ক্রিকেটার শাহিনের ভাগ্য বদলে দেয় ২০ টাকার ফরম

যুব বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ট্রফি জেতার পর মূল একাদশে থেকে না খেলতে পারার দুঃখ নিমিষেই ভুলে গেছে ‘কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস’ খ্যাত বোলার মোহাম্মদ শাহিন আলম। কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের যমুনা পাইক পাড়া গ্রামে তার নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় বসে এমন অনুভুতির কথা জানালো যুব বিশ্বকাপ জয়ী দলের এ খেলোয়াড়।

মোহাম্মদ শাহিন আলমের বাবা শাহাদত আলী এবং মা শাতিনা বেগম তার ছেলেকে নিয়ে গর্ব করে বলেন, আমরা দরিদ্র হবার দরুন ছেলেকে কোনও রকম সহায়তা দিতে পারি নাই। ও নিজের চেষ্টায় এতোদুর এসেছে। দোয়া করি আগামীতে আরো বহুদুর যেতে পারবে।

তিন ভাই বোনের মধ্যে মোহাম্মদ শাহিন আলম সবার ছোট। বড় দু’ বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। সংসারে এখন বাবা-মা আর সে। বাবা শাহাদত আলী আগে অন্যের জমিতে কৃষি কাজে মজুরি দিয়ে যা পেতো তাই দিয়ে সংসার চলাতো। এখন সে বয়সের ভারে নুইয়ে পড়েছে। আর দিন মজুরি দিতে পারে না। তাদের এক টুকরো আবাদী জমিও নাই। বাড়ির ভিটা আছে মাত্র ২ শতক। সেখানেই একটি রান্না ঘর আর দু’ দো চালা দু’টি টিনের ঘর রয়েছে।

দারিদ্রতা মোহাম্মদ শাহিন আলমের প্রতিভাকে দমিয়ে রাখতে রাখতে পারেনি। ২০ টাকার একটি ফরম তার ভাগ্য ফিরিয়ে দিয়েছে। ২০১৬ সালে সে এক বন্ধুকে সাথে নিয়ে কুড়িগ্রাম স্টেডিয়াম এসে ২০ টাকা দিয়ে বিকেএসপির একটি ফরম কিনে নিয়ে জমা দেয়। তার দুর্দান্ত বোলিং দেখার পর বিকেএসপি তাকে দিনাজপুরে ডেকে নেয়। এরপর তাকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। সে অনূর্ধ্ব-১৬, অনূর্ধ্ব-১৭, অনুর্ধ্ব-১৮ এবং অনুর্ধ্ব-১৯ এ ক্রিকেট খেলে সবার মন কেড়ে নেয়।

ডাক পড়ে যুব বিশ্বকাপ ক্রিকেটের মূল দলে। ঘোষিত ১৫ জনের দলে সেও একজন। কিন্তু দুর্ভাগ্য মুল একাদশে সে খেলতে পারেনি। সাইড বেঞ্চে বসে থেকে সতীর্থদের উৎসাহ যুগিয়েছিল। তারপরও একাদশে খেলতে না পারার দরুন তার মনের ভিতর জন্মেছিল দুঃখ। কিন্তু যখন ভারতকে হারিয়ে বাংলাদেশ যুব বিশ্বকাপের ট্রফি ছিনিয়ে নেয়; তখন সে ওই দুঃখ ভুলে গিয়ে আনন্দের সাগরে গা ভাসিয়ে দেয়।

উল্লেখ্য, মোহাম্মদ শাহিন আলম একজন পেস বোলার। তার সাফল্যের ঝুড়িতে আছে ৩৭টি উইকেট। এর মধ্যে ইংল্যান্ডের মাটিতে চার ম্যাচে ৯ উইকেট, শ্রীলঙ্কায় চার ম্যাচে ১৮ উইকেট, নিজ দেশে শ্রীলঙ্কার সাথে টেস্ট ম্যাচের এক ইনিংসে ৭ উইকেট এবং একই দেশের সাথে ওয়ান ডে ম্যাচে ৩ উইকেট লুফে নেন।

মোহাম্মদ শাহিন আলম এখন নিজ বাড়িতে ছুটি কাটাচ্ছেন। পাড়া প্রতিবেশী তাকে কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস নামে ডাকতে শুরু করেছে।

এসএইচ-১৬/১৬/২০ (স্পোর্টস ডেস্ক)