চলে গেলেন সেরা ফুটবলার ম্যারাডোনা : রেখে গেলেন যত রেকর্ড

সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার ডিয়েগো ম্যারাডোনা চিরকালের মতো বিদায় নিলেন পৃথিবী থেকে। তাঁর জীবন ছিল ফুটবল মাঠের মতোই বর্ণিল আর বিচিত্র। খেলার মাঠে এবং খেলার মাঠের বাইরে—সবখানেই তিনি ছিলেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। পায়ের জাদুতে পৃথিবীকে বুঁদ করার আগে তাঁর জীবন ছিল সংগ্রামের। আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপ জিতেছেন। হৃদয় জিতেছেন তাবৎ পৃথিবীর মানুষের।

আর্জেন্টিনার হয়ে ৯১ ম্যাচে খেলেছেন ম্যারাডোনা। গোল করেছেন ৩৪টি।

দেশের হয়ে ৪টি বিশ্বকাপ খেলেছেন ম্যারাডোনা।

স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনায় যোগ দেওয়ার আগে আর্জেন্টাইন ফুটবল ক্লাব বোকা জুনিয়রসকে ১৯৮২ সালে লিগ চ্যাম্পিয়ন হতে ভূমিকা রাখেন ম্যারাডোনা। ১৯৮৪ সালে যোগ দেন নাপোলিতে। ইতালীয় ক্লাবটি এখন পর্যন্ত কেবল দুটি সিরি আ জিতেছে। ওই দুই শিরোপা এসেছে ম্যারাডোনার হাত ধরে।

বিশ্বকাপে দলনেতা হিসেবে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছেন ম্যারাডোনা। তিনি আর্জেন্টিনাকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ১৬ বার। আর সব মিলিয়ে বিশ্বকাপে ২১ ম্যাচ খেলেছেন তিনি।

১৯৭৯ সালে জাপানে অনুষ্ঠিত যুব বিশ্বকাপ জেতে আর্জেন্টিনা। ম্যারাডোনা সে দলে ছিলেন।

এক বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ফাউলের শিকার হয়েছেন ম্যারাডোনা। মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত ১৯৮৬ বিশ্বকাপে ৫৩ বার ফাউলের শিকার হন তিনি।

বিশ্বকাপে এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি ফাউলের শিকারও তিনি। ১৯৮২ সালের বিশ্বকাপে ইতালির খেলোয়াড়েরা তাঁকে ২৩ বার ফাউল করেন।

১৯৮৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হাত দিয়ে গোল করেছিলেন দিয়েগো। সে বিষয়ে পরবর্তী সময়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছিলেন, ‘ওই গোলের কিছুটা করেছিল ঈশ্বরের হাত, কিছুটা ম্যারাডোনার মাথা।’

এক আর্জেন্টাইন টিভি চ্যানেলে ২০০৫ সালে টক শোর উপস্থাপনা শুরু করেন ম্যারাডোনা। প্রতিদ্বন্দ্বিতা সত্ত্বেও প্রথম পর্বেই অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ব্রাজিলীয় কিংবদন্তি পেলেকে।

১০ নম্বর জার্সি যেন আর কারও শরীরে না চড়ে, ম্যারাডোনার সম্মানে ফিফার কাছে সে আবদার রেখেছিল আর্জেন্টাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন। সে আবদার অবশ্য রাখা হয়নি।

ম্যারাডোনার বাহুতে চে গুয়েভারার ট্যাটু আঁকা ছিল। আর বাঁ পায়ে ছিল ফিদেল কাস্ত্রোর ছবিওয়ালা ট্যাটু।

১৯৯০ সালে আর্জেন্টিনা দলের তৎকালীন ম্যানেজার কার্লোস বিলার্দোকে বলা হয়েছিল, তাঁর পছন্দের একাদশ গঠন করতে। তিনি বলেছিলেন, ‘ম্যারাডোনা এবং আরও ১০ জন।’

আর্জেন্টিনার হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতাদের তালিকায় ম্যারাডোনা পঞ্চম। লিওনেল মেসি, গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা, সের্হিও আগুয়েরো এবং হারনান ক্রেসপোর পরেই তাঁর অবস্থান।

