নেইমারের দরপতন!

যদি প্রশ্ন করা হয় বর্তমান বিশ্বে মেসি বা রোনালদোর বাইরে ফুটবলের সেরা খেলোয়ার কে? কেউ বলবে হ্যাজার্ড, কেউ চিৎকার করে বলবে এমবাপ্পে। যত নামই আসুক না কেন একটা নাম থাকবে সবার মুখে। ‘নেইমার’ এমন একটি নাম যাকে সব দলই পেতে চাইবে নিজেদের দলে। কিন্তু সব দলের তো সামর্থ্য নেই নেইমারকে দলে ভেড়ানোর।

বার্সেলোনা থেকে রেকর্ড ২২২ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে নেইমারকে দলে নেয় পিএসজি। লিগ ওয়ান জেতা দলটি চ্যাম্পিয়নস লিগে সাফল্য পেতে খরচ করতে কার্পন্য করেনি পিএসজি মালিক নাসের আল খেলাইফি।

যে লক্ষ্য সামনে রেখে নেইমারকে উড়িয়ে এনেছিল পিএসজি তার সিকি ভাগও পূর্ণ হয়নি দুই মৌসুমে।এই হতাশার সাথে যোগ হয়েছে নেইমারের মার্কেট ভ্যালু। তবে এখন তাঁকে বিক্রি করতে গেলে মোটা অঙ্কের লোকসানের মুখেই পড়তে হবে ফরাসি ক্লাবটিকে। ছয় মাসের ব্যবধানে নেইমারের দাম যে প্রায় ১০০ মিলিয়ন কমে গেছে!

ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর স্পোর্টস স্টাডিজের (সিআইইস) প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য। সিআইইএস বলছে, ২০১৯ সালের শুরুতেও নেইমারের বাজারমূল্য ছিল ২১৩ মিলিয়ন ইউরো। অথচ ছয় মাস যেতে না যেতেই তাঁর মূল্য কমে এসে দাঁড়িয়েছে ১২০ মিলিয়ন ইউরোর কাছাকাছি! অর্থাৎ নতুন মৌসুম শুরুর আগেই নেইমারের দাম কমে গেছে প্রায় ১০০ মিলিয়ন।

দাম কমার যৌক্তিক কারণও অবশ্য আছে। ঘন ঘন চোটে পড়াটা গত মৌসুমের শেষের দিকে বেশ ভুগিয়েছে নেইমারকে। ফরাসি পত্রিকা লেকিপ জানিয়েছে, দুই বছর আগে পিএসজিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে দলটির মাত্র ৫২ শতাংশ ম্যাচে মাঠে নামতে পেরেছেন নেইমার। যেখানে একই সময়ে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো খেলেছেন ৭৭ শতাংশ ম্যাচ, আর লিওনেল মেসি খেলেছেন ৮৭ শতাংশ ম্যাচ।

এই মৌসুমে পিএসজির হয়ে লিগ ওয়ানে মাত্র ১৭টি ম্যাচে নামতে পেরেছেন নেইমার। চোটের কারণে খেলতে পারেননি চ্যাম্পিয়নস লিগের নকআউট পর্বের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলোও। যার খেসারত দিয়ে আরও একবার ইউরোপের সবচেয়ে আকর্ষণীয় টুর্নামেন্ট থেকে খালি হাতে বিদায় নিতে হয়েছে পিএসজিকে। গোড়ালির ইনজুরির কারণে খেলতে পারবেন না তিন দিন পর শুরু হতে যাওয়া কোপা আমেরিকাতেও।

তবে শুধু চোট নয়, নেইমারের দাম কমে যাওয়ার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে মাঠের বাইরের ঘটনাও। ঘরোয়া কাপের ফাইনালে রেনেঁর কাছে পেনাল্টিতে হেরে শিরোপা খোয়ানোর হতাশায় গ্যালারিতে এক দর্শককে ঘুষি বসিয়ে তিন ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন। কিছুদিন আগে উঠেছে আরও বড় অভিযোগ।

ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের অভিযোগ এনে নেইমারের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন ২৬ বছর বয়সী এক নারী। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে গিয়ে ওই নারীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও প্রকাশ্যে আনায় নেইমারের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের অভিযোগও এনেছে সাও পাওলো পুলিশ। তাঁর খোঁজে ব্রাজিলের ক্যাম্পে পর্যন্ত ঘুরে এসেছে পুলিশ।

এই ঘটনার পরপরই নেইমারের সঙ্গে আর বিজ্ঞাপন নির্মাণ না করার ঘোষণা দিয়েছে আমেরিকান বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান মাস্টারকার্ড। বিজ্ঞাপনী চুক্তি বাতিলের ঘোষণা আসতে পারে নাইকি ও রেড বুলের তরফ থেকেও।

সব মিলিয়েই সময়টা ভালো যাচ্ছে না ২৭ বছর বয়সী এই তারকার। দলবদলের বাজার কাঁপিয়ে দেওয়া নেইমারের দাম কমে যাওয়ায় মাঠ ও মাঠের বাইরের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলো প্রভাব ফেলেছে বেশ ভালোভাবেই।

এসএইচ-১৮/১২/১৯ (স্পোর্টস ডেস্ক)