ক্রিকেট ইতিহাসে টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ

এবার আর ভুল করলেন না মাশরাফি বাহিনী। চারটি ওয়ানডে টুর্নামেন্ট, দুটি টি-টোয়েন্টি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফাইনাল মানেই ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের আক্ষেপ। শুক্রবার ডাবলিনে কি সে আক্ষেপ দূর হলো বাংলাদেশের। কঠিন লক্ষ্যটা থাকলেও ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে উইন্ডিজদের হারিয়ে প্রথম শিরোপা জিতলো বাংলাদেশ। মাশরাফি বিন মোর্ত্তজার নেতৃত্বে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ বাদে এই প্রথম কোনো ট্রফি জয়ের স্বাদ পেলো টাইগাররা। ক্যারিবীয়ানদের ৫ উইকেটে হারিয়ে দিয়েছে লাল-সবুজের জার্সিধারীরা। বল বাকি ছিল আরও ৭টি।

ডাবলিনে বৃষ্টির কারণে ম্যাচটি বন্ধ থাকে। আবার বল মাঠে গড়ালেও ম্যাচ নামিয়ে আনা হয় ২৪ ওভারে। তাতে ক্যারিবীয়ানরা ১ উইকেট হারিয়ে তোলে ১৫২ রান। বৃষ্টি আইনে (ডাকওয়ার্থ লুইস মেথডে) টাইগারদের টার্গেট দাঁড়ায় ২১০ রান। ২২.৫ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে নোঙ্গর করে টাইগাররা।

প্রথমে সৌম্য সরকারের ঝড়, এরপর শেষ দিকে এসে ঝড় তুললেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। সৌম্যর ২৭ বলে হাফ সেঞ্চুরির পর মোসাদ্দেকের ২০ বল হাফ সেঞ্চুরি। এই দুই ঝড়ো ইনিংসের ওপর ভর করে এই প্রথম নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে কোনো টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হলো বাংলাদেশ।

ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে ২৪ ওভারে ২১০ রানের বিশাল লক্ষ্য পাড়ি দিতে নেমে মোসাদ্দেকে ঝড়ের সামনে ৭বল হাতে রেখেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেলো বাংলাদেশ।

সৌম্য সরকারের ব্যাটে জয়ের স্বপ্নটা চওড়া হচ্ছিল খুব। ২৭ বলে হাফ সেঞ্চুরি করে সেটা আরও বাড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ৪১ বলে ৬৬ রান করার পর সৌম্য বিদায় নিতেই জয়ের কাজটা ধীরে ধীরে কঠিন হতে শুরু করে।

মুশফিকুর রহীম, মোহাম্মদ মিঠুনরাও চেষ্টা করেন রানের চাকা সমানতালে এগিয়ে নিতে। কিন্তু নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়তে থাকায় সেটা আরও কঠিন হয়ে যায়।

দলীয় ১০৯ রানের মাথায় রেমন রেইফারের স্পিন ঘূর্ণিতে বিভ্রান্ত হয়ে ছক্কা মারতে যান সৌম্য। লং অনে ধরা পড়েন সেলডন কটরেলের হাতে। মুশফিকুর রহীম করেন ২২ বলে ৩৬ রান। মিঠুনের ব্যাট থেকে আসে১৪ বলে ১৭ রান।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ করলো ২৪ ওভরে ১৫২ রান। জিততে হলে বাংলাদেশকে করতে হবে ২১০ রান। ক্রিকেটের অদ্ভূত বৃষ্টি আইন এটা। ডাকওয়ার্থ আর লুইস তৈরি করেছেন এই গাণিতিক হিসাব-নিকাশ।

জয়ের জন্য ২১০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে উড়ন্ত সূচনাই করেছিল বাংলাদেশ। দুই ওপেনার তামিম ইকবাল এবং সৌম্য সরকারের উড়ন্ত সূচনার পর ৫.৩ ওভারেই তারা গড়ে ফেলে ৫৯ রানের জুটি। ১৩ বলে ১৮ রান করে আউট হয়ে যান তামিম ইকবাল।

তিন নম্বরে ব্যাট করতে নামেন সাব্বির রহমান। কিন্তু যে কারণে তাকে আগে নামানো হলো, সেটা মোটেও কাজে লাগলো না। শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে কোনো রান না করেই ফিরে গেলেন সাব্বির রহমান। সাকিব আল হাসান না থাকার অভাবটা ভালোই টের পাওয়া গেলো। চার নম্বরে ব্যাট করতে নামেন মুশফিকুর রহীম।

এর আগে বৃষ্টির কারণে লম্বা সময় ধরে ম্যাচ বন্ধ থাকার পর আবারও খেলা শুরু হয়েছে বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১০টায়। কার্টেল ওভারে ম্যাচটি নির্ধারণ করা হয় ২৪ ওভারের। সেই নির্ধারিত ২৪ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ করেছে ১৫২ রান।

কিন্তু বৃষ্টি আইন ডার্কওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে বাংলাদেশের সামনে জয়ের জন্য লক্ষ্য দাঁড়ালো ২১০ রান। ওভার সেই ২৪টিই।

টস জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাট করতে নামার পর ২০.১ ওভারে বিনা উইকেটে ১৩১ রান তোলার পরই নামে বৃষ্টি। সে অবস্থায় দীর্ঘ সময় ধরে খেলা বন্ধ থাকার পর আবার বাংলাদেশ সময় সাড়ে ১০টায় খেলা শুরুর ঘোষণা দেয়া হয়।

বৃষ্টির আগে সাই হোপ ছিলেন ৫৬ বলে ৬৮ এবং সুনিল আমব্রিস ৬৫ বলে ব্যাট করছিলেন ৫৯ রানে। এরপর খেলা শুরু হলে ৬৪ বলে ৭৪ রান করে আউট হন সাই হোপ। মেহেদী হাসান মিরাজের বলে তার ক্যাচ ধরেন মোসাদ্দেক সৈকত।

সুনিল আমব্রিস ৭৮ বলে থাকেন ৬৯ রানে অপরাজিত। ড্যারেন ব্র্যাভো অপরাজিত থাকেন ৩ বলে ৩ রান করে।

এসএইচ-০১/১৮/১৯ (স্পোর্টস ডেস্ক)