ফুটবলের ইতিহাসে কেবল ম্যারাডোনাই দুবার ট্রান্সফার ফির রেকর্ড ভেঙেছেন।

ফিফা অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ এবং মূল বিশ্বকাপে গোল্ডেন বল কেবল দুই খেলোয়াড় পেয়েছেন। একজন ম্যারাডোনা, আরেকজন লিওনেল মেসি।

আর্জেন্টিনার কিংবদন্তি ফুটবলার ডিয়েগো ম্যারাডোনা বুধবার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম খবরটি নিশ্চিত করেছে। এর আগে বেশ কয়েক দিন অসুস্থ ছিলেন তিনি।

তিগ্রে-তে নিজ বাসায় মারা যান ম্যারাডোনা। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬০ বছর। গত মাসে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছিলেন ম্যারাডোনা। বুয়েনস এইরেসের হাসপাতালে তাঁর মস্তিষ্কে জরুরি অস্ত্রোপচার করা হয়। মস্তিষ্কে জমাট বেঁধে থাকা রক্ত (ক্লট) অপসারণ করা হয়েছিল।

তখন মাদকাসক্তি নিয়ে ভীষণ সমস্যায় ভুগেছেন ম্যারাডোনা। তাঁকে পুনর্বাসনের জন্য তাঁকে নেওয়া হয়েছিল তিগ্রে-র একটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে।

আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম ‘টিওয়াইসি স্পোর্টস’ জানিয়েছে, বুধবার স্থানীয় সময় বিকেলে হার্ট অ্যাটাকের শিকার হন। এই অসুস্থতা থেকে আর বেঁচে ফিরতে পারেননি কিংবদন্তি। এ ছাড়া সংবাদমাধ্যম ‘ক্লারিন’ও নিশ্চিত করেছে ম্যারাডোনার মৃত্যুর খবর।

১৯৮৬ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে প্রায় একাই শিরোপা জেতানো ছাড়াও ইতালিয়ান ক্লাব নাপোলির হয়ে স্মরণীয় মৌসুম উপহার দিয়েছেন ম্যারাডোনা। নাপোলিকে দুবার সিরি ‘আ’ ও উয়েফা কাপ জিতিয়েছেন ম্যারাডোনা।

আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের একজন। কে সর্বকালের সেরা—এই প্রশ্নে পেলে ও ম্যারাডোনা নিয়ে বিভক্ত ফুটবল বিশ্ব।

আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ম্যারাডোনার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে টুইট করেছে, ‘আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ও সভাপতি ক্লদিও তাপিয়া আমাদের কিংবদন্তি ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছেন। আপনি সব সময় আমাদের হৃদয়ে থাকবেন।’

গত মাসে ম্যারাডোনার মস্তিস্কে অস্ত্রোপচার করা হয়। তখন তাঁর আইনজীবি জানিয়েছিলেন, মদে আসক্তির চিকিৎসা করাতে হবে তাঁর। এরপর চিকিৎসা চললেও সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন কিংবদন্তি এ ফুটবলার। মৃত্যুর আগে তিনি আর্জেন্টিনার ক্লাব জিমনাসিয়ার কোচ ছিলেন ম্যারাডোনা।

আর্জেন্টিনোস জুনিয়রের হয়ে ১৬ বছর বয়সে পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু করেন তিনি। জাদুকরি বাঁ পায়ে তিনি মাতিয়েছেন বার্সেলোনা, নাপোলি, সেভিয়া ও নিউওয়েলস ওল্ড বয়েজ ক্লাব। রেসিং, জিমনাশিয়া ছাড়াও আর্জেন্টিনা কোচের দায়িত্বে ছিলেন ম্যারাডোনা।

তবে ম্যারাডোনা অমর হয়ে আছেন আর্জেন্টিনার জার্সিতে। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে তাঁর নেতৃত্বে দ্বিতীয় বিশ্বকাপের দেখা পায় আর্জেন্টিনা। সেই বিশ্বকাপের পরই প্রতিষ্ঠিত হয়ে ম্যারাডোনার অমরত্ব—ফুটবল মাঠে পা রাখা সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়দের একজন।

এসএইচ-০১/২৬/২০ (স্পোর্টস ডেস্ক)