বঙ্গবন্ধু বিপিএল কার? রাজশাহী না খুলনার

গত ১১ ডিসেম্বর যাত্রা শুরু হয়েছিল এবারের বঙ্গবন্ধু বিপিএলের। দীর্ঘ ৩৮ দিনের পথ হেঁটে আজ তার পরিসমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে। শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় টুর্নামেন্টের শেষ ম্যাচ অর্থাৎ ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে খুলনা টাইগার্স ও রাজশাহী রয়্যালস।

তার আগে কাল দুই ফাইনালিস্ট দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ও আন্দ্রে রাসেল মিলে করলেন ট্রফি উন্মোচন। সাধারণত কোনো টুর্নামেন্টের শুরুতেই ট্রফি উন্মোচন করা হয়। টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়া দলগুলোর অধিনায়কদের নিয়ে একটা বিশেষ পর্বে ট্রফি উন্মোচনের কাজটা সারা হয়। কিন্তু এবার তেমনটা হয়নি।

টুর্নামেন্টের শুরুতে অংশগ্রহণকারী ৭ দলের অধিনায়ককে নিয়ে বিশেষ পর্বটা করা হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু সেই অনুষ্ঠানে ট্রফির উপস্থিতি ছিল না। ট্রফি উন্মোচনের ব্যাপারে বিসিবি জানিয়েছিল বিশেষ পরিকল্পনার কথা। সেই বিশেষ পরিকল্পনাটা হলো, ফাইনালের দুই দলের অধিনায়ককে দিয়ে ট্রফির ঘোমটা খোলা।

সেই পরিকল্পনা অনুযায়ীই কাল সন্ধ্যায় মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে খুলনার অধিনায়ক মুশফিক ও রাজশাহীর অধিনায়ক আন্দ্রে রাসেল হাসিমুখে ট্রফির গায়ের লাল-ঘোমটা খুললেন। পর্দা তুলতেই হেসে উঠল সোনা রঙা চকচকে ট্রফিটি। যে ট্রফিটিতে বিশেষত্ব অনেক।

এবারের বিপিল ট্রফিটা আনা হয়েছে ইংল্যান্ড থেকে। ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) পরামর্শে বিসিবি ট্রফিটা তৈরির দায়িত্ব দিয়েছিল সেখানকার ‘ইংকারম্যান’ কোম্পানিকে। যারা ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ট্রফি তৈরি করে থাকে। সুদূর ইংল্যান্ড থেকে আনা ট্রফিটি নকশার দিক দিয়ে কিছুটা ব্যতিক্রম। গায়ে সোনালি আভাসটা থাকলেও নকশায় সবচেয়ে বড় পরিবর্তন, ট্রফির নিচের কালো অংশটিতে মুজিব শতবর্ষের লোগো ছেপে দেওয়া হয়েছে।

বিশেষ নকশার সমন্বয়ে বিশেষভাবে তৈরি, স্বাভাবিকভাবেই ট্রফিটি তৈরিতে খরচ পড়েছে অনেকটা বেশি। ভ্যাট-ট্যাক্স ও আনার খরচ সহ ট্রফি তৈরির পেছনে মোট ব্যয় ২০ লাখ টাকা! বিসিবি সূত্রই খরচের অঙ্কের কথাটা জানিয়েছে।

যাই হোক, কাল ফাইনালের দুই দলের অধিনায়ক মুখে চওড়া হাসি নিয়ে ট্রফির উপর থেকে পর্দা সরিয়েছেন। এরপর ট্রফি নিয়ে মাঠের সবুজ ঘাসের উপর দাঁড়িয়ে মুশফিক ও আন্দ্রে রাসেল ট্রফিটি হাতে নিয়ে ছবির জন্য পোজ দেন। তখন তাদের দুজনের মুখেই ছিল প্রানখেলা চওড়া হাসি।

ট্রফির সোনালি ছটার আভায় তাদের সেই হাসি আরও বেশি চকচক করছিল। কিন্তু নিয়তির কি নির্মমতা, আজ চূড়ান্ত দিনে হাসি থাকবে তাদের যেকোনো মুখে। অন্যজনের হাসি উবে যাবে। হাসির পরিবর্তে মুখখানা গ্রাস করবে হতাশা-বিষাদের ঘনঘনা।

চূড়ান্ত হাসিটা কে হাসবেন, মুশফিক নাকি আন্দ্রে রাসেল? শিরোপা জয়ের উদ্যাম নৃত্যে মাতবে খলনা নাকি রাজশাহী? এসব প্রশ্নেরই উত্তর মিলবে আজ রাতে। তার আগে দুই দলই আশাবাদী। মুশফিকও খুলনাকে শিরোপা জেতানোর স্বপ্নে বিভোর। ক্যারিবীয় দানব আন্দ্রে রাসেলও প্রচণ্ড আশাবাদী রাজশাহীকে শিরোপার আনন্দে ভাসাতে।

রাসেল নিজের এই আশার কথাটা কাল ট্রফি উন্মোচনের পরই আঁকিয়ে গেছেন। বলেছেন, ‘শিরোপা তো সবাই জিততে চায়। আমাদের ভাবনাটাও এর বাইরে নয়। আশা করি শিরোপা আমরাই জিতব।’

খুলনার অধিনায়ক মুশফিক অবশ্য ট্রফি উন্মোচনে পর কোনো কথাই বলেননি। তিনি বরং কৌশলে গণমাধ্যম কর্মীদের এড়িয়ে গেছেন। তবে খুলনার কোচ জেমস ফস্টার আশার ছবিটা আঁকিয়েছেন এভাবে, ‘আমরা খুবই আশাবাদী এবং আত্মবিশ্বাসী। নিজেদের সর্বশেষ ৪ ম্যাচেই আমরা জিতেছি। যে ম্যাচগুলোর বেশির ভাগই ছিল নকআউটপর্বের মতো! আমরা দারুণ ছন্দে আছি। এখন নির্দিষ্ট দিনে ছন্দটা ধরে রাখতে পারলেই হয়।’

শুধু শেষ ৪ ম্যাচ নয়, পুরো টুর্নামেন্টেই দারুণ ছন্দে ছিল খুলনা এবং রাজশাহী। গ্রুপপর্ব শেষে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে ছিল এই দুই দলই। শীর্ষে থাকার সেই লড়াইটাও ছিল হাড্ডাহাড্ডি। খুলনা, রাজশাহী-দুই দলেরই পয়েন্ট ছিল সমান ১৬ করে। খুলনা শীর্ষে থাকে রানরেটে এগিয়ে থাকায়।

আজকের ফাইনালের আগে এবারের টুর্নামেন্টে মোট ৩ বার একে অন্যের মুখোমুখি হয়েছে খুলনা-রাজশাহী। দুবার গ্রুপপর্বে। একবার কোয়ালিফায়ারে। ৩ বারে মধ্যে দুবার জয়ী খুলনা। গ্রুপপর্বে প্রথম সাক্ষাতের পর খুলনা জিতেছে কোয়ালিফায়ারে। রাজশাহীর জয়টা গ্রুপপর্বের দ্বিতীয় সাক্ষাতে।

এসএইচ-০২/১৭/২০ (স্পোর্টস ডেস্ক)