নিজের লেখা আত্মজীবনীমূলক বই ‘গেম চেঞ্জার’-এ একের পর এক চমক উপহার দিয়েই চলেছেন শহীদ আফ্রিদি। এবার বেরিয়ে এল অন্যরকম এক তথ্য।
নিজের বইয়ে আফ্রিদি লিখেছেন, ১৯৯৬ সালে সেই রেকর্ড সেঞ্চুরিটি তিনি করেছিলেন শচীন টেন্ডুলকারের ব্যাট দিয়ে!
আফ্রিদির সেই রেকর্ড সেঞ্চুরি ইনিংসটির কথা মনে আছে নিশ্চয়। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডেতেই অবাক করে দিয়েছিলেন ক্রিকেট বিশ্বকে। ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর কেনিয়ার বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচে ব্যাট করারই সুযোগ পাননি। ৪ অক্টোবর প্রথমবার ওয়ানডেতে ব্যাট করতে নেমেই তুলেন ঝড়। জয়সুরিয়া, মুরালিধরনদের পিটিয়ে মাত্র ৩৭ বলেই সেঞ্চুরিপূর্ণ করে গড়েন দ্রুততম ওয়ানডে সেঞ্চুরির রেকর্ড। তার সেই রেকর্ড টিকে ছিল অনেক দিন।
চার ও ১১ ছক্কায় শেষ পর্যন্ত ৪০ বলে করেন ১০২ রান। মাত্র ৫০ মিনিট উইকেটে থেকেই সেঞ্চুরি, জয়সুরিয়া, মুরালিদের উপর দিয়ে বইয়ে যাওয়া তরুণ আফ্রিদির ঝড় কতটা প্রবল ছিল, সহজেই অনুমেয়। কিন্তু, আফ্রিদি নিজেই জানালেন তার সেই রেকর্ড সেঞ্চুরিতে অবদান ছিল টেন্ডুলকারেরও। কারণ, সেঞ্চুরিটা তিনি করেছিলেন টেন্ডুলকারের ব্যাট দিয়েই।
প্রশ্ন উঠতে পারে, ভারতের টেন্ডুলকারের ব্যাট পাকিস্তানের অনভিজ্ঞ তরুণ আফ্রিদির কাছে যায় কি করে? আফ্রিদি ব্যাটটা কিভাবে পেয়েছিলেন? উত্তরটা আফ্রিদি নিজেই দিয়েছেন।
আত্মজীবনী ‘গেম চেঞ্জার’-এ নিজেই লিখেছেন, ‘আমাকে আসলে ব্যাটটা দিয়েছিলেন ওয়াকার (ইউনুস) ভাই? বলতে পারেন ওয়াকার ভাইকে ব্যাটটা কে দিয়েছিল? শচীন টেন্ডুলকার! তাই বলতে পারেন, নাইরোবিতে শহীদ আফ্রিদির প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরিটি টেন্ডুলকারের ব্যাট দিয়ে করা।’
প্রশ্ন উঠতে ওয়াকার ইউনুসকে কেন, কি উপলক্ষে ব্যাটটা দিয়েছিলেন টেন্ডুলকার? সেই উত্তরও দিয়েছেন আফ্রিদি। আসলে ওই ব্যাটটি ছিল টেন্ডুলকারের ভীষণ পছন্দের। স্বাভাবিক ব্যাটগুলোর তুলনায় একটু বেশিই চওড়া। তো টেন্ডুলকার নিজের অতি পছন্দের ব্যাটটা ওয়াকার ইউনুসকে দিয়েছিলেন বিশেষ একটা কারণে।
পাকিস্তানের শিয়ালকোট তখন ক্রিকেট সরাঞ্জামাদি তৈরির জন্য বিখ্যাত ছিল। ব্যাটও বানাতো বিশেষ যত্ন সহকারে। টেন্ডুলকার তাই নিজের পছন্দের ব্যাটটির আরেকটি ব্যাট শিয়ালকোট থেকে বানাতে চেয়েছিলেন। তিনি তাই বন্ধু ওয়াকারকে ব্যাটটা দিয়েছিলেন এ রকম আরেকটা ব্যাট বানিয়ে দিতে।
তো ওয়াকার শিয়ালকোটের ব্যাট নির্মাতার কাছে যাওয়ার আগে ব্যাটটা নিয়ে যান নাইরোবিতে। ব্যাটিংয়ে নামার আগে ওয়াকার নিজেই ব্যাটটা দেন আফ্রিদিকে।
আফ্রিদিই লিখেছেন, ‘ব্যাটটি শিয়ালকোটে নেয়ার আগে সে কি করেছিল জানেন? ব্যাটিংয়ে নামার আগে সে ব্যাটটি আমাকে দিয়েছিল। তাই বলা যায় শহীদ আফ্রিদির প্রথম সেঞ্চুরিটি এসেছে টেন্ডুলকারের সেরা ব্যাট দিয়ে।’
‘গেম চেঞ্জার’-এ ওই রেকর্ড সেঞ্চুরির সঙ্গে সম্পর্কিত আরও একটি চমকপদ তথ্যও দিয়েছেন আফ্রিদি। সেই চমকটি অবশ্য তার নিজের বয়স নিয়ে। ক্রিকেট দুনিয়া জানে, আফ্রিদি সেই রেকর্ড ইনিংসটি খেলেছিলেন মাত্র ১৬ বছর বয়সে। কিন্তু, এতদিন পর আফ্রিদির দাবি, ১৬ নয়, ওই ইনিংসটি খেলার সময় তার বয়স ছিল ১৯।
তিনি লিখেছেন, ‘রেকর্ডের ব্যাপারে যদি বলতে হয়, আমি তখন ১৯ বছরের ছিলাম, ১৬ বছরের নয়। আমার জন্ম ১৯৭৫ সালে। কর্তৃপক্ষ আমার বয়স লুকিয়েছে।’
আত্মজীবনীতে আফ্রিদির এই নিজের বয়স সংক্রান্ত তথ্যে অবশ্য বড়সড় একটা গড়মিল রয়েছে। রেকর্ড অনুযায়ী আফ্রিদির জন্ম ১৯৮০ সালে। সেই হিসেবেই ১৯৯৬ সালে সেঞ্চুরিটা করার সময় তার বয়স ছিল ১৬। কিন্তু, আফ্রিদি তখন নিজের বয়স ১৯ ছিল দাবি করলেও জন্ম সন বলেছেন ১৯৭৫। সত্যিই যদি তার জন্ম ১৯৭৫ সালে হয়, তাহলে তো ১৯৯৬ সালে সেঞ্চুরিটি করার সময় তার প্রকৃত বয়স হওয়ার কথা ২১। আফ্রিদি কিভাবে যে ১৯ মেলালেন আল্লাহ জানেন!
এসএইচ-২০/০৫/১৯ (স্পোর্টস ডেস্ক)