সাকিব-তামিমকে ছাড়াই টাইগারদের ভারত বধ

দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ৭ উইকেটের জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। ভারতের দেওয়া ১৪৯ রানের জয়ের লক্ষ্য ৩ বল হাতে রেখেই পেরিয়ে যায় টাইগাররা। মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে ভর করে ভারতের দেওয়া লক্ষ্য টপকে যায় বাংলাদেশ। মুশফিক করেন অপরাজিত ৬০ রান এবং অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ করেন ১৫ রান।

দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারেই লিটন দাস (৭) পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান। লিটন দাসের উইকেট নেন দিপক চাহার। এরপর অভিষিক্ত নাইম শেখ আর সৌম্য সরকার মিলে দলের হাল ধরেন। এই দুই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানমিলে টাইগারদের প্রাথমিক বিপর্যয় সামাল দেন। দ্বিতীয় উইকেটে গড়েন ৪৬ রানের জুটি। ইনিংসের ৮ম ওভারের শেষ বলে দলীয় ৫৪ রানের মাথায় যুজবেন্দ্রা চাহালের প্রথম শিকার হয়ে ফিরে যান নাইম শেখ। আউট হয়ে ফিরে যাওয়ার আগে ২৮ বলে ২৬ রান করেন নাইম।

নাইম শেখ আউট হয়ে যাওয়ার পর মুশফিকের সঙ্গে ৬০ রানের জুটি গড়েন সৌম্য সরকার। তবে ইনিংসের ১৭তম ওভারের শেষ বলে খলিল আহমেদের বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান সৌম্য। আউট হওয়ার আগে ৩৫ বলে ৩৯ রান করেন সৌম্য। এরপর অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহকে সঙ্গে নিয়ে দলকে জয়ের পথে ধরে রাখেন মুশফিকুর রহিম। ইনিংসের ১৯তম ওভারে টাইগারদের প্রয়োজন তখনও ২২ রান। প্রথম বলে সিঙ্গেল নিয়ে রিয়াদকে স্ট্রাইক দেন মুশফিক। এরপরের বলে দৌড়ে প্রান্ত বদল করেন এই দুই ব্যাটসম্যান। শেষ চার বলেই ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেন মুশফিক। শেষ চার বলে খলিল আহমেদকে মারা চারটি বাউন্ডারিতে শেষ ওভারে টাইগারদের প্রয়োজন মাত্র ৪ রান।

শেষ ওভারে বল করতে আসেন শিভম দুবে। মাহমুদুল্লাহ স্ট্রাইকে থেকে প্রথম বলটি ডট দেন, এরপরের বলে ডাবল নিলে টাইগারদের দরকার তখন চার বলে মাত্র ২ রান। পরের বলে ওয়াইড দিলে স্কোর লেভেল হয়ে যায় এবং ২০তম ওভারের তৃতীয় বলে ওভার বাউন্ডারি মেরে দলকে জয় এনে দেন অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।

টাইগারদের ঐতিহাসিক ভারত সফর, তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে মুখোমুখি দুই দল। নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৬ উইকেট হারিয়ে ভারত সংগ্রহ করে ৬ উইকেটের বিনিময়ে ১৪৮ রান। ইনিংসের শুরুতে স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় সফরকারী বাংলাদেশ।

বোলিং করতে নেমে ইনিংসের প্রথম বলেই শফিউল ইসলামের শিকার হয়ে ফিরে যান ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা (৯)। প্রথম ওভারের শেষ বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন রোহিত (৯)। এরপর কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন শিখর ধাওয়ান এবং লোকেশ রাহুল। তবে সপ্তম ওভারের তৃতীয় বলে তরুণ লেগি আমিনুল ইসলাম বিপ্লবের বলে টাইগার অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন লোকেশ রাহুল (১৫)। স্কোরবোর্ডের ভারতের সংগ্রহ তখন ৩৬ রান।

তবে উইকেটের এক প্রান্ত আগলে রাখেন ওপেনার শিখর ধাওয়ান। অন্য প্রান্তের ব্যাটসম্যানরা আসা যাওয়ার মিছিলেই ছিল। ইনিংসের ১১তম ওভারে শ্রেয়াস আইয়ারকে (২২) নিজের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত করেন বিপ্লব। এরপর ভারতের স্কোরবোর্ডে শতক পূর্ণ হওয়ার আগেই উইকেটে থিতু ব্যাটসম্যান শিখর ধাওয়ান (৪১) ফেরেন রান আউট হয়ে। ব্যক্তিগত ৪১ রানে এবং দলীয় ৯৫ রানে ১৪.৫ ওভারে ফেরেন এই ওপেনার।

এরপর ইনিংসের ১৬তম ওভারের শেষ বলে ভারতের হয়ে অভিষিক্ত শিভম দুবেকে (১) দারুণ এক ক্যাচে প্যাভিলিয়নে ফেরান আফিফ হোসেন ধ্রুব। ১৯তম ওভার দ্বিতীয় স্পেলে বল করতে এসে নিজের ২য় উইকেট তুলে নেন শফিউল। ১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ডিপ মিড অনে নাইম শেখের তালুবন্দী হয়ে ফিরে যান রিশব পন্ত (২৬)। শেষ দিকে ক্রুনাল পান্ডিয়ার ১০ বলে ঝড়ো ৮ রানে ১৪৮ রানের পুঁজি পায় ভারত।

ভারতীয় ব্যাটিং ইনিংসের শেষ ওভারে অবশ্য মোস্তাফিজ ১৬ রান দিলে ভারতের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৬ উইকেটে ১৪৮ রান। টাইগারদের হয়ে ২টি করে উইকেট তুলে নেন শফিউল ইসলাম এবং আমিনুল ইসলাম বিপ্লব। শফিউল ৪ ওভারে ৩৬ রানের বিনিময়ে নেন ২ উইকেট আর ৩ ওভারে ২২ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন বিপ্লব।

এই ম্যাচ দিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হচ্ছে নাইম শেখের। আর অনুমিতভাবেই দলে আছেন তিন বছর পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা ডানহাতি পেসার আল আমিন হোসেন।

বাংলাদেশ একাদশ: লিটন দাস, সৌম্য সরকার, নাইম শেখ, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, আফিফ হোসেন ধ্রুব, শফিউল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান, আল-আমিন হোসেন এবং আমিনুল ইসলাম বিপ্লব।

ভারতীয় একাদশ: রোহিত শর্মা, শিখর ধাওয়ান, লোকেশ রাহুল, শ্রেয়াস আইয়ার, রিশব পন্ত, ক্রুনাল পান্ডিয়া, শিভম দুবে, ওয়াশিংটন সুন্দর, যুজবেন্দ্রা চাহাল, দিপক চাহার এবং খলিল আহমেদ।

বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে নিয়মিত অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে। আর ভারতের অধিনায়কত্বের ভার তুলে দেওয়া হয়েছে রোহিত শর্মার কাঁধে। আর সেই সঙ্গে দলে নেই ভারতীয় পেসার জাসপ্রিত বুমরাহ এবং হার্দিক পান্ডিয়ার মতো অল রাউন্ডারও। তবে রোহিত শর্মা, লোকেশ রাহুল ও শিখর ধাওয়ানকে নিয়ে গড়া টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টরারা ঠিকই আছে স্কোয়াডে।

ভারতের বিপক্ষে ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র ৮টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। তবে এই আট ম্যাচের মধ্যে একটিতেও জয়ের দেখা পায়নি টাইগাররা। নিজেদের শেষ তিন টি-টোয়েন্টি ম্যাচে জয়ের পেয়েছে বাংলাদেশ আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঘরের মাঠে সিরিজ ড্র করেছিল ভারত।

এসএইচ-২৬/০৩/১৯ (স্পোর্টস ডেস্ক)