ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার ১৪ বছর বয়সেই বাবা

সম্প্রতি বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে আলোচনায় উঠে এসেছে ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার ওয়েসলি মোরায়েস। তার জীবন যুদ্ধের গল্প এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল।

মাত্র ১৪ বছর বয়সে প্রথম সন্তানের বাবা হন ওয়েসলি মোরায়েস। ১৬ বছর বয়সে ঘরে আগমন আরেকটি সন্তানের। চমকানোর মতো তথ্য হল দুই সন্তানের জননী দুজন।

নিজে বাবা হারিয়েছেন ৯ বছর বয়সে। মা, একের অধিক ভাই, দুই সন্তান ও দুই স্ত্রী; এমন একটি পরিবার নিয়ে খেই হারিয়ে ফেলার কথা যে কারও। কিন্তু ওয়েসলি মোরায়েসের ইস্পাত কঠিন মানসিকতা। জীবন যুদ্ধে লড়ে সফল হওয়ার তীব্র ইচ্ছা ছিল তার।

তরুণ বয়স থেকেই এই ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার তাই ‘জীবন যোদ্ধা’। লড়ে গেছেন একনাগাড়ে। আর এখন ইংল্যান্ডের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী ক্লাব অ্যাস্টন ভিলার স্ট্রাইকার তিনি। ভুলেছেন দুঃখ, ভুলেছেন কঠিন দিনগুলো। পরিবার নিয়ে এখন খুব সুখেই আছেন ২২ বছর বয়সী এই ব্রাজিলিয়ান।

এই মৌসুমে ভিলায় এসে ৮ ম্যাচে ৪ গোল করে ফেলা স্ট্রাইকার জানালেন কঠিন সেই দিনগুলোর কথা। জানালেন প্রথম সন্তানই তাকে এতদূর এনেছে। প্রথম সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিতেই ফুটবলকে পেশাদারিত্ব হিসেবে নিয়েছিলেন। প্রথম সন্তানের মুখের দিকে চেয়েই বিপথে পা না বাড়িয়ে পরিশ্রমকে সাফল্যের চাবিকাঠি মেনে নিয়েছেন। ২২ বছর বয়সী ওয়েসলি জানান, ‘আমার সন্তানরাই আমার এগিয়ে যাওয়ার শক্তি। আমাকে ছোট থেকেই পরিবার, সন্তান ও মা’র ব্যাপারে ভাবতে হয়েছে। মাত্র ১৪ বছরে আমি প্রথম সন্তানের বাবা হই। ওই সময়টা আমার জন্য খুব কঠিন ছিল। কারণ তখন ফুটবলার হিসেবে ক্যারিয়ার মাত্রই শুরু করি। অল্প কিছু অর্থ আসত ফুটবল খেলে। যা একটা পরিবার চালানোর জন্য যথেষ্ট ছিল না। তাই আমাকে সকালে একটি কারখানায় চাকরি করতে হতো এবং বিকালে ফুটবলের অনুশীলন।’

ব্রাজিলের জুই ডি ফোরা শহরে বিভিন্ন স্থানীয় দলের হয়ে ফুটসাল খেলতেন। ১০ বছর বয়সে সুযোগ হয় বাহিয়া রাজ্যের ইতাবুনা ক্লাবের যুব দলে। সেই দল থেকে অর্থের প্রয়োজনে ইউরোপে পাড়ি জমানোর চেষ্টা চালাতে থাকেন। মাত্র ১৫ বছর বয়সে সুযোগ পেয়ে যান স্লোভাকিয়ার দল এএস ট্রেনসিনে। সেখান থেকে এক বছরের মাথায় বেলজিয়ামের ক্লাব ব্রুজে। এই ক্লাবে ১০৭ ম্যাচ খেলে করেছেন ৩২ গোল। এরপর এই মৌসুমে অ্যাস্টন ভিলার ক্লাব রেকর্ড ২২ মিলিয়ন পাউন্ডে চলে আসেন ইংল্যান্ডে।

জানালেন খুব ছোট বয়সে বাবা হয়ে যাওয়াটাই তাকে এতদূর আসতে সাহায্য করেছে। আর নিজের এই উন্নতির কৃতিত্ব দিয়েছেন প্রথম সন্তানকে, ‘আমি ইউরোপ থেকে প্রতিদিন অনুশীলন শেষে মাকে ফোন দিতাম। মা আমার জন্য সব কিছু, বাবা মারা যাওয়ার পর তিনি আমাদের পরিবারকে আগলে রেখেছেন। আজ তার জন্য কিছু করতে পারছি ভেবে ভালো লাগছে। আমার এই পর্যায়ে আসার পেছনে সবটুকু কৃতিত্ব দেব আমার প্রথম সন্তানকে। তার জন্যই আমি ফুটবলে পেশাদার হওয়ার সবরকম কষ্ট করেছি। এখন আমি খুব খুশি যে প্রিমিয়ার লিগে খেলছি। প্রতি রাতেই আমি আগের কথাগুলো ভাবি, যখন আমার কিছুই ছিল না এবং ক্লাবগুলো আমাকে না করে দিত।’

এসএইচ-১০/২০/১৯ (স্পোর্টস ডেস্ক)