখানে লিখেছেন, ‘এবং ওই রেকর্ডের সময় আমার বয়স ছিল ১৯। তবে সবাই যে বলে ১৬, সেটা সত্য নয়। আমি জন্ম গ্রহণ করেছি ১৯৭৫ সালে। তবে, কর্তৃপক্ষ আমার বয়সটাকে ভুলভাবে উল্লেখ করেছিল।’

কিন্তু সমস্যা হলো আফ্রিদি যদি, ১৯৭৫ সালেই জন্মগ্রহণ করে থাকেন, তাহলে ৩৭ বলে সেই সেঞ্চুরিটির সময় তার বয়স হবে ২০-এর শেষ দিকে কিংবা ২১ বছর। কোনোভাবেই ১৯ হবে না, যেটা তিনি নিজে লিখেছেন।

নাইরোবিতে সেই সিরিজে খেলার জন্য আফ্রিদি এসেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে। যেখানে তিনি খেলছিলেন, একটি অনুর্ধ্ব-১৯ সিরিজ। কিন্তু এখন তো বোঝা যাচ্ছে, ওই সময় তিনি মোটেও অনুর্ধ্ব-১৯ বয়সের ছিলেন না।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অনেক আগেই অবসর নিয়েছেন তিনি। তবে, এখনও খেলে যাচ্ছেন পিএসএল-বিপিএলসহ ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট। তার নিজের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, ৪৩ কিংবা ৪৪ বছর বয়সে তিনি খেলেছেন পিএসএল এবং সেখানে মুলতান সুলতানের হয়ে ৮ ম্যাচ খেলে ৬.৪৭ ইকনোমি রেটে রান দিয়ে নিয়েছেন ১০ উইকেট। অর্থ্যাৎ, এই বয়সে এখনও উজ্জ্বল পারফরম্যান্স তার।

১৯৭৫ সালে জন্ম নিলে, তিনি যে ২০১০ সালে হঠাৎ করেই টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছিলেন, তখন তার বয়স ছিল ৩৫ কিংবা ৩৬। চার বছর পর টেস্টে ফিরেই হয়েছিলেন টেস্ট অধিনায়ক। কিন্তু এক ম্যাচ নেতৃত্ব দিয়েই হঠাৎ করে টেস্ট থেকে অবসর ঘোষণা করেন তিনি।

আফ্রিদির নিজের স্বীকারোক্তিতেই বোঝা যাচ্ছে, ২০১৬ সালে বিশ্বকাপ টি-টোয়েন্টি খেলে তিনি যখন পুরোপুরি অবসর নিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে, তখন তার বয়স ৩৬ নয়, ছিল ৪০ কিংবা ৪১।

এসএইচ-০৪/০৩/১৯ (স্পোর্টস ডেস্ক)