বাংলাদেশ ১৪৮ রানে পিছিয়ে

চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে ১৪৮ রানে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। এদিন আফগানিস্তানের শেষ পাঁচ উইকেট মাত্র ৭১ রানেই তুলে নিয়েছিল টাইগারবাহিনী। কিন্তু লাভ হয়নি। আফগান বোলিং তোপে ১৪৬ রানে ৮ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

সেখান থেকে তাইজুল ইসলামকে নিয়ে ৪৮ রানের জুটি গড়েন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। তাতেই দিন শেষে টাইগারদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৮ উইকেটে ১৯৪ রান। তৃতীয় দিনে এই জুটির দিকেই তাকিয়ে থাকবে স্বাগতিক সমর্থকরা। মোসাদ্দেক হোসেন ৪৪ ও তাইজুল ইসলাম ১৪ রানে মাঠে অপরাজিত আছেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথম দিন ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের বোলারদের ভালোই ভুগিয়েছেন আফগান ব্যাটসম্যানরা। বিশেষ করে রহমত শাহ। আফগানিস্তানের হয়ে টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম সেঞ্চুরি করেন তিনি। তার সেঞ্চুরি এবং ৮৮ রানে থাকা আসগর আফগানের ব্যাটে ভর করে প্রথম দিন শেষে আফগানিস্তানের সংগ্রহ ছিল ৫ উইকেট হারিয়ে ২৭১ রান।

দ্বিতীয় দিন ব্যাট করতে নেমে দ্রুত বাকি ৫ উইকেট হারালেও ৩৪২ রানের বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করায় আফগানরা। ১০২ রান করে আউট হন রহমত শাহ। ৯২ রান করেন আসগর আফগান এবং শেষ মুহূর্তে হাফ সেঞ্চুরি করেন রশিদ খানও।

তাইজুল ইসলাম ৪১ ওভার বল করে নেন ৪ উইকেট। ২টি করে উইকেট নিলেন নাঈম হাসান এবং সাকিব আল হাসান। ১টি করে নেন মেহেদী হাসান মিরাজ এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

বাংলাদেশ ইনিংস ওপেন করতে নেমে রানের খাতা খোলার আগেই বিদায় নেন সাদমান ইসলাম। মূলতঃ একজন পেসারও না রেখে পুরোপুরি স্পিনার দিয়ে বোলিং অ্যাটাক সাজিয়েছিল বাংলাদেশ। বিপরীতে আফগানিস্তান দলে নেয়া হয়েছিল একজন পেসার। সেই এক পেসারে শুরুতেই কোণঠাসা বাংলাদেশ। স্কোরবোর্ডে কোনো রান যোগ করার আগেই ওপেনার সাদমান ইসলামকে ফিরিয়ে দেন আফগান পেসার ইয়ামিন আহমদজাই।

আফগান বোলারদের বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সামনে মনে হচ্ছিল এক একটি যম। শুধু ব্যাট নয়, পুরো শরীর দিয়ে বাঁচাতে হচ্ছে আফগান বোলারদের কাছ থেকে ছুটে আসা বলগুলো। এর মধ্যে এলবিডব্লিউর চান্সও থেকে যায়।

সেই এলবিডব্লিউর শিকারই হলেন সৌম্য সরকার। সাদমানের বিদায়ের পর জুটি বেঁধে বিপর্যয় কাটানোর চেষ্টা করেছিলেন সৌম্য আর লিটন কুমার দাস। ওয়ানডাউনে লিটনকে মাঠে নামানো ছিল হয়তো একটি বিশেষ পরিকল্পনার অংশ।

৩৮ রানের জুটি গড়ে এ দু’জন অনেকটাই সাবলীল হয়ে ওঠার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু ভুলটা করে বসলেন সৌম্য। মোহাম্মদ নবীর সোজা লেন্থ বলে এলবিডব্লিউর শিকার হয়ে গেলেন বাঁহাতি এই ওপেনার। ৬৬ বলে ১৭ রান করে বিদায় তিনি।

সৌম্য বিদায় নেয়ার পর মুমিনুল হকের সঙ্গে জুটি বাধার চেষ্টা করছিলেন লিটন দাস। কিন্তু দলীয় ৫৪ রানের মাথায় রশিদ খানের ঘূর্ণি বলে পুল করতে চেয়েছিলেন লিটন। কিন্তু বল উঠলো না এবং সোজা গিয়ে আঘাত হানলো স্ট্যাম্পে। বোল্ড হয়ে গেলেন তিনি ব্যক্তিগত ৩৩ রানে।

এরপর আসা-যাওয়ার মিছিলে যোগ দেন দলের দুই সিনিয়র ব্যাটসম্যান সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। রশিদ খানের একই ওভারে দু’জনেই মাঠ ছাড়েন। সাকিবকে (১১) এলবির ফাঁদে ফেলে পরে মুশফিককে ক্যাচে পরিণত করেন রশিদ। মুশফিক আউট হওয়ার পরই দ্বিতীয় দিনের দ্বিতীয় সেশন শেষ হয়।

৮৮ রানে ৫ম উইকেট হারিয়ে ফেলা বাংলাদেশের বিপদ বাড়িয়ে সাজঘরে ফিরেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও (৭)। রশিদ খানের বলে বোল্ড হয়ে বিদায় নিয়েছেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান।

টাইগার ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মাঝেই ১৩তম ফিফটি তুলে নেন মুমিনুল হক। বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন ৮টি। কিন্তু মোহাম্মদ নবীর বলে আগ্রাসী শট খেলতে আসগর আফগানের হাতে ক্যাচ তুলে দিলে শেষ হয় তার লড়াকু ইনিংস। তিনি ৭১ বলে করেন ৫২ রান।

রশিদ খানের করা ইনিংসের ৪৯তম ওভারে ২ রান নিয়ে দলকে ফলো-অন’র লজ্জা থেকে রক্ষা করেন লোয়ার মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান মোসাদ্দেক হোসেন। কিন্তু ৩ ওভার পরে তার সঙ্গী মেহেদী হাসান মিরাজ কাইস আহমেদের বলে সরাসরি বোল্ড হয়ে ৩১ বলে ১১ রান করে সাজঘরে ফিরেন।

এই টেস্টে কোনও পেসার ছাড়ায় মাঠে নেমেছে টাইগারবাহিনী। আর দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশের জার্সি গায়ে মাঠে নেমেছেন দলপতি সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশের দ্রুততম বোলার হিসেবে টেস্টে ১০০ উইকেটের মালিক হয়েছেন তাইজুল ইসলাম। এই রেকর্ড গড়তে তিনি পেছনে ফেলেছেন সাকিব আল হাসানকে। সাকিব ২৮ টেস্টে ১০০ উইকেট নিয়েছিলেন আর তাইজুল ২৫ টেস্টেই এই রেকর্ড গড়েছেন।

বাংলাদেশ একাদশ

সৌম্য সরকার, সাদমান ইসলাম, মমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, লিটন দাস, মোসাদ্দেক হোসেন, মেহেদী হসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম এবং নাঈম হাসান।

আফগানিস্তান একাদশ

ইহসানুল্লাহ, ইব্রাহিম জাদরান, রহমত শাহ, হাসমতুল্লাহ শাহিদী, আসগর আফগান, মোহাম্মদ নবী, আফসার জাজাই, রশিদ খান (অধিনায়ক), ইয়ামিন আহমেদজাই, কায়েস আহমেদ এবং জহির খান।

এসএইচ-২০/০৬/১৯ (স্পোর্টস ডেস্ক)