পেনশনের টাকা জমিয়ে ভারতে টেস্ট দেখতে গেলেন মুক্তিযোদ্ধা

পাকিস্তানের জলিল চাচাকে সবাই চেনে। এমনকি ভারতে শচীনভক্ত সুধীরকেও চেনে না এমন কেউ নেই। বাংলাদেশের তেমন পরিচিত মুখ গড়ে উঠেছে। টাইগার মিলন কিংবা শোয়েব এখন গ্যালারিতে বেশ পরিচিত মুখ। বিশ্বের যেখানেই বাংলাদেশ খেলতে যাক না কেন, বাঘের চামড়ার আদলে পোশাক বানিয়ে, জাতীয় পতাকা হাতে টাইগার মিলন কিংবা শোয়েবের উপস্থিতি সেখানে যেন অবধারিত।

তবে এবার ইন্দোরে নতুন এক বাংলাদেশি ক্রিকেটের ভক্তের দেখা মিলল। ৮১ বছর বয়সী নুর বক্স যেন হার মানালেন সেই জলিল চাচা, সুধীর কিংবা টাইগার মিলনদের। কারও কাছ থেকে সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে নয় কিংবা কারও স্পন্সরেও নয়- নুর বক্স ইন্দোরের হলকার স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের খেলা দেখতে গেলেন সম্পূর্ণ নিজ খরচে।

৮১ বছর বয়সী এই বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধার যে অনেক টাকা-পয়সা তাও নয়। বাংলাদেশের ক্রিকেটের কঠিন এই ভক্ত ভারতে গিয়ে মুশফিক-মুমিনুলদের খেলা দেখার জন্য জমিয়েছেন নিজের পেনশনের টাকা। পেনশনের টাকা এবং অন্যান্য যত জমানো টাকা ছিল, সেগুলো সম্বল করেই ইন্দোরে হাজির হন নুর বক্স।

গায়ে জড়ানো একটি সবুজ রঙের সোয়েটার। পেছনে লেখা, ‘ডেডলি টাইগার্স’, মাথায় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা বেঁধে, হাতে একটি একতারা নিয়ে লোকসঙ্গীত গাইতে গাইতে হলকার স্টেডিয়ামের প্রবেশপথে হাজির হন মুক্তিযোদ্ধ নুর বক্স। তার বেশভুষা এবং হাতে একতারা ও গান শুনে সবাই থমকে দাঁড়ায়। জানতে চায়, কে ইনি। বাংলাদেশের কোন পাগলভক্ত, এভাবে চলে এলেন ভারতের ইন্দোরে।

কিন্তু পরক্ষণে টাইগারদের প্রতি তার প্রেম এবং ভালোবাসা দেখে সবাই অবাক হয়ে যান। নিজের জমানো টাকা-পয়সা আর পেনশন দিয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজ থেকেই ঘুরছেন ভারতের এক শহর থেকে আরেক শহরে। বাড়ি তার ঝিনাইদহে।

সংবাদকর্মীদের কাছে তিনি বলেন, ‘ঢাকা থেকে আমি কলকাতা ট্রেনে এসেছি। এরপর হাওড়া থেকে ট্রেনে এলাম দিল্লি। ট্রেনেই রাজকোট এবং নাগপুর গেলাম। সেখান থেকে ট্রেনে করে এলাম ইন্দোরে। ট্রেনে আসা-যাওয়ার কারণে আমার খরচ অনেক কম লেগেছে। কারণ আমি পেনশনের টাকায় জীবন নির্বাহ করি। বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটার মুশফিকুর রহীম আমাকে ম্যাচের টিকিট সংগ্রহ করে দিয়েছেন।’

শুধু এই সিরিজেই নয়, মুক্তিযোদ্ধা নুর বক্স ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন। ১৫ বছর ধরেই ভ্রমণ করে যাচ্ছেন বিভিন্ন জায়গায়। তিনি বলেন, ‘এর আগেও আমি ভারতে এসেছি কয়েকবার। শ্রীলঙ্কাও গিয়েছি বাংলাদেশের খেলা দেখতে। তবে ম্যাচের টিকিট কিনতে হয় না আমাকে। এ জন্য মুশফিকুর রহীমকে ধন্যবাদ জানাই, তিনি আমাকে টিকিটের ব্যবস্থা করে দেন।’

অনেক আগে থেকেই মুশফিকের সঙ্গে তার পরিচয় বলে জানান নুর বক্স। তিনি বলেন, ‘আমরা একে অপরকে চিনি অনেক বছর আগে থেকেই। ক্রিকেটাররা আমাকে সব সময়ই গ্যালারিতে দেখেন এবং তারা আমাকে চাচা বলে ডাকেন। টিকিট নেয়ার জন্য আমি তাদের হোটেলের সামনে যাই।’

নুর বক্স বিশ্বাস করেন, টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশ ভালো করবে। যদিও তিনি যখন এ কথাগুলো বলছিলেন, তারপর ব্যাটসম্যানরা একের পর এক উইকেট হারিয়ে ১৫০ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ।

এসএইচ-১৯/১৪/১৯ (স্পোর্টস ডেস্ক